নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিনে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা নিয়ে অনেকে মুখ টিপে হাসলেও সাখাওয়াত হোসেন খান জোর গলায় বলেছেন, আগেরবারের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর মত তিনি শেষ মুহূর্তে সরে যাবেন না।
Published : 20 Dec 2016, 09:06 PM
মঙ্গলবার সকাল থেকে জনসংযোগ শুরু করে দুপুরে এক দফা বিরতি নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করেন সাত খুনের মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসাবে আলোচনায় আসা সাখাওয়াত। সোয়া এক ঘণ্টার মত বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বিকালে আরেক দফা বিরতিতে যান। সন্ধ্যার পরও তার প্রচার চলে।
রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে তিনি বলেন, ২০১১ সালের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার ভোটের আগের রাতে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। তবে এবার তিনি ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টিকে থাকবেন।
“এবার শেখ হাসিনার প্রার্থী আইভী। তাকে, শেখ হাসিনার প্রার্থীকে পরাজিত করতে আমরা কী করুম? আমরা নির্বাচনে থাকব এবং পাস করব।”
২০১১ সালের অক্টোবরে সেই নির্দলীয় ভোটে দলের অনেকের মতের বিরুদ্ধে গিয়েই প্রার্থী হন আওয়ামী লীগ নেতা সেলিনা হায়াৎ আইভী। নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের ছেলে এ কে এম শামীম ওসমান ওই ভোটে কেন্দ্রের অনেক নেতার সমর্থন পান।
ভোটের আগের রাতে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলেও নিজের কষ্টের কথা ওই সময়ই প্রকাশ করেছিলেন বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। আর এক লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে শামীমকে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন আইভী।
এবারের ভোটে এখন পর্যন্ত কোনো গোলযোগ না ঘটলেও আশঙ্কা কাটেনি বলে মন্তব্য করেন সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসা সাখাওয়াত।
তিনি বলেন, “আশঙ্কাতো আছেই। গত নির্বাচনে কী হয়েছে- সেটা সবাই দেখেছে। এরপরও আমরা আশা নিয়ে দাঁড়িয়েছি, এবার একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এটা জনগণেরও আশা। সরকার ও নির্বাচন কমিশন জনগণের এই আশা পূরণ করবে, এটাই আমরা কামনা করি।”
নির্বাচন কমিশনের নিয়মের কারণে নারায়ণগঞ্জের বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীরা সাখাওয়াতের শেষ দিনের প্রচারে থাকতে পারেননি। নৌকার প্রার্থীর বিপুল কর্মী-সমর্থকের বিপরীতে সাখাওয়াতের মিছিল আর পথসভায় উপস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করতে দেখা গেছে স্থানীয় ভোটারদের অনেককে।
সকালে পাইকপাড়া, নয়াপাড়া, নিতাইগঞ্জ, তামাকপট্টি, নোলুয়াপাড়ায় গণসংযোগ করার পর দুপুরে বিরতি দিয়ে বিকাল সোয়া ৩টার পর নগরীর ২ নম্বর রেলগেইটে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আসেন সাখাওয়াত। সেখানে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কিছু সময় আলোচনার পর দ্বিতীয় দফা জনসংযোগ শুরু করেন তিনি। ঠিক এর পরপরই নৌকা প্রতীকের একটি মিছিল বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়ক অতিক্রম করতে থাকে।
আইভী সমর্থকদের মিছিলটি কার্যালয়ের সামনের রাস্তার উল্টোপাশে এসে কিছু সময়ের জন্য থেমে যায়। তাদের অবস্থানের সময়ই ৩টা ৩৫ মিনিটের দিকে কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বের হন বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত।
ফুটপাত ধরে উল্টো দিকে এগোতে থাকেন সাখাওয়াত। এ সময় নৌকার সমর্থকরা আরও জোরে জোরে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এর পাল্টায় স্লোগান ধরেন বিএনপির প্রার্থীর কর্মীরাও।
কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর সাখাওয়াতের সঙ্গে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের ৬-৭ জনকে মানুষের হাতে প্রচারপত্র বিলি করতে দেখা যায়। ৬০-৭০ জন লোক নিয়ে সোয়া এক ঘণ্টা কখনো মূল সড়কে ফুটপাথ ধরে, আবার কখনও গলিপথে হেঁটে জনসংযোগ চালান সাখাওয়াত। এ সময় হাত নেড়ে দুই পাশের মানুষকে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায় তাকে।
এ সময় ফুটপাত ছেড়ে সড়কের মূল অংশে চলে আসেন সাখাওয়াত। মিছিলের পেছনে আটকা পড়া গাড়ি ধীর গতিতে চলতে থাকে। ওই সড়ক ধরে এগিয়ে জামতলা ধোপাপট্টিতে প্রবেশের পর ৪টার দিকে ধোপাপট্টি জামে মসজিদে তিনি আসরের নামাজ পড়েন।
সাখাওয়াতের এই প্রচারের সময় তার সমর্থকদলের পাশ দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের চারটি মিছিল যায়। সাখাওয়াতের স্ঙ্গীদের মধ্যে অনেককে এ সময় নিজেদের সঙ্গে লোক কম হওয়া নিয়ে আক্ষেপ করতে দেখা যায়।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. রবিউল হোসেনের সমর্থকদের একটি মিছিল ধোপাপট্টির সরু গলি পার হওয়ার পর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় এক বাসিন্দা বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলে ওঠেন- “কমিশনারের মিছিল দেখেন, এই কয়জন লোক নিয়া মেয়র হবেন?”
নামাজ শেষে বেরিয়ে সেখানে জড়ো হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে পথসভা করেন সাখাওয়াত।
তিনি বলেন, “আমি মেয়র পদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী। আপনারা সবাই আমাকে দোয়া করবেন এবং ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিবেন।... সকলকে আমার জন্য দোয়া করার আহ্বান জানিয়ে আপনাদের.... ২২ তারিখে সকাল বেলায় আপনারা সকলে গিয়ে ভোট দিবেন, এই আশা ব্যক্ত করছি।”
শহীদ সাব্বির আলম খন্দকার সড়কে সাখাওয়াত প্রবেশ করার পর বিভিন্ন স্থানে লোকজন তার সমালোচনা করতে থাকে।
ওই সড়কে দাঁড়িয়ে সাখাওয়াতের মিছিল নিয়ে হাসাহাসি করতে দেখা যায় এক ব্যক্তিকে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে তিনি নিজের নাম বলেন মো. কামাল।
তিনি বলেন, “ঠেলাগাড়ি মার্কার কাউন্সিলর প্রার্থী খোরশেদ আলমের মিছিলেও ৪০০-৫০০ লোক হয়। এত কম লোক নিয়ে মিছিল করে কীভাবে মেয়র হওয়ার আশা করে!”