এমন অমোঘ মায়ার টানে অনেকেই ছুটেছেন অনিশ্চিত যাত্রায়। কেউ ফিরেছেন, কেউ ফেরেননি। এর আগেও পর্বতারোহন শেষে সফল হয়ে, সোল্লাসে পা রেখেছেন দেশের মাটিতে।
Published : 28 Sep 2014, 07:58 PM
তবে ২০১৩ এর মে’ মাসটা যেন ওলোট-পালোট করে দিল সব কিছু। দেশের নাম সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উঁচু করে ধরবার যাত্রাই শেষ যাত্রা হলো তার। না ফেরার দেশেই হয়তো, এখনো দেশের পতাকা সগৌরবে উড়াচ্ছেন তিনি। আর তাই, তারই এক সময়ের সহযাত্রীরা এবার রওনা হতে চলেছেন সজলের পথেই।
লক্ষ্য মায়াবি হিমালয়ের ‘কেয়াজো-রি’ আরোহন। তবে এরই মাঝে, সজলের নাম ইতিহাসের পাতায় তুলে রাখতে, নিজেদের ক্ষুদ্র চেষ্ঠাকে হিমালয়ের গায়ে খোদাই করে রাখবেন তারা।
২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে, এক সংবাদ সম্মেলনে এমন সব কথাই জানালেন দেশের ছয় পর্বতারোহী। আগামী অক্টোবরের দশম দিনে হিমালয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন তারা। লক্ষ হচ্ছে ২০ হাজার ২শ' ৯৫ ফুট উচু কেয়াজ–রি’র শিখরে আরোহন করা।
তবে অভিযানের অংশ হিসেবেই ১৫ হাজার ৭শ' ফুট উঁচুতে অবস্থিত দুগলা’র গিরিপথে 'সজল খালেদ স্মৃতিফলক' স্থাপনের লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছেন তারা। এই দুগলার গিরিপথেই আছে বাবু চিরি শেরপা (যিনি এভারেস্টে ১৬ ঘন্টা অবস্থান করে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন, ১০ বার এভারেস্টের চূড়ায় চড়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন একাদশতম অভিযানের সময়), পাসাং লামু শেরপা (প্রথম নেপালি নারী এভারেস্ট জয়ী), স্কট ফিশারের মত আরও অনেক জগতখ্যাত পর্বতারোহীর স্মৃতিফলক।
সব ঠিক থাকলে, বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্র্যাকিং ক্লাবের এই ছয় অভিযাত্রী তাদের পাশেই খোদাই করে আসবেন বিদেহী সজল খালেদের নাম।
তবে প্রথমবারের মতো হিমালয়ের গা ছুঁয়ে দেখবার অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন- পেশায় স্বেচ্ছাসেবী সংঠনের সঙ্গে যুক্ত মো. মহিউদ্দিন ও একটি ফ্যাশন হাউজে কর্মরত শামীম তালুকদার।
এরই মাঝে ২০১২ সালে ভারতের এইচএমআই পর্বতারোহন ট্রেনিং সেন্টারে অনুশীলন করে নিজেদের প্রস্তুত করে তুলবার কথাও জানিয়েছেন তারা।
২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে এমন সব খবর নিয়েই হাজির হয়েছিলেন এই সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনের এক ফাঁকে তাদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেন অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলী খান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্ঠা রাশেদা কে চৌধুরী। একইসঙ্গে নিজ দেশ ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের নাম আরও উদ্ভাসিত করতে পর্বতারোহীদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
কাঠমুন্ডু- লুকলা- মনজো- নামচে বাজার- খুমজুং- ডোলে- মাছের মা- কেয়াজো রি বেসক্যাম্প- এরপর আরও দুটি ক্যাম্পের পর শিখরে আরোহন।
ফেরার পথে বেসক্যাম্প থেকে ডোলে- প্যাং বোচে- পেরিচে- দুগলা (এখানেই সজল খালেদের স্মৃতিস্মম্ভ স্থাপন করবেন তারা)।
পতাকা হাতে যার ফিরবার কথা বীরবেশে, তারই সমাধি রচনা হলো মায়াবি হিমালয়ের কোনও এক গলিতে। বাংলাদেশে ফেরেনি তার লাশ।
ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ।