‘পেহলা পেহলা পেয়ার’, ‘দিল দিওয়ানা’, ‘দেখা হ্যায় পেহলি বার’- ভাষার সীমানা ছাড়িয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া এ রকম বহু গানে কণ্ঠ দেওয়া ভারতীয় কিংবদন্তি শিল্পী এসপি বালাসুব্রামানিয়াম আর নেই।
Published : 25 Sep 2020, 06:55 PM
করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর দেড় মাসের বেশি সময় চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে শুক্রবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কণ্ঠশিল্পী।
পাঁচ দশকের সঙ্গীত জীবনে ৪০ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দেওয়া বালাসুব্রামানিয়াম ‘এসপি বালা’ নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। প্রিয় এই শিল্পীর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন ভারতীয়রা।
দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার পাশাপাশি একের পর এক জনপ্রিয় হিন্দি গান উপহার দেওয়া এসপি বালার ভক্ত-অনুরাগীদের শোকে ভাসছে টুইটার। অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না গুণী এই শিল্পীর এভাবে চলে যাওয়া।
Completely heartbroken.. shattered. In tears.. Sir You cannot leave us like this. Why?? Just why?? #SPBalasubrahmaniam #RIP
— KhushbuSundar ❤️ (@khushsundar) September 25, 2020
জীবদ্দশাতেও অসংখ্য ভক্তের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন এসপি বালা। বিবিসি লিখেছে, এসপিবি যখন খ্যাতির চূড়ায় তখন তার ভক্তদের রক্তে লেখা চিঠিও পেয়েছেন এই শিল্পী।
তেলেগু পরিবারে জন্ম নেওয়া এসপিবি তার প্লেব্যাক ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৬৬ সালে একটি তেলেগু ছবিতে গান গেয়ে। এর পর দীর্ঘ এই সঙ্গীত জীবনে হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালইয়ালামসহ ভারতের ১৬টি ভাষায় ৪০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন তিনি।
তার স্মরণে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক রেকর্ডিং স্টুডিও থেকে আরেক রেকর্ডিং স্টুডিওতে যেন উড়ে যেতেন এসপি বালাসুব্রামানিয়াম। আর এভাবে টানা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে একদিনেই তিনটি গান রেকর্ড করার দৃষ্টান্ত গড়েছেন এই শিল্পী।
কন্নড় ভাষায় (কর্ণাটকের ভাষা) সুরকার উপেন্দ্র কুমারের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২১টি গান রেকর্ড করে ১৯৮১ সালে গিনেজ বুকে নাম তোলেন এই ভারতীয় শিল্পী।
বলিউডে কাজের সুযোগ মিললে উড়োজাহাজে করে মুম্বাই এসে হিন্দি গানের রেকর্ড করে সন্ধ্যায় চেন্নাই ফিরতেন তিনি।
Padma Shri S P Bala Subramanian holds the Guinness World Record for recording the Highest Number of Songs by a Singer with over 40000 Songs in 16 Languages. This is the end of an era in the Indian Music Industry.
He will be dearly missed. Om Shanti
— R V Deshpande (@RV_Deshpande) September 25, 2020
গলা খুলে গাইতে পারার অনবদ্য ভঙ্গিমা তার ঝুলি ভরিয়ে দিয়েছিল একের পর এক পুরস্কারে। ভারতীয় সঙ্গীত জগতে তার অবদানকে সম্মান জানিয়ে বালাসুব্রামানিয়ামকে ২০০১ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০১১ সালে পদ্মভূষণ সম্মাননা দেয় ভারত সরকার। ফিল্মফেয়ার থেকে ছয়বার সেরা গায়ক পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
With the unfortunate demise of Shri SP Balasubrahmanyam, our cultural world is a lot poorer. A household name across India, his melodious voice and music enthralled audiences for decades. In this hour of grief, my thoughts are with his family and admirers. Om Shanti.
— Narendra Modi (@narendramodi) September 25, 2020
১৯৮১ সালে মুক্তি পাওয়া রতি অগ্নিহোত্রি ও কমল হাসান জুটির ‘এক দুজে কে লিয়ে’ সিনেমার জনপ্রিয় ‘হাম বনে তুমে বনে’, ‘তেরে মেরে বিচ মে’, ‘মেরে জীওয়ান সাথী’ গানগুলোতে লতা মুঙ্গেসকর ও অনুরাধা পড়োয়ালের সহশিল্পী ছিলেন এসপি বালাসুব্রামানিয়াম।
অসুস্থতার কথা জেনে মৃত্যুর এক দিন আগে বন্ধু এসপি বালাকে দেখতে চেন্নাইয়ের এমজিএম হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন রাজনীতিক ও অভিনয়শিল্পী কমল হাসান।
মৃত্যৃ সংবাদে শোক জানিয়ে এক টুইটে তিনি লিখেছেন, “আমি ভাগ্যবান; এসপি বালাসুব্রামানিয়ামের কণ্ঠের ছায়া হতে পেরেছিলাম অনেক দিন। তার খ্যাতি আগামী সাত প্রজন্মেও বেঁচে থাকবে।”
It is so tragic, the most unfortunate happening. SPB sir was a humble & helpful human being. He was one of the most phenomenal singers of our county. He ruled the music industry, to me he was an elder brother. He was an inspiration, so loving to me.
Anna, I will miss you. RIP pic.twitter.com/QASKZQPhaU
— Hariharan (@SingerHariharan) September 25, 2020
১৯৯২ সালের ব্লকবাস্টার হিট ‘রোজা’ সিনেমায় অস্কার জয়ী এ আর রহমানের কম্পোজিশনে হিন্দি ‘রোজা জানেমান’ গানটি গেয়েছিলেন এসপি বালা।
The Voice of Victory,Love,Devotion and Joy! #RIPSPBalaSubramanyam pic.twitter.com/nd3H8oRcnO
— A.R.Rahman (@arrahman) September 25, 2020
নব্বইয়ের দশকে ‘ভয়েস অফ সালমান খান’ অর্থ্যাৎ সালমান খানের কণ্ঠ ছিলেন এই শিল্পী। ১৯৮৯ সালে সুপার হিট ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ সিনেমার সবগুলো গানেই নায়ক সালমানের প্লেব্যাক করেছিলেন বালাসুব্রামানিয়াম। ‘আজা শাম হোনে আয়ি’, ‘মেরে রঙ মে’, ‘কবুতর যা যা যা’সহ এই সিনেমার সবগুলো গানই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
এরপর সালমান খান ও এসপি বালা জুটি একের পর এক জনপ্রিয়তার মুখ দেখে ‘হাম আপকে হ্যায় কউন’, ‘পাত্থর কে ফুল’, ‘লাভ’, ‘সাজন’, ‘আন্দাজ আপনা আপনা’ সিনেমার গানে।
‘কাভি তু ছালিয়া লাগতা হ্যায়’, ‘সাথীয়া তুনে কেয়া কিয়া’, ‘দিদি তেরা দেবর দিওয়ানা’, ‘পেহলা পেহলা পেয়ার হ্যায়’, ‘দেখা হ্যায় পেহলি বার’, ‘ইয়ে রাত অর ইয়ে দূরি’- এসপি বালার গাওয়া এই সব গান জয় করে নিয়েছে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়।
‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ সিনেমার নায়িকা ভাগ্যশ্রী এসপি বালার মৃত্যুশোকে টুইটে সালমান-এসপিবি জুটির স্মৃতিচারণ করেছেন।
Tragic loss ! The voice of "Prem", who tugged at the strings of all hearts all over the world is gone. #mainepyaarkiya memories.#SPBalasubramaniam no more!
Strength to his family to tide over this grief.@BeingSalmanKhan #balasubramanyam
— bhagyashree (@bhagyashree123) September 25, 2020
সালমান খান পরে রোমান্টিক সিনেমা থেকে সরে এসে অ্যাকশন সিনেমায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ওই সময় এসপিবিও গান থেকে কিছুটা বিরতি নিয়ে অভিনয়ে চেষ্টা করেন। আর তখনই এই সালমান-এসপিবি জুটির রাজত্বের অবসান হয়।
গান করার পাশাপাশি সুরও করেছেন এসপি বালা। দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি সিনেমায় অভিনয়ও করেন তিনি।
প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কলেজে ভর্তি হলেও গানের নেশায় তা আর হয়ে ওঠেনি এসপি বালার।
এ বিষয়ে আগে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলাম। তারপর গান আমার জীবনের বিষয় হয়ে উঠল। আমি উপলব্ধি করলাম, পরিকল্পনা করে কিছু হবে না, বরং যা ঘটে ঘটতে থাকুক।”
কণ্ঠ ধরে রাখতে সঙ্গীত শিল্পীরা ধূমপান, ঠাণ্ডা পানি ও আইসক্রিম থেকে দূরে থাকলেও আমিষাশী এসপি বালা এসব নিয়ে লুকোচুরি করেননি কখনও।
বিবিসি বলছে, রেকর্ডিং স্টুডিওতে ঢোকার আগে এসপিবি এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল চাইলে পুরো কক্ষ যেন স্তব্ধ হয়ে যেত।
এক সাক্ষাৎকারে এসপি বালা বলেছিলেন, “আমি তখনই গান গাওয়া ছেড়ে দেব যেদিন আমার মনে হবে আর গাইতে পারছি না।”