এই মাসেই মুক্তি পাচ্ছে অর্চিতা স্পর্শিয়ার নতুন চলচ্চিত্র ‘কাঠবিড়ালি’।
Published : 06 Jan 2020, 10:45 AM
২০১৯ এর ইতি টানলেন ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ সিনেমা দিয়ে। ছোট পর্দার পরিচিত এই মুখ এখন রুপালি পর্দার চেনা অবয়ব। গ্লিটজের আমন্ত্রণে উপস্থিত হয়ে জানালেন তার পর্দার এপার থেকে ওপারে পরিভ্রমণের গল্প।
কচ্ছপ মানে ধীরে ধীরে চলা, আবার কাঠবিড়ালি হল ছটফটে! এই দুয়ের সমন্বয় সুকুমার রায়ের আজব দেশের মতো জগাখিচুড়ি মনে হলেও, তা ভালোভাবেই উগলে নিচ্ছেন অর্চিতা স্পর্শিয়া।
তার নিজের প্রডাকশন হাউজের নাম দিয়েছেন ‘কচ্ছপ’। আবার সামনে আসছে তার সিনেমা ‘কাঠবিড়ালি’। টিভি নাটকের ব্যস্তমুখ, বিজ্ঞাপনের এককালের সুহাসিনীর খেতাব পাওয়া এই অভিনয় শিল্পী ক্রমেই ব্যস্ত হচ্ছেন রুপালি পর্দায়।
যার প্রমাণ তার একের পর এক কাজ। প্রথমেই তিনি আলোচনায় আসেন তারিক আনাম খানের সঙ্গে অভিনয় করে ‘আবার বসন্ত’ চলচ্চিত্রটি দিয়ে। কোনো রকমের বিরতি না দিয়ে তার একের পর একটি সিনেমা অপেক্ষা করছে ওভেনে বানানো কেকের মতন। তার প্রথম সিনেমা ‘বন্ধন’ এখনও মুক্তির অপেক্ষায়।
সব মিলিয়ে দারুণ একটা সময় কাটালেও বেশ একটা বিরতি পরে গেছে টিভির পর্দায়। স্পর্শিয়াকে নিয়ে আলাপ হবে কিন্তু নাটকের আলাপ হবে না- তা তো হতেই পারে না।
তাই সিনেমা মুক্তির বিরতিতে নাটকের বিরতি নিয়ে জানতেই স্পর্শিয়া বলে উঠলেন- “সিনেমার জন্যই নাটকে বিরতি। কারণ নাটক এবং সিনেমা দুইটি পুরো ভিন্ন মাধ্যম। আমি সবসময়ই চেয়েছি যে কোনো একটি কাজ করতে। তাই যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি সিনেমা করবো তখন থেকে নাটক করা একেবারেই বাদ দিয়েছি।
মাঝে স্পর্শিয়াকে দেখা না যাওয়ার কারণও এটাই বলে জানান তিনি। তার বয়ানে, “যখন সিনেমাগুলোর শুটিং চলছিল তখন যেহেতু নাটক করিনি, তাই কেউ আমাকে দেখেনি। তার মানে এই না যে আমি কাজ ছেড়ে দিয়েছি। তবে হ্যাঁ কাউকে বলিওনি।”
তবে ওয়েব সিরিজ ‘নো কাপল এন্ট্রি’ দিয়ে ঠিকই দর্শকের কাছে ফের পৌঁছে গেছেন তিনি। বিরতিটা তাই খুব বেশি বিষাদের নয় বৈকী।
ক্যারিয়ারের শুরুতেও তিনি ক্যামেরার পেছনেই কাজ করেছেন। দুটি নাম করা প্রডাকশন হাউজে কাজ করতে করতে বিজ্ঞাপন, টেলিফিল্ম এবং নাটক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান তিনি। এখন রুপালি পর্দায় থিতু হলেও হতে চেয়েছিলেন ‘ফিল্ম মেকার’।
হাতপা ছুড়ে বললেন, “ক্যামেরার সামনে কাজ করার ইচ্ছা আমার একদম ছিল না।”
২০১১ সালে প্রথম বিজ্ঞাপনের কাজই তার ক্যামেরার সামনে আসা নিশ্চিত করে দেয়।
