বাক স্বাধীনতা চর্চার জন্য ইরানে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাদেঘ জিবাকালামকে ‘ফ্রিডম অব স্পিচ অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে জার্মান প্রচারমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
Published : 13 Jun 2018, 12:14 PM
বনের ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সেন্টারে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পিটার লিমবার্গ তার হাতে এ বছরের পুরস্কার তুলে দেন।
এআরডি বিদেশ প্রতিবেদক রেইনার্ড বামগারর্টেন শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য জিবাকালামকে কারাদণ্ড দেওয়ার পর ইরান সরকারের বিরুদ্ধে সাহসী সমালোচনার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পুরস্কার গ্রহণ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জিবাকালাম ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষদের বিরুদ্ধে ইরান সরকারের নৃশংশ সহিংসতার সমালোচনা করেন। পাশাপাশি তার দেশে গণতন্ত্রের জন্য মুক্তমনাদের যে আশার জায়গা রয়েছে তাও তুলে ধরেন তিনি।
কারাবন্দী ইরানি অ্যাকটিভিস্ট, গবেষক ও শিল্পীদের ‘বিবেকের বন্দী’ হিসেবে উল্লেখ করে তাদের সবার উদ্দেশ্যে নিজের এই পুরস্কার উৎসর্গ করেন জিবাকালাম।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জিবাকালামকে এ বছরের ১৩ই এপ্রিল ১৮ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়৷ তখন তিনি প্রধান বিচারপতি সাদেঘ লারিজানির কাছে অভিযোগ করেন, আসামি পক্ষের সব যুক্তি উপেক্ষা করে শুধু ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে তাকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে৷
জিবাকালাম ডয়চে ভেলের ফার্সি বিভাগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানে কয়েকমাস আগের দেশব্যাপী বিক্ষোভ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার জন্যই তাকে দণ্ড দেওয়া হয়৷ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে মুক্তি পান তিনি।
কে এই জিবাকালাম?
সাদেঘ জিবাকালাম ১৯৪৮ সালে তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাকে ইরানের বিশিষ্টতম বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে গণ্য করা হয়৷
সংস্কার সমর্থক ও নয়া-উদারবাদী জিবাকালাম গোঁড়া সরকারপন্থিদের সঙ্গে প্রায়ই বিতর্কে লিপ্ত হন৷ অতীতে তিনি ইরানের আণবিক কর্মসূচিসহ অভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতির বিভিন্ন প্রশ্নে সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন।
The struggles for freedom and democracy have been at the heart of #Iran’s contemporary history, says @SadeghZibakalam in his acceptance speech at the #FreedomOfSpeech awards.#dw_gmf pic.twitter.com/08NkwrQqQz
— Global Media Forum (@DW_GMF) June 12, 2018
ফার্সি ভাষায় লিখিত তার একাধিক বই ইরানে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যেমন ‘‘আমরা কীভাবে এমন হলাম'', ‘‘অকৃত্রিম হাশেমি'', ‘‘ঐতিহ্য ও আধুনিকতা'' কিংবা ‘‘ইসলামি বিপ্লবের উপক্রমণিকা''৷
জিবাকালাম ইংল্যান্ডের হাডার্সফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন৷ তারপর তিনি ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই একই বিষয় নিয়ে ডক্টরেটের পড়াশুনা শুরু করলেও তা সমাপ্ত করতে পারেননি৷ কারণ ১৯৭৪ সালে তিনি যখন দেশে গিয়েছিলেন তখন তাকে গ্রেপ্তার ও তিন বছরের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷
শাহের গোয়েন্দা পুলিশ জিবাকালামকে গ্রেপ্তার করে৷ পাহলভি প্রশাসনের তরফ থেকে তার বিরুদ্ধে ‘‘রাষ্ট্রবিরোধী অন্তর্ঘাত'' ও ‘‘অপপ্রচারের'' অভিযোগ আনা হয়৷
ইসলামি বিপ্লবের পর জিবাকালাম ১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি কেন্দ্র থেকে স্নাতকোত্তর এবং ডক্টর উপাধি লাভ করেন৷
১৯৯০ সালে তেহরানে ফিরে যাওয়ার ঠিক দুবছর পরে তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন৷
সেই থেকে জিবাকালাম নিয়মিতভাবে বিবিসি ও আল জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে ভাষ্যকার হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন ও সাক্ষাৎকার প্রদান করেছেন৷
২০০০ সালে সাদেঘ জিবাকালাম উত্তর-পশ্চিম ইরানের জনিয়ান শহর থেকে সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু ইরানের প্রহরী পরিষদ তাঁর অংশগ্রহণকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে৷
ব্যতিক্রমী উপায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য ব্যক্তি বা উদ্যোগকে ২০১৫ সাল থেকে এই পুরস্কার দিচ্ছে ডয়চে ভেলে। প্রতিবছর বনে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের সম্মেলনে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
১২০টি দেশের প্রায় ২ হাজার সাংবাদিক, গণমাধ্যম উদ্যোক্তা, কর্মী, এনজিওকর্মী, ব্লগার এবং সংবাদসংশ্লিষ্টরা মিলিত হয়েছেন তিন দিনের এবারের সম্মেলনে৷