বিএনপিকে নিয়ে জোট গঠনের পর একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজের বক্তব্য কূটনীতিকদের জানালেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেন।
Published : 18 Oct 2018, 07:25 PM
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের চার দিন পর বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানের লেইক শোর হোটেলে কূটনীতিকদের নিয়ে এই মতবিনিময় সভা হয়।
সভার পর জোট শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে আমরা শুধু বাংলাদেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনার-কূটনৈতিকদের সাথে রুদ্ধদ্বার মতবিনিময় করেছি। অত্যন্ত সফলভাবে এই মতবিনিময় সম্পন্ন হয়েছে।
“আমদের শীর্ষ নেতা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ড. কামাল হোসেন ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের প্রশ্নের জবাবও তিনি দিয়েছেন।”
সভায় থাকা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “আমরা কূটনীতিকদের সাথে মতবিনিময় করেছি, এর বেশি কিছু বলা যাবে না।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনমনীয়তার মধ্যে সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে একজোট হয়েছে বিএনপি, জেএসডি, গণফোরাম ও নাগরিক ঐক্য।
বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য কূটনীতিকদের সরবরাহ করা হয় বলে এতে উপস্থিত এক নেতা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একাদশ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পূর্ব শর্তাবলী, ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির সাথে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয় সম্পর্কিত কূটনীতিকদের কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দেন ড. কামাল।”
তিনি বলেন, বিকালে এক ঘণ্টার এই বৈঠকের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল কূটনীতিকদের স্বাগত জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর কামাল হোসেন বক্তব্য রাখেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, কাতার, মরক্কোসহ ৩০টি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মঈন খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, জেএসডির তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মনটু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনও ছিলেন বৈঠকে।
সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ইতোমধ্যে জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে। সিলেটে ২৩ অক্টোবর জনসভার পর চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেও জনসভা করতে চায় তারা।
সিলেটে জনসভার অনুমতি মেলেনি
আগামী ২৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভার কর্মসূচি ঢাকা থেকে ঘোষিত হলেও তার অনুমতি দেয়নি সিলেট মহানগর পুলিশ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সিলেট প্রতিনিধি জানান, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ রেজিস্ট্রারি মাঠে এই জনসভা করতে অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু সে অনুমতি না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
আলী আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ১৭ অক্টোবর সিলেটের পুলিশ কমিশনারের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে আজ (বৃহস্পতিবার) ফোন করে সমাবেশ না করতে বলা হয়েছে।”
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, “জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের অনুমতি চেয়ে বিএনপি নেতারা আবেদন করেন। কিন্তু জনস্বার্থে পুলিশ তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি।”
এদিকে রব ঢাকায় লেইক শোর হোটেলে সাংবাদিকদের বলেন, “২৩ তারিখে আমাদের যে জনসভা ছিল সিলেটে, আজকে সকাল পর্যন্ত তার অনুমতি ছিল। আমরা জানতে পেরেছি, তা বাতিল করা হয়েছে। আমরা হলের মধ্যে করতে চেয়েছি সেটাও বাতিল করেছে।
“এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশা করি, ২৩ অক্টোবর না হলেও ২৪ অক্টোবর সরকার অনুমতি দেবেন।”
রব বলেন, “সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জনসভা করছেন। আমাদের জনসভা করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের পূর্বে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, গণতান্ত্রিক আচরণ হিসেবে সবার জন্য সমান সুযোগ’ সরকার এই বিষয়টা বজায় রাখার চেষ্টা করবে। সরকার যদি আমাদের জনসভা করার অনুমতি না দেয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তাদের সুনাম নষ্ট হবে।
“আমি আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থাকলেও তার প্রতি অনুরোধ থাকবে, ২৩ অক্টোবর না হোক ২৪ অক্টোবর আমাদেরকে সিলেটে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার ব্যবস্থা নিন।”