তাই বলে নাটককে ‘গুড বাই’ বলে সিনেমাকে আপন করে নেওয়া স্পর্শিয়া কেন অনেকের মতো মিডিয়ার সব জায়গাতেই সরব থাকবে না সেই প্রশ্নের উত্তর দিরেন ছোট্ট করে।
বললেন, “আমি একটা সময় একটা কাজই করি। হয়ত আমি সবার মতো মাল্টি টাস্কার নই। এমন কী নাটকের শুটিং করার সময় আমি মোবাইলও ধরি না। তাই যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি সিনেমা করবো- শুধু সিনেমাই করবো।”
এই সিনেমাগুলো গতানুগতিক ধারার একটু বাইরে হলেও স্পর্শিয়া কিন্তু নাচেগানে ভরপুর সিনেমা করতেও আগ্রহী। কারণ হিসেবে তার উত্তর সোজাসাপ্টা। ছবির স্ক্রিপ্ট আসলে, ভালো লাগলে এক কথায় রাজি হয়ে যাবেন তিনি।
তাই তার কাছে গল্প খুবই গুরত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন রকমের কন্টেন্ট হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। সেটা নাটক হোক, সিনেমা হোক বা ওয়েব সিরিজ- সেখানে ভালো গল্প এখনও অনুপস্থিত।
স্পর্শিয়া বলেন, “অনেক গল্প আমাদের চারপাশে। কিন্তু লেখার মানুষ নেই। অথচ লেখাটাই একটি ভালো পিলার যে পিলারের উপর ভর করে একজন পরিচালক একটি সুন্দর কন্টেন্ট বানাবেন।”
এদিকে তার নিজেরও একটি প্রোডাকশন হাউজ আছে। এই অভিনয় শিল্পীর চোখে তা ‘ছোটখাটো’ হলেও কাজ করছেন নিয়মিত। সেখানেও তেমনই গল্প নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা রাখেন, যে গল্পগুলো এখনও বলা হয়নি।
কাজের ক্ষেত্রে মোটামুটি সবজায়গাতেই সরব তিনি। টক শোতে উপস্থাপক হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। এই কন্টেন্ট প্রকাশিত হয়েছে ইউটিউবে তার নিজস্ব চ্যানেলে।
এক্ষেত্রে অন্তত মিডিয়াতে আরেকটি প্রফেশনাল ভাবে এই সংযোগটি রক্ষায় সবাই সচেষ্ট হলে- মিডিয়ার সবার জন্যই উপকারী বলে মনে করেন তিনি। এবং তা ছেলে-মেয়ে দুয়ের জন্যই প্রযোজ্য।
স্পর্শিয়ার মতে পুরো বিষয়টা ‘সিস্টেমে’ আসা দরকার। যেমন দরকার বিদেশি শিল্পীর পাশাপাশি দেশি শিল্পীর স্বার্থ সমানভাবে মূল্যায়ন করা। কারণ পরিবর্তনের যুগে সবাই একটি সমন্বয়হীনতার মাঝে আছেন বলে মনে করছেন।
আরও মনে করেন, নিজের ডাকাবুকো অভ্যাস তার ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। এরপরেও তার কোনো ইতি নেই।
স্পর্শিয়া বলেন, “ক্যারিয়ারে ঝড় এসেছে, জীবনে বজ্রাঘাত এসেছে। ভেঙেছি। কিন্তু আবার নিজেকে গড়েছি। আর এভাবে গড়তে গড়তে এখন আমি সেই আত্মবিশ্বাসে এসেছি যে আমাকে আর ভাঙা যাবে না।”
নয় বছরের ক্যারিয়ার যাত্রায় হয়ত অনেক কাজ করতে হয়েছে যেটা নিজেরই পছন্দ না। সেই যাত্রাটাও সামলে নিয়েছেন তিনি। এখন আর তো পেছলানোর প্রশ্নই ওঠে না- বলে হেসে উঠলেন স্পর্শিয়া।