বর্ষায় পানি আসার আগে চলনবিলে সর্বশেষ ফসল হলো বোরো ধান। পুরো চলন বিলজুড়েই এখন চলছে বোরো কাটার মহোৎসব।
Published : 29 Apr 2016, 02:52 PM
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সমৃদ্ধ জলাভূমির নাম চলনবিল। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার বড় একটি অংশ জুড়ে এ বিলের অবস্থান। বর্ষা মৌসুমে পানিতে পরিপূর্ণ থাকলেও শীতে শুকিয়ে যায়। তখন থেকে এ বিলে চাষ হয় নানান শষ্য।
ব্রহ্মপুত্র নদ যখন তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময় চলনবিলের সৃষ্টি। গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১, ০৮৮ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এর আয়তন অনেক কমে এসেছে।
চলনবিল মূলত অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। বর্ষায় এই বিলগুলোতে পানির প্রবাহ বেড়ে একসঙ্গে বিশাল এ বিলের সৃষ্টি হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ, পাবনা জেলার চাটমোহর এবং নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা জুড়ে এ বিলের বিস্তৃতি। বিলের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত পাবনা জেলার নুন-নগরের কাছে অষ্টমনীষা পর্যন্ত গিয়ে থেমেছে। এর সবচেয়ে চওড়া দিকটি উত্তর-পূর্ব কোনাকুনি।
নাটোরের সিংড়া থেকে গুমনী পাড়ের কচিকাটা পর্যন্ত এ বিলের দীর্ঘতম অংশ, প্রায় চব্বিশ কিলোমিটার দীর্ঘ।
চলনবিলে ধানকাটা দেখতে যেতে পারেন এ বিলের নাটোং অংশে। জেলার সিংড়া উপজেলার অনেক জায়গাজুড়ে এ বিলের রাজত্ব আছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমড়ুল থেকে বনপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক তৈরি হয়েছে চলনবিলের ওপর দিয়েই।
সড়কের দুপাশের প্রায় সব জায়গাতেই চলছে ধান কাটার উৎসব। এ পথে চলতে চলতে সড়কের দুপাশেই আছে বিস্তীর্ণ পাকা বেরো ধানের ক্ষেত।
সড়কের যে কোনো জায়গায় থেমে বিলের ভেতরে ছোট কোনো সড়ক ধরে একটু ভেতরে ঢুকে পড়ুন। যতই ভেতরের দিকে যাবেন ধান কাটার সৌন্দর্য ততো বেশি চোখে পড়বে।
দীর্ঘ মেঠো পথে ধুলা উড়িয়ে মহিষের গাড়ি বোঝাই করে ধান নিয়ে ফিরছেন কৃষক। কোথাও আবার ধান বোঝাই মহিষের গাড়ি নদী-খাল পার হচ্ছে। মাঠের ভেতরে কিংবা বাড়ির আঙিনা জুড়ে কোথাও আবার চলছে ধান মাড়াই। কোনো কোনো বাড়িতে চলছে ধান সিদ্ধ কিংবা ধান ভানার কাজ।
কীভাবে যাবেন
এ ভ্রমণে নিজস্ব গাড়ি কিংবা কয়েকজন মিলে ভাড়া করে গাড়ি নিয়ে যাওয়াই ভালো। এছাড়া ঢাকার গাবতলি থেকে নাটোর কিংবা রাজশাহীগামী যে কোনো বাসে উঠে নামতে পারেন চলনবিলে।
এ পথে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, ন্যাশনাল পরিবহনের বাস ভালো। ভাড়া আড়াইশ থেকে ৪শ’ টাকা।
এছাড়া বগুড়াগামী যে কোনো বাসে উঠেও নামতে পারেন হাটিকুমড়ুল মোড়ে। সেখান থেকে স্থানীয় বাহনে যেতে পারবেন চলনবিলে।
কোথায় থাকবেন
এ ভ্রমণে রাতে থাকার প্রয়োজন নেই। তবে চাইলে ভ্রমণ শেষে রাতে নাটোর জেলা সদরে এসে থাকতে পারেন।
প্রয়োজনীয় তথ্য
চলনবিলের ভেতরের সড়কগুলো গাড়ি চলাচলের উপযোগী নয়। সর্বশেষ পাকা সড়কে গাড়ি রেখে বাকি পথ হেঁটেই যেতে হবে। এ সময়ে রোদের তাপ অনেক বেশি। সঙ্গে অবশ্যই ছাতা কিংবা রোদটুপি নিতে ভুলবেন না। সঙ্গে পানি অবশ্যই নেবেন।
বিলের মধ্যে খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই দুপুরের জন্য পর্যাপ্ত খাবার সঙ্গেই নিতে হবে।