চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অসাধারণ চিত্রকর্ম মোনালিসার কথা কে না শুনেছেন! যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম তখন থেকেই রহস্যময় মোনালিসার ছবি যেন আমায় পেছন থেকে ডাকত। ভাবতাম কোনদিন কি দেখা হবে তার সঙ্গে!
Published : 25 Sep 2018, 03:26 PM
মানুষ মন থেকে কোনো কিছু চাইলে আর সেটা পাবার জন্য পরিশ্রম করলে অসম্ভব বলে কিছু নেই। হ্যাঁ, সৌভাগ্যক্রমে দেখা হয়েছে আমাদের। তাই প্রথমবারের মতো ইউরোপে যাওয়ার পর প্যারিসে যেতে দেরি করিনি, বেশি দেরি করিনি মোনালিসার সঙ্গে দেখা করতে। একসঙ্গে ছবি তুলতেও সময় নেইনি। ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ বলে কথা।
ইউরোপের একেক দেশের সৌন্দর্য একেক রকম। তবে প্রতিটা দেশই অসাধারণ সুন্দর। ইউরোপে খালি ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে। আপনি ইউরোপে বিমানে, ট্রেনে কিংবা বাসে করে বেড়াতে পারবেন। তবে আমি বেশিরভাগ সময় বাসে ভ্রমণ করতাম। কারণ বাসে যাতায়াত করলে আপনি চারপাশের পরিবেশ দেখে দেখে যেতে পারবেন। দেশটাকেও খুব কাছ থেকে দেখতে পারবেন। যদিও বাসে সময় একটু বেশি লাগে, কিন্তু বেড়ানোর উদ্দেশ্যে বের হলে এটা কোনো কষ্টই না।
প্যারিসের বুক দিয়ে বয়ে চলা সেইন নদীতে জাহাজে করে ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে। আর যদি ভ্রমণ করতে করতে স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। পৃথিবীর বিখ্যাত আইফেল টাওয়ারের কথা কে না জানেন! প্যারিস আর আইফেল টাওয়ার একসঙ্গে গাঁথা। একটিকে বিচ্ছিন্ন করলে আরেকটি শ্রীহীন দেখাবে। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ৩২৪ মিটার উঁচু আইফেল টাওয়ারে টিকিট কেটে উপরে উঠতে পারবেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল উপরে উঠে প্যারিস দেখার। সুউচ্চ আইফেল টাওয়ার যেন আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত আসলে যখন আইফেল টাওয়ারের লাইট জ্বলে উঠে তখন তার সৌন্দর্য লিখে প্রকাশ করা যাবে না।
মোনালিসার ছবি মনে হতে পারে অনেক বড় আকৃতির, কিন্তু বাস্তবে অনেক ছোট আকারের (২১ আর ৩০ ইঞ্চি)। এই বিখ্যাত চিত্রকর্ম দেখতে গেলে আপনাকে অনেক মানুষের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে দেখতে হবে। ছবির চতুর্দিকে নিরাপত্তার খাতিরে রীতিমতো বেড়া দেওয়া হয়েছে। সেটার বাইরে থেকে দেখতে হয়। আপনি যদি পুরো ল্যুভর জাদুঘর একবারে ঘুরতে যান তাহলে আমি নিশ্চিত আপনি ঘুরতে ঘুরতে দুর্বল হয়ে যাবেন। এত বিশাল জাদুঘর, এত সংগ্রহ, ভালোভাবে সবকিছু দেখতে গেলে বহুদিন লেগে যাবে।
প্যারিসে ভ্রমণ করলে হাজার হাজার বছরের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যাবে। প্যারিসে যাওয়া মানে টাইম মেশিনে পুরনো দিনে ফিরে যাওয়া। এক শৈল্পিক কাজের নিদর্শন নটরডেম ক্যাথেড্রেল বা উপাসনালয় (১৩০ মিটার লম্বা ও ৬৯ মিটার উঁচু) । প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো এই ক্যাথেড্রেল। এটা বানাতেই প্রায় ২০০ বছর লেগে যায়। এ থেকেই বুঝা যায় কত শত হাজার বছরের ইতিহাস আপনি প্যারিস ভ্রমণ করলেই দেখতে পারবেন। তাছাড়া ‘আর্ক দে ট্র্যামফে’ হচ্ছে বিখ্যাত বীরযোদ্ধা নেপোলিয়নের যুদ্ধ বিজয়ের স্মৃতিস্তম্ভ। একটু নিখুঁতভাবে তাকালেই দেখা যাবে অসংখ্য যোদ্ধার ছবি সম্বলিত এই অসাধারণ স্থাপনা।
ফরাসিকে বলা হয় ‘ভালোবাসার ভাষা’, আবার ফ্রান্সকে বলা হয় ‘রোমান্টিক শহর’। তবে ফ্রান্সে গিয়েই বুঝেছি ভালোবাসার শহর কেন বলা হয়। প্যারিসের সেইন নদীর ব্রিজে ‘লাভ লক’ এর অভাব নেই। ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে প্রেমিক-প্রেমিকেরা নিজেদের নাম লিখে ব্রিজে তালা মেরে ঝুলিয়ে রাখে। চাইলে আপনিও লিখে আসতে পারেন। তবে ছবি নিতে ভুলবেন না। বলা তো যায় না পরে কাজে লাগতে পারে।
প্যারিসে আমি দুই দিন ছিলাম। এই দুই দিন বাংলাদেশের খাবারের অনেক অভাব বোধ করেছি। মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে খেতে যখন আরো বেশি দেশের খাবারের কথা মনে পড়ছিলো। তখন হঠাৎ রাস্তায় পেয়ে যাই শ্রীলঙ্কার এক দোকান যেখানে পরোটা আর প্রচণ্ড ঝাল দিয়ে রান্না করা মুরগির মাংস বিক্রি হয়। পেট ভরে খেয়ে নিলাম। মনে হচ্ছিলো ঢাকার নীলক্ষেতে খাচ্ছি!
প্রথমবার যখন প্যারিস গিয়েছিলাম তখন মূল শহর থেকে একটু বাইরে এক পুরনো সস্তা হোটেলে উঠেছিলাম। আমার বিছানার উপরে আরো দুইটা বিছানা ছিল। বুঝতেই পারছেন অবস্থা। তবে দূরত্ব যতই হোক, ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে এসব কোনো বিষয় না। যেমন সকালবেলা হোটেল থেকে বের হয়ে ট্রামে করে চলে গিয়েছিলাম আইফেল টাওয়ারের কাছে।
লেখক: পর্যটক ও গবেষক
ইমেইল : [email protected]
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |