জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর অগোচরে ওই মন্ত্রণালয়ের অনেক সিদ্ধান্ত হয়ে যায় দাবি করে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘অপরাধী ও একটি ভৌতিক শক্তি’ বাংলাদেশের সব কিছু চালাচ্ছে।
Published : 20 May 2018, 12:40 AM
শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে জাতীয় কমিটির বিকল্প প্রস্তাবনার ওপর মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বলানি খাতে সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, “মন্ত্রী হলেন একজন আর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আরেকজন। কর্মকর্তা দেখা যাচ্ছে একজনকে কিন্তু পেছন থেকে কাজ করছেন আরেকজন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিদেশ থেকে এসে দেখলেন, বিদ্যুৎ সচিব তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) প্ল্যান্টের অনুমোদন দিয়েছেন। মন্ত্রী বললেন, তিনি এর কিছুই জানতেন না।
“বরগুনায় সুন্দরবনের পাশে পরিবেশ সমীক্ষা না করে চীনা একটি কোম্পানিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলছেন, এটাতো বরিশালে হওয়ার কথা। মনে হচ্ছে, অপরাধী ও একটি ভৌতিক শক্তি বাংলাদেশের সমস্ত কিছু চালাচ্ছে। আর এরকম একটা পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনা ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান (পিএসএমপি)-২০১৬’ নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।”
আনু মুহাম্মদ অভিযোগ করেন, কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা, জনগণের সম্মতি বা সমীক্ষা ছাড়াই সরকার একের পর এক ‘প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ বিধ্বংসী’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
‘অঙ্কের গোজামিল দিয়ে’ বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনা পিএসএম ২০১৬ প্রণয়ন করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “নদী, ঊপকূল, সুন্দরবন, কৃষির বিনাশ না করেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প আছে। কিন্তু সরকার সে পথে না গিয়ে জাইকা ও জাপানের কয়েকটি প্রাইভেট কোম্পানির গোঁজামিলের এ মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
“যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে একজন বাংলাদেশিরও কোনো অংশগ্রহণ নেই, এমনিক এই মহাপরিকল্পনার অধীনে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে কাজগুলো হচ্ছে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী জানেন না পর্যন্ত।”
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ বলেন, “গতকাল বা পরশু পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়’ করা হয়েছে। একদিকে নাম পরিবর্তন, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশকে আরও বিপদগ্রস্ত করার জন্য সমস্ত প্রকল্প হাজির করছে সরকার।
“নামটা পরিবর্তন করা হয়েছে কেন? করা হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে বিক্রি করার জন্য। আন্তর্জতিকভাবে এটাকে দেখিয়ে পয়সা-পাতি পাওয়া যাবে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য আসলে যে যে কাজ করা দরকার তার উল্টো দিকে সরকার হাঁটছে।”
সভায় সরকারের মহাপরিকল্পনার বিপরীতে জাতীয় কমিটির বিকল্প প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
‘পিএসএমপি-২০১৬’ অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ দাবি করে জাতীয় কমিটির পক্ষে প্রকৌশলী মওদুদ রহমান তার উপস্থাপনায় বলেন, পিএসএমপি-২০১৬ তে মাথাপিছু মাত্র ৩০০ কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ ব্যবহারের হারকে ২০৪১ সালের মধ্যে ১৫০০ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
“কিন্তু এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে উপায় বর্ণনা করা হয়েছে তাতে ২০৩১ সাল পর্যন্ত উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রাহক পর্যায়ে যোগান দিতে ইউনিট প্রতি মূল্য বাড়বে ১০.৭ শতাংশ হারে। আবার এর পরবর্তী বছরগুলোতে ৯.৫ শতাংশ হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ।
“২০৪১ সালের মধ্যেই ১৯ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। তবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে স্থান নির্ধারণ প্রক্রিয়া, পানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, কয়লার মান নির্দিষ্ট করণ, দূষণ মনিটিরিং ব্যবস্থা প্রণয়নের মত অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলোর আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।”
মওদুদ বলেন, “পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যানের ত্রুটিগুলো জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে সুলভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথে হাঁটতে এই মহাপরিকল্পনার মৌলিক পরিবর্তন ও সংশোধন প্রয়োজন। নয়ত এই মহাপরিকল্পনার ভুল নিশানায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত পৌঁছে যাবে উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনী ফাঁদের কিনারায়।”
‘রামপাল, রূপপুর এবং জাতীয় কমিটির বিকল্প প্রস্তাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কমিটি ঢাকা মহানগরের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা জুলফিকার আলী।
অন্যদের মধ্যে সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের বজলুর রশিদ ফিরোজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক মোসাহিদা সুলতানা বক্তব্য দেন।