খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ক্রিসমাস। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এটি যেন একটি সার্বজনীন উৎসব। যে উৎসবে সামিল হয় সব ধর্মের মানুষ।
Published : 27 Dec 2016, 04:25 PM
সবাই কর্মব্যস্ত জীবন থেকে একটু ছুটি চান। প্রিয় মানুষদের সাথে কাটাতে চান চমৎকার কিছু সময়। রঙিন করে রাখতে চান নিজেদের মুহুর্তগুলো।
নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে পালিত হয় 'থ্যাংকস গিভিং ডে'। এর পরদিন 'ব্ল্যাক ফ্রাই ডে'র কেনাকাটার মধ্য দিয়েই মূলত ক্রিসমাস উৎসবের ছোঁয়া লাগে। বিভিন্ন স্থানে বেজে ওঠে 'হ্যাপি হলি ডে' বাজনা।
ডিসেম্বরের শুরু থেকেই উৎসবের দেশে পরিণত হয় যুক্তরাষ্ট্র। সময় যতই গড়াতে থাকে, মানুষের মনটাও হয়ে ওঠে রঙিন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রিসমাসের ছুটি শুরু হয়ে যায় দিন কয়েক আগে থেকেই। অফিস ছুটি থাকে ২৪ ডিসেম্বর থেকে 'নিউ ইয়ার' পর্যন্ত। দীর্ঘ ছুটিতে সারা আমেরিকায় কেবল উৎসব চলে।
২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে হলেও মূল উৎসবটা আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়ে যায়। সারা মাস জুড়ে পাওয়া উপহার সামগ্রী যেগুলো বাড়িতে 'ক্রিসমাস ট্রি'র পাশে জমা রাখা ছিল, আগের রাতে সবার উপস্থিতিতে সেগুলো খুলে দেখা হয়।
উপহার দেওয়া-নেওয়া ক্রিসমাসের অন্যতম অংশ। বিশেষ করে সান্তা ক্লজের কাছ থেকে উপহার পাওয়ার জন্যে অপেক্ষায় থাকে শিশুরা। লাল পোশাক, ধবধবে সফেদ চুল দাড়ি আর উপহার ভর্তি কাঁধের লাল ঝোলা নিয়ে সান্তা ক্লজের উপস্থিতি মানেই বাড়তি কিছু।
বড়দিন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে এখন উৎসবের ছোঁয়া। নগর থেকে প্রত্যন্ত জনপদ, চারিদিকে আলো আর আলো। তবে বাড়তি কষ্ট করতে হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে। বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় চারিদিকে যখন নিরাপত্তা শঙ্কা, সেখানে এছাড়া আর উপায় কি! তবে নজিরবিহীন এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় স্বস্তিবোধ করছে মানুষ।
উৎসবের পাশাপাশি বড়দিন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ,ব্যবসা-বাণিজ্যের সেরা মৌসুম চলে। পোষাক-আশাক, প্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে বিক্রি বাড়ে 'ক্রিসমাস ট্রি'র। শপিং মলে মূল্যছাড়ের ছড়াছড়ি।
কেবল সরকারি-বেসরকারি অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলোই নয়, প্রায় প্রতিটি বাড়িই এখন আলো ঝলমল করছে। আঙিনায় শোভা পাচ্ছে 'ক্রিসমাস ট্রি'। সন্ধ্যার পরই জলে উঠছে লাল-নীল জোনাকি বাতি। বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলো সাজানো হচ্ছে অপরূপ সাজে।
তবে নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে বড় 'ক্রিসমাস ট্রি' লাগানো হয়েছে ম্যানহাটনের মিড টাউনের রকফেলার সেন্টারে। প্রতি বছরই নভেম্বরের শেষ দিকে কিংবা ডিসেম্বরের শুরুতে সেখানে 'ক্রিসমাস ট্রি' লাগানো হয়।
আর এই আয়োজন চলছে ১৯৩৩ সাল থেকে। এটি এখন কেবল নিউ ইয়র্ক নয়, জাতীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। নানা রঙের হাজারও এলইডি বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে গাছটিকে। রাতে দেখলে মনে হয়- এটি বুঝি আলোর গাছ।
এ বছর নিউ ইয়র্ক মেয়র বিল ডি ব্লাজিও, অভিনেতা অ্যালেক ব্যাডউইন এবং কেইট ম্যাককিননসহ অসংখ্যা সেলব্রেটির উপস্থিতিতে রকফেলার সেন্টারের 'ক্রিসমাস ট্রি'র আলোকসজ্জা উদ্বোধনের জমকালো অনুষ্ঠান হয়। এবারের গাছটির উচ্চতা ৯৪ ফুট। ১৪ টন ওজনের গাছটিকে প্রায় ৫০ হাজার মাল্টিকালার বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের তো বটেই, পৃথিবীর হাজারো মানুষ এই রকফেলার সেন্টারের সামনে আসে গাছটিকে দেখতে। গাছটির পাশে আইস স্কেটিং করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। একই সাথে সেখানকার চারপাশের ভবন ও তার সামনে মনোরম আলোকসজ্জা সবার নজর কাড়ে। রকফেলার সেন্টারের পেছনের দিকটায় জিঙ্গেল বেলের যে চমৎকার একটি ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে।
অনেকে আবার ক্রিসমাসে দেশ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন ছুটি কাটাতে। অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটগুলোও খুব ব্যস্ত। সবাই ছুটছে এক স্টেট থেকে অন্য স্টেটে। ‘মাইনাস’ তাপমাত্রা উপেক্ষা করেও চারিদিকে ব্যস্ততা ও আনন্দের বন্যা। যা সবাইকে নতুন উদ্যোম দেয়, দেয় নতুন প্রেরণা।
লেখক: ইয়োগা আর্টিস্ট,লেখক ও উপস্থাপক।
ইমেইল: [email protected]
আশরাফুন নাহার লিউজার আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |