আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বিএনপি, তবে সেজন্য ভোট ১৫ দিন পেছানোসহ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দলটি।
Published : 27 Nov 2015, 11:12 AM
বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আসাদুজ্জামান রিপন শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় অবস্থান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “বিএনপি বিদ্যমান প্রেক্ষাপটকে আমলে নিয়ে শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং জনগণের ভোটাধিকারের আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করার জন্য পৌর নির্বাচনে আমাদের দল শর্তসাপেক্ষ অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
বিএনপির শর্তগুলো হল- নির্বাচন ১৫ দিন পিছিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণা, অবিলম্বে ‘গণগ্রেপ্তার’ বন্ধ করা, ‘মিথ্যা মামলায়’ আটক নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মুক্তি দেওয়া, পৌর এলাকায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ওসিদের বদলি করা, ৫০ লাখ নতুন ভোটারকে এ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া এবং কেবল নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকেই পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজের অনুমতি দেওয়া।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট হতে যাচ্ছে দলের মনোনয়নে, দলের মার্কায়। ২৩৬ টি পৌরসভায় এ নির্বাচন করতে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে ইতোমধ্যে তফসিল দিয়েছে ইসি। তাতে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিলের কথা বলা হয়েছে।
ওই সময়সূচি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রিপন বলেন, “সাধারণত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের আহ পর্যন্ত ৪৫ দিন সময় থাকে। এটা কনভেনশনাল। এবার মাত্র ৩৭দিন রাখা হয়েছে।
এছাড়া পৌর নির্বাচনের বিধিমালায় প্রার্থীদের মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দের প্রত্যায়নপত্র দেওয়ার জন্য যে পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে- তার মধ্যে এ কাজ ‘অত্যন্ত কঠিন’ বলে মন্তব্য করেন রিপন।
তিনি বলেন, “দলীয় প্রত্যয়নকারী নিয়োগ, দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্তকরণ, মনোনয়ন দাখিল ও প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার সময় এবার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা, সদ্দিচ্ছা ও স্বচ্ছতা নিয়ে জনমনের সন্দেহ তৈরি হতে পারে।”
রিপন বলেন, তফসিল ঘোষণা থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল পর্যন্ত এবার ‘মাত্র ১০দিন’ সময় দেওয়া হয়েছে, যা দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য একেবারেই ‘অপ্রতুল’।
“এ সিদ্ধান্ত মোটেই সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। আমাদের দল মনে করে, উপরোক্ত প্রত্যেকটি প্রক্রিয়ায় যৌক্তিক সময় বৃদ্ধি আবশ্যক।”
‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ পৌর নির্বাচন আয়োজনে বিএনপির এসব ‘পর্যবেক্ষণ’ তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠি পাঠানো হবে বলে জানান রিপন।
“দেশে প্রায় ৫০ লাখ নতুন ভোটার ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। তারা জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার জন্য উপযুক্ত হচ্ছেন। এমন কি প্রয়োজন পড়ল যে ৫০ লাখ নতুন ভোটারকে জীবনের প্রথম ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত করে তিন দিন আগেই পৌর নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে? এটা সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত বলে বিএনপি মনে করে না।”
রিপন বলেন, ভোটের তারিখ অন্তত ১৫ দিন পিছিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণা করলে তা যুক্তিযুক্ত হবে বলে বিএনপি মনে করে।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত বুধবার গুলশানে নিজের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর বৃহস্পতিবার তিনি বসেন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে বিএনপি সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও আগে-পরে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে।
‘ব্যর্থ’ আন্দোলনের পর সর্বশেষ গত এপ্রিলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটগ্রহণের মাঝপথে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তা বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীরা।
পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের নীতি নির্ধারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যরাও বৃহস্পতিবার যৌথ সভায় বসেন।
দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সভার শুরুতে বলেন, “তারা (বিএনপি) নির্বাচনে অংশ নিলে দেখা যাবে- কতটুকু ভালো করবে। অংশ না নিলে তো নিজেদের দলের ক্ষতি করবে।”
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে রিপন অভিযোগ করেন, গত কয়েক মাসে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ‘গণগ্রেপ্তারে’ সারা দেশ ‘কারাগারে’ পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ‘পরিবেশ নেই’। নির্বাচন কমিশনের ‘দৃশ্যমান কোনো ভূমিকাও’ বিএনপি দেখতে পাচ্ছে না।
“তাই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের স্বার্থে অবিলম্বে গণগ্রেপ্তার বন্ধ করা এবং নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মুক্তিদানের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কার্য্কর ভূমিকাও আমরা প্রত্যাশা করি।”
অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নেতা হারুনুর রশীদ, নিতাই রায় চৌধুরী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন, শাম্মী আখতার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।