একটা সময় দূর পাল্লার যাত্রীদের নির্ভরতায় ছিল সায়েদাবাদ। সময়ের সঙ্গে সেই ধারণা পাল্টে গেছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অনিয়মের বেড়াজালে জর্জরিত এই টার্মিনালের প্রতি এখন শুধু যাত্রীরাই আগ্রহ হারাননি বাস মালিকরাও বিরক্ত।
Published : 11 Dec 2015, 06:23 PM
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের দুই প্রান্তে মিশেছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের দুটি শাখা। টার্মিনাল থেকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রয়েছে তিনটি পথ।
পাশেই জনপথ মোড়, যেখানে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত কাউন্টার। উপচে পড়া ভিড় আর থেমে থাকা বাসের কারণে সেখানে যানজট এখন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার।
বুধবার টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্থানে স্থানে জমে থাকা আবর্জনা ও ময়লাপানির কারণে এর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। কিছু কিছু স্থানে মাসের পর মাস পড়ে আছে অকেজো বাস। অনেকে আবার গাড়ি মেরামত, এমনকি রংয়ের প্রলেপ দেওয়ার কাজও সারছেন টার্মিনালে।
চট্টগ্রাম রুটের বাসের লাইনম্যান জিল্লুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই টার্মিনালটির প্রতি যাত্রীর আগ্রহ নষ্ট হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। এসব বলতে গেলে আমাদের অনেক অসুবিধা।
“খোলা ম্যানহোলগুলো দেখেন, সেখানে প্রায় যাত্রীদের পা পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। ২০/২৫ দিন ধরে এই অবস্থা, কর্তৃপক্ষ যেন দেখেও দেখে না।”
২০০৪ সালে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। নতুন টার্মিনালে মূল ভবন ছাড়াও রয়েছে সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও নোয়াখালী অঞ্চলের জন্য পৃথক পাঁচটি কাউন্টার ভবন।
তবে হানিফ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, একুশে পরিবহন, গ্রিনলাইন পরিবহনের মতো জনপ্রিয় বাস সার্ভিসের কোনো কাউন্টার নেই সেখানে।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ইশরাত পরিবহন, সৌখিন পরিবহন, পর্যটক পরিবহন, বনফুল পরিবহন, মেঘনা পরিবহন, পদ্মা পরিবহন, ঈগল পরিবহন, উজ্বালা পরিবহন, মামুন পরিবহনসহ আরও কিছু লোকাল বাসের কাউন্টার থাকলেও টার্মিনালে যাত্রীর দেখা পাননা তারা।
বরিশালগামী পর্যটক বাসের কাউন্টার ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির বলেন, টার্মিনালের বাইরেও তাদের কয়েকটি কাউন্টার রয়েছে। বেশিরভাগ যাত্রী ওই কাউন্টারগুলো থেকেই টিকেট কাটেন।
একুশে পরিবহনের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “টার্মিনালের ভেতরে যাত্রীদের নিরাপত্তা নেই, বিশ্রামের ভালো ব্যবস্থা নেই। সেখানে যত্তসব চোর-বাটপার শ্রেণির লোকজনের আড্ডা। আমাদের চেয়ারকোচ গাড়িগুলো সেখানে গেলে উল্টো আরও যাত্রী হারাবে, ব্যবসার ক্ষতি হবে।”
সঠিক পরিবেশ তৈরি করে চেয়ারকোচ গাড়ির কাউন্টারগুলোকে ভেতরে নিতে পারলে টার্মিনালের পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেও মত দেন তিনি।
“বাস টার্মিনাল কারা চালায়, কারা নিয়ন্ত্রণ করে এটা সবাই জানে। সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে টার্মিনালের সব সমস্যার সমাধান করে এটাকে যাত্রীবান্ধব করা কঠিন।”
টার্মিনালের কাউন্টার ভবনগুলোতে যাত্রীদের উপস্থিতি যেমন কম, তেমননি অনেক যাত্রী এলেও তাদের বসার ব্যবস্থাও অপ্রতুল। তবে মূল ভবনে যাত্রী বিশ্রামের বড় একটি হল রুম থাকলেও সেখানে আড্ডায় মেতে থাকেন পরিবহন শ্রমিক ও ভবঘুরে মানুষজন।
টার্মিনালের এই ‘শ্রীহীন’ অবস্থার কথা স্বীকার করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাস টার্মিনাল ব্যবস্থাপক মারুফ হাসান বলেন, “আগের টার্মিনাল এর চেয়ে বেশি ‘যাত্রীবান্ধব’ ছিল। বিলুপ্ত যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হওয়ায় এনিয়ে খুব বেশি মন্তব্য করার সুযোগ নেই।”
সায়েদাবাদ বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শোভা মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টার্মিনালের দুই পাশে দুটি ফ্লাইওভার থাকলেও চড়া টোলের কারণে বাস মালিকরা এগুলোর ব্যবহার করেন না।
“কিছুদিন আগে ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ নিচের সবগুলো পথ বন্ধ করে বাসগুলোকে ফ্লাইওভারে উঠতে বাধ্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু মালিক-শ্রমিকরা সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। এতো টাকা খরচ করে ফ্লাইওভারে চড়লে লাভ বলে কিছুই থাকে না।”