গানে গানে ভালোবাসার জোছনায় ভরিয়ে দিতে 'বাংলাদেশ আইডল' নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করেছিল সঙ্গীত আসর 'গানে গানে জোছনা'।
Published : 20 Jan 2019, 08:01 PM
স্থানীয় সময় ১২ জানুয়ারি ২০১৯ সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটার, ব্যাংকস টাউনে এই সঙ্গীত সন্ধ্যা আয়োজন করেন 'বাংলাদেশি আইডল' এর স্বত্বাধিকারী শিল্পী জুটি আতিক হেলাল এবং মিতা আতিক।
পুরো অনুষ্ঠান আয়োজনে ছিলো ভিন্নতা—যা দর্শক শ্রোতাদের মন কাড়ে !
'কী বা আছে বলো দেবার মতো
সংকোচে তাই আমি অবনত।
আছে শুধু মোর ভালবাসা
তাই দিয়ে যেতে চাই উজার করে'—এ আমার কথা নয়। বিখ্যাত হারজিৎ সিনেমার জনপ্রিয় এক গান।
প্রথমেই আলো-আঁধারি আলোকসজ্জায় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে শিল্পীরা ফিউশন মিউজিকের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। শ্রোতাদের মগ্ন চৈতন্যে আঁচড় কাটে উপস্থাপিকা আবিদা আসোয়াদের আগমন । মুহূর্মুহূ করতালিতে উচ্ছ্বসিত শ্রোতাদের হর্ষধ্বনি উৎসবের আমেজ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।
তবে, আয়োজক এবং শিল্পীজুটির মূল উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় শিল্পীদের বিশেষ করে বাদ্যযন্ত্র শিল্পীদের ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা।
বাংলাদেশ থেকে কিবোর্ড বাজাতে এসেছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম কিবোর্ডিস্ট রাজীব আহমেদ। আয়োজকদের মতে, একজন শিল্পীর কণ্ঠ যতই মধুর হোক বা একজন গীতিকার যতই ছন্দময় লিখুক না কেন, যন্ত্রে সুরের মায়া না থাকলে সৃষ্টি স্বার্থক হয় না। সকল শিল্পী এবং দর্শক শ্রোতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হয় ‘গানে গানে জোছনা’। অনুষ্ঠান শুরু হয় হেলাল ও মিতা আতিকের দ্বৈত কণ্ঠে 'ও আমার দেশের মাটি' গানটির মাধ্যমে। এরপর একে একে সুর জাগে 'আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন', 'সুরের ভুবনে আমি আজও পথচারী', 'দেখেছি ও চোখে', 'তারে এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না', 'আমি অবুঝের মতো একি করেছি', 'আমরা অমর সঙ্গী', 'আমি কি তেমনি আছি নাকি বদলে গেছি', 'আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়', 'আমি তোমার মনের ভিতর একবার ঘুরে আসতে চাই', 'এনে দে রেশমী চুড়ি', 'এই রুপালী চাঁদ', 'চলে গেলে সবই ভুলে যে', 'আসি আসি বলে তুমি', 'তুমকো দেখা হ্যায়া জিন্দেগি', 'লাগজা গালে'সহ অনেক গানে।
আতিক হেলাল ও মিতা আতিক দ্বৈত ছাড়াও এককভাবে পরিবেশন করেন জনপ্রিয় অনেক গান। তাদের মনমাতানো সঙ্গীত দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। 'এনে দে রেশমী চুড়ি, নইলে যাবো বাপের বাড়ি'—গানটি গাওয়ার সময় কণ্ঠশিল্পী মিতা আনন্দঘন আবেশে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন কোন এক মুহূর্তে। এসময় আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন শ্রোতা দর্শক । করতালি ও শিষ বাজিয়ে শ্রোতাদের কেউ কেউ উসকে দিচ্ছিলেন জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করার উপলব্ধিকে। দেশাত্মবোধক, আধুনিক, ফোক, গজল ও হিন্দিসহ প্রায় ৩০টিরও বেশি গান পরিবেশন করে দর্শক-শ্রোতাদের মন জয় করেন তারা । পাশাপাশি শিল্পী জুটি তাদের মৌলিক গানও পরিবেশন করেন, যার সুরকার বাংলাদেশের বরেণ্য সঙ্গীত পরিচালক প্রয়াত আলী আকবর রুপু।
অনুষ্ঠানে এই প্রজন্মের ক্ষুদে বেজ গিটারিস্ট দিপ্র বাংলাদেশে আশির দশকে আতিক হেলালের ব্যান্ড 'উইন্ডস' এর একটি জনপ্রিয় গান 'চলে গেলে' ও আজম খানের গাওয়া 'আসি আসি বলে' এর সাথে বেজ গিটার বাজিয়ে শ্রোতাদের তাক লাগিয়ে দেয়।
বাংলা সঙ্গীতাঙ্গনে আশি-নব্বই দশককে বলা হয় স্বর্ণালি যুগ । সেই সময়ে অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে উইন্ডস্ এর জন্ম হয়েছিল । বেশ ক'টি মৌলিক গানের অ্যালবাম, কনসার্ট ও রেডিও-টিভি'তে শো এর মাধ্যমে উইন্ডস্ এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে । যা তাদেরকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায় । উইন্ডস্ এর ব্যান্ড লাইনে ছিলেন আতিক হেলাল (ভোকাল), প্রয়াত আলী আকবর রুপু (কী বোর্ড), রিচার্ড কিশোর (বেজ গিটার), মাকসুমুল হুদা বাড্ডু (গিটার), ফারুক ইকবাল নীরো (ড্রাম)।
উইন্ডস্ এর উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হলো সারগাম থেকে প্রকাশিত ক্যাসেট—"ও মনা”, “চলে গেলে” এবং "দূরে কোথাও”। সেসময় 'সাঁওতালী মেঠো পথে'সহ বেশ কিছু গান শ্রোতা নন্দিত হয়।।
১৯৯৩ সালে আতিক হেলাল অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী হবার পর থেমে যায় উইন্ডস্ এর পথ চলা। কিন্তু আতিক হেলাল থেমে থাকেননি। প্রবাসের হাজারও ব্যস্ততার মাঝেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। একজন সফল গীতিকার এবং সুরকার হিসেবে শুধু তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠিত হননি বরং, তার সহযোগিতায় সিডনির বেশ কয়েকজন শিল্পীর গানের সিডি প্রকাশ হয়।
শৈশবেই মিতা আতিকের সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয়েছিল নিলীমা দাস, সুধীন দাস, মাহমুদুন্নবী এবং খালিদ হোসেনের কাছে। গজল শিল্পী পরিমল বিশ্বাস এবং আমানুল্লাহ হারুনের কাছে গজল তালিম নিয়েছিলেন। পার্থ বড়ুয়া এবং বাপ্পা মজুমদারের আয়োজনে “নিয়তি” এবং “দুঃখ নামের নদী” নামে বাংলাদেশে মিতার দুটি গানের সিডি প্রকাশিত হয় । ২০১৬ তে “মন দরজা” নামে দশটি গানের আর একটি সিডি প্রকাশিত হয় বিডি রেকর্ড থেকে।
মা ছিলেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয় টিভি নাটক 'সংশপ্তক' এর "রানু" চরিত্রাভিনেত্রী, যার প্রকৃত নাম রেহেনা। তিনি এক সময় "ঢাকা আরণ্যক নাট্যদল" এর অন্যতম সদস্য হয়ে মঞ্চাভিনয় করতেন।
বাংলা চলচ্চিত্র 'হারজিৎ' এর কাহিনী ও সংলাপ লিখেছেন মিতার বাবা মোহাম্মদ আলী তারিক । তিনি এই সিনেমার সবগুলো গান লিখেছেন। এর অন্যতম একটি গান হচ্ছে 'যদি আমাকে জানতে সাধ হয় বাংলার মুখ তুমি দেখে নিও', গানটি গেয়েছেন আরেক কিংবদন্তী শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। তার লেখা অন্যতম আরেকটি গান হচ্ছে "সুরের ভুবনে আমি আজো পথচারী" সুরকার সত্য সাহা ও কণ্ঠশিল্পী ছিলেন মাহমুদুন্নবী।
অস্ট্রেলিয়ার পার্থ, ডারউইন, ব্রিসবেন, মেলবোর্ন, ক্যানবেরায় দর্শক হৃদয় জয় করেন অনবদ্য সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে এই শিল্পী দম্পতি।
'বাংলাদেশি আইডল' এর আয়োজনে ইতোমধ্যে সিডনিতে অসংখ্য সফল অনুষ্ঠান দেখতে পেয়েছে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি । বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিল্পীরা এই সংগঠনের ডাকে সিডনিতে অনুষ্ঠান করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন।
আতিক হেলাল তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, "বাংলাদেশি আইডলের আয়োজনে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে মনোমুগ্ধকর সুন্দর এই অনুষ্ঠান উপহার দিতে পেরে তৃপ্তি অনুভব করছি । আগামীদিনেও যদি সকলের সহযোগিতা পাই এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চেষ্টা করব।"
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |