বন্ধু, সে এক বিশাল গভীরতার নাম। বন্ধুত্বের সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেক রকম।
Published : 11 Jun 2017, 09:57 AM
আমার কাছে আমার বন্ধুরা আমার নিজের পরিবারের অংশ। যারা আমার জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কোরিয়াতে যখন আসি তখন বেশ কষ্টই হচ্ছিলো যে সবাইকে ছাড়া কীভাবে থাকবো? পরিবারকে তো মিস করবোই, সাথে সবচেয়ে বেশি মিস করবো আমার বন্ধুদের। মনে হচ্ছিল, কী যেন একটা ফেলে যাচ্ছি।
স্কুল জীবনে বন্ধুত্বের গভীরতা বোঝার আগেই সবাই যার যার মতো কলেজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই যে মনের একটা টান, সেটা কিন্তু রয়ে গেছে আজও। তখন আসলে বন্ধু মানেই বন্ধু। খুব গভীরভাবে তখনও ভেবে দেখিনি বন্ধুত্বের গভীরতা। কিন্তু আজ, এতো বছর পর যেন সেই সব স্মৃতি ভাবতেই মনটা ফুড়ফুড়ে হয়ে যায়। ভাল লাগে। মনে হয়, চলে যাই আবার সেই সময়ে। কিন্তু ওইটা কি আর সম্ভব? নাহ, সম্ভব না।
কলেজে সবার সাথে খাপ-খাওয়াতে আমার বেশ কষ্টই হচ্ছিলো। একে তো দেশের খুব নামী কলেজ সাথে আবার নতুন জায়গা। ওই মুহূর্তে চার-পাঁচজনকে কাছে পাওয়া খুব ভাগ্যের ব্যপার ছিল আমার জন্য।
বছর হিসেব করলে অনেক, কিন্তু যেন মনে হয় এইতো সেদিনের কথা। এখনও আমাদের রোজ কথা হয়। দেখা হয় না। সবাই সবার জীবনে ব্যস্ত, তবুও আমরা নিজেদের জন্য সময় বের করে নেই। সেই আগের কথা, এখন কেন এতো ভাল লাগে সেই সব দিনগুলি? কতো মজার মজার গল্প, একসাথে আড্ডা, মান-অভিমান-খুনসুটি সব কিছুর স্মৃতিচারণ কেন এখন এতো মধুর?
সবার কাছেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়ের বন্ধুরাই নাকি অনেক বেশি গুরুত্ব পায়। আমার কাছেও তাই। পুরোটা মুহূর্ত আমরা উপভোগ করেছি। সেই যে ক্লাস শেষ করে টিএসসি’তে যেতাম, সন্ধ্যা না হওয়া পর্যন্ত বাসায় ফেরা হতো না। সেই সব আড্ডা যার নাকি কোনও আগা-মাথা ছিল না।
আর রমযান মাস আসলে তো কথাই নেই, অবশ্যই অবশ্যই একদিন না, ৬-৭ দিন বাইরে ইফতার করতেই হবে। তোদের মনে আছে সবার? আমার কিন্তু সব মনে আছে। হয়তো প্রবাস জীবনে আসার পর থেকে এইসব বেশিই মনে পড়ে। অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ আজও সবকিছু যেন চোখের সামনে দেখতে পাই। আহা! কী দিন ছিল সেগুলো! সত্যিই কি তোদের সব মনে আছে, নাকি শুধু আমি একাই স্মৃতি হাতরিয়ে বেড়াচ্ছি?
সেইসব দিনগুলি যে কতোটা বিশেষ ছিল, তা এখন খুব ভাল বুঝি আমি। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল নিরাপত্তার বিষয়টা। আমরা সবাই সবার পরিবার সম্পর্কে খুব ভাল করে জানতাম। এমনকি আমাদের পরিবারের সবাইও জানতো সবকিছু। যার জন্য কখনও বিপদের সম্মুখীন হতে হয়নি। ভাগ্যবান আমরা।
অনেক অনেক বিপদে পড়েছি জীবনে। প্রতিবারই আমি ওদের আমার পাশে পেয়েছি। আমি কতোখানি ওদের সাপোর্ট দিতে পেরেছি, ওটা শুধু ওরাই বলতে পারবে। কিন্তু আমি খুব ভাল করেই জানি, ওরা কখনই আমাকে ছেড়ে যায়নি। আর ভবিষ্যতেও ছেড়ে যাবে না।
কোরিয়াতে আসার পরও খুব ভালো ভালো মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। সিনিয়র-জুনিয়র সবার সাথেই। এখানে যে খারাপ আছি, তা কিন্তু না। বেশ ভাল আছি। আড্ডা হচ্ছে প্রায় দিনই। এমনকি প্রায় রাতের সেহরিও করা হচ্ছে একসাথে। কিন্তু এখন আমরা অনেক সিনিয়র। তাই আড্ডাটাও এখন তেমনি।
অনেকের কাছেই শুনি, এখনকার বন্ধুত্ব নাকি খুব বেশিদিন থাকে না। কেন থাকে না ওইটা আমি বুঝেই উঠতে পারি না। সত্যিকারের বন্ধু যদি হয়, তাহলে কেন থাকবে না? চাকরিসূত্রে যেখানেই যাওয়া হয়, সেখানেই অনেক নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়। একটা ভাল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও হয়। থাকতে থাকতে তারাও তখন পরিবারের মতই হয়ে যায়। কিন্তু বন্ধু বলতে আমরা সবাই যা বুঝি, ওইটা কিন্তু সবার সাথে হয়ে উঠে না।
আচ্ছা, তোদেরকে কি কখনো বলেছি, তোরা আমার কাছে কতোখানি গুরুত্বপূর্ণ? তোদের কখনোই বলা হয়ে উঠেনি যে, আমি তোদের কতোখানি শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। আজ বলতে চাই। তানিয়া, আন্দালিব, শিপু, টুসি, শোয়েব, অপু তোদের সব্বাইকে অনেক অনেক বেশি শ্রদ্ধা করি, সম্মান দেই আর সত্যিই অনেক বেশি ভালোবাসি। তোরা আমার সাথে সব সময় ছিলি, আছিস আর সব সময়ই থাকবি, ওইটা আমি জানি।
হ্যাঁ, ব্যস্ততার জন্য সব সময় এখন আর কেউ কাউকে সময় দিতে পারি না। সবাই নিজেদের পরিবার, বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত। আগের মতো আড্ডা দেওয়া হয় না। কিন্তু মিস সবাই সবাইকে করি। আর সময় পেলেই সবাই সবার সাথে যোগাযোগ করতে ভুলে যাই না।
নিজের আবেগ প্রকাশে আমি কখনই খুব ভাল ছিলাম না, তাই হয়তো খুব গুছিয়ে সব লিখতে পারলাম না। সবশেষে এটুকুই বলবো, অনেক অনেক ধন্যবাদ তোদের সবাইকে। আমার সব কঠিন সময়ে, সুখের দিনগুলিতে আমার পাশে ছায়ার মতো থাকবার জন্য। অপেক্ষায় রইলাম আবার সেই আমাদের আড্ডার জন্য।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
ইমেইল:[email protected]
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |