সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে গেছে অভিযোগ করে এক এগারোর কুশীলবদের ধরতে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।
Published : 21 Jan 2017, 07:09 PM
শনিবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “যেহেতু বর্তমান সংবিধানে আছে যে, অসাংবিধানিকভাবে কেউ যদি ক্ষমতা দখল করে বা রাষ্ট্রপরিচালনা করে তার সাজা হলো মৃত্যুদণ্ড। যদি সেটাই সংবিধানে থাকে, তাহলে ২০০৭ এ যারা ক্ষমতায় আসলেন। অসাংবিধানিকভাবে তারা দুই বছর দেশকে শাসন করে গেছেন, অর্থনীতি ধ্বংস করে গেছেন, প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে গেছেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে গেছেন। তাদের বিচার...।
“আমি বলতে চাই, যারা অসাংবিধানিকভাবে, বেআইনিভাবে, ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের এত বড় ক্ষতি করে গেছেন, মইনউদ্দিন, ফখরুদ্দীন, আমার বইতে ৭টা নাম দিয়েছি। আমি সুপ্রিম কোর্টের একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ইনকোয়ারি কমিশন অ্যাক্টের অধীনে একটি উচ্চ পর্যায়ের ইনকোয়ারি কমিশন করার দাবি জানাচ্ছি।”
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই কমিশন হবে মন্তব্য করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ বলেন, “যারা এর পেছনে ছিলেন, যারা এর সাথে ছিলেন, যারা এর নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের সকলের শাস্তির ব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষ করবে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ‘জরুরি আইনের সরকারের দুই বছর (২০০৭-০৮)’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব বলেন মওদুদ আহমদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক খন্দকার মোশাররফের এটি নবম গ্রন্থ। আহমেদ পাবলিশিং হাউজের প্রকাশনায় ৩৫৮ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের দাম ধরা হয়েছে ৬০০ টাকা।
গ্রন্থের লেখক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “এক এগারোর সরকার রাষ্ট্রকে কালো অন্ধকারে নেওয়ার একটি ইতিহাস। জনগণের শাসনকে তারা বুটের নিচে দাবিয়ে যে সরকার গঠন করেছিল সেটা ছিল জরুরি আইনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেনা সমর্থিত সরকার, অসাংবিধানিক সরকার ও অস্বাভাবিক সরকার। তারা দেশকে পিছিয়ে দিয়ে গেছেন, মানুষের আশা-আকাঙ্খাকে ধূলিস্মাৎ করে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। আমার বইতে ওই সময়ে অস্বাভাবিক সরকারের চালচিত্র তুলে ধরেছি।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ অভিযোগ করেন, এক এগারো ছিল একটি মহলের বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র করার গভীর ষড়যন্ত্র।
“ফখরুদ্দীন আহমদের নিয়োগটাই ছিলো অসাংবিধানিক। আমাদের দেশের সবচেয়ে বেশি সর্বনাশ করে গেছে ওই দুই বছরের সরকার। সব প্রতিষ্ঠান তারা ধ্বংস করে দিয়েছিল।”
সে সময় নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরে মওদুদ বলেন, “আমাকে যখন চোখ বেঁধে নিয়ে তারা (সেনা কর্মকর্তারা) আমরা পরামর্শ চাইলেন। আমি বললাম, আমাকে সারাদিন এত নির্যাতন করা হল, আমার বিরুদ্ধে কি না বলা হয়েছে। আর এখন রাত্রিবেলা ২টার সময়ে এসেছেন পরামর্শ চাইতে। তারা সিনিয়র অফিসার হবে- বারী-টারীরা আরও যারা আছেন, আমার সঙ্গে আলাপ করতে। তখন আমার চোখ বন্ধ ছিল।
“আমি ওই অবস্থায় বললাম, আপনারা কী করতে চান? তারা বললেন, আমরা আমাদের সেনা নায়ককে দেশের প্রেসিডেন্ট করতে চাই। আমি বললাম, অসম্ভব।
“আমি বললাম কী করে করবেন? তারা বললেন, দুই নেত্রী মাইনাস হয়ে যাবেন, তাদের বাইরে পাঠিয়ে দেব, আর তখন দেশে যে শুন্যতা সৃষ্টি হবে সেখানে আমাদের আর্মির চিফ অব স্টাফ দেশের প্রেসিডেন্ট হবেন। সেজন্য তারা নির্বাচনের দিকে না গিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে মইন উ আহমেদের যে লক্ষ্য, তা বাস্তবায়ন করতে বিরাজনীতিকরণ ও রাজনৈতিক সংস্কারকরণ কাজ শুরু করল।”
বর্তমান সরকারের চারজন মন্ত্রীকেও সে সময় নির্যাতন করা হয়েছিল জানিয়ে মওদুদ বলেন, “আমি নাম বলব না, তিনি নিজে আমাকে বলেছেন, তাকে বুট দিয়ে লাথি মেরে এদিক থেকে ওদিকে নিয়েছে। তিনি এখন মন্ত্রী আছেন। সুতরাং আমরা ভুলি নাই সেই নির্যাতনের কথা।”
প্রধান দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার এবং তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হলেও এক পর্যায়ে ওই সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা হয় বলে দাবি করেন এই বিএনপি নেতা।
“২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেছে, সেটি সমঝোতার নির্বাচন হয়েছে। এই সরকার মঈন-ফখরুদ্দীন সরকারের ধারাবাহিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। সেই সমঝোতায় আজকে মইন উদ্দিন দেশে নাই, বিদেশে আছে।”
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, “২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেটা সেনা সমর্থিত সরকার নয়, সেটা কোনো সরকারের কোনো পর্যায়ে পড়ে না। দ্যাট ওয়াজ অ্যাবসুলেটলি মিলিটারি টেকওভার, মিলিটারি ক্যু ছাড়া এর ভিন্ন কোনো পরিচিত হতে পারে না।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার মারুফ হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার বক্তব্য রাখেন।