বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতি ‘জনগণের স্বার্থ বিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
Published : 28 Jul 2017, 05:49 PM
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি-বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমিয়ে অর্থবছরের প্রথম ভাগের নতুন মুদ্রানীতি বুধবার ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর একদিন পর শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, “তারা বলছেন যে, মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এবারে ঋণ প্রবাহ গতবারের চাইতে কমানো হয়েছে। এই যে কমিয়ে দেওয়া- এতে কর্মসংস্থান হবে না, বাঁধাগ্রস্থ হবে, বেকার বাড়বে।
“উৎপাদন ব্যয় বাড়লে পরে মুদ্রাস্ফীতি কমে না- এটা একটি ভ্রান্তনীতি। এটা সরকারের প্রেসকিপশন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এই কাজটি করছেন। অর্থ্যাৎ দেশের প্রকৃত অর্থনীতিকে চাঙা করা নয়, বরং সেটাকে আরো তিমিরের দিকে ঠেলে দেয়া- এটাই হচ্ছে মূল কাজ। এবার যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, এটি গণবিরোধী ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী।”
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের এই মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। গত জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও মে পর্যন্ত সময়ে এ খাতে ঋণ বেড়েছে ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ, যা আগের মুদ্রানীতিতে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ ছিল। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
‘লুটেরাদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে’ অভিযোগ করেন বিএনপি সরকারের সময়ে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “বড়লোকদের ও লুটেরাদেরকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আমি একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমরা এক-সময় জানতাম, খেলাপি ঋণ রিসিডিউল করা হত, এখন রিস্ট্রাকচারিং করা হচ্ছে।
“৫০০ কোটি থেকে ১ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে যারা ঋণ নিয়েছেন, তাদের রিস্ট্যাকচারিং করা হয়। অর্থাৎ ক্ষমতার জোরে টাকা নিচ্ছেন, তারা এই রিস্ট্রাকচারিং সুবিধা পাবেন। এই টাকার কী হবে, এই টাকা তো পাঁচার হয়ে যাচ্ছে।”
লন্ডনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সফর নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনার মধ্যে ক্ষমতাসীনদের ‘অশুভ পরিকল্পনা’ দেখছেন বিএনপি নেতা রিজভী।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “লন্ডনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আওয়ামী নেতারা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব প্রচার করায় সরকার কোনো অশুভ পরিকল্পনা আঁটছে কিনা তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে।
“কারণ ওরা (আওয়ামী লীগ নেতারা) যখন কাউকে অভিযোগ করবে, বুঝতে হবে যে তারা কারো বিরুদ্ধে কোনো চক্রান্তমূলক কিছু করছেন। তারা যখন উদ্ভট অভিযোগ করেন তখন বুঝতে হবে তা সুদূরপ্রসারী চক্রান্তেরই অংশ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো গোপন ফন্দি আটার সেটি বহির্প্রকাশ।”
আগামী সাধারণ নির্বাচনে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে উচ্ছেদ করতে আওয়ামী লীগ নেতারা নীলনকশা এঁকে চলেছে মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, “তাই শ্যামলীর গণভবন এখন কাশিমবাজার কুঠি এবং সুধা ভবন এখন জগৎশেঠ ও ঘষেটি বেগমদের ষড়যন্ত্রের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।”
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা গাড়ি পুড়িয়ে ছিল দাবি করে সেই দোষ ‘বিএনপির ওপর চাপানো’র চাপানো হয় অভিযোগ আনেন রিজভী।
‘বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই বলে মন্তব্য করেছেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, “দেশের মানুষ বাস্তবে ভোটারবিহীন সরকারের উন্নয়নের গালভরা বুলির বহির্প্রকাশ এখন চারিদিকে দেখতে পাচ্ছে। সুফল তো নয়, কুফলের দুর্ভোগে মানুষের নাকাল অবস্থা।
“দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীসহ সারাদেশের রাস্তা-ঘাট, সড়ক-মহাসড়ক ও অলিগলি এখন লণ্ডভণ্ড। এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটের হদিস পাওয়া যায় না। কার-জিপ-ট্রাক, বাস-মিনিবাস-সিএনজি, রিকসা রাস্তার ওপর নিয়ে চলে না, নৌযানের মতো পানিতে ভাসে।”
রিজভী বলেন, “মানুষরা প্রশ্ন করছেন… খুব দুঃখের বেদনায় প্রশ্ন করছেন। আমরা বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমেও দেখতে পাচ্ছি যে, এই ইডেন কলেজ, শান্তিনগর, পল্টন, বিজয় নগর, মালিবাগ এই এলাকাগুলো কোনো নদীর তীরে অবস্থিত কিনা- এটি ছাত্রদের প্রশ্ন ও মানুষের প্রশ্ন।
“একথাগুলো রসিকতা হলেও প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের প্রতি মানুষের ধারণার এরকমভাবে ফুটে উঠেছে। কেবল রাজধানীর মানুষই দুভোর্গে নেই, সারা দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো এখন তছনছ হয়ে গেছে।”
এই সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।