এবার ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত চারটি চলচ্চিত্রের মধ্যে কাটতির বিবেচনায় এগিয়ে আছে শাকিব খান-মালেক আফসারীর ‘পাসওয়ার্ড’।
Published : 09 Jun 2019, 09:22 PM
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি, প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক ও দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে কাটতির বিবেচনায় এগিয়ে আছে ‘পাসওয়ার্ড’। বিশেষ করে তরুণদের মাঝে আলাদা আগ্রহ তৈরি করেছে চলচ্চিত্রটি।
শাকিবের আরেক চলচ্চিত্র ‘নোলক’ ও তারিক আনাম-স্পর্শিয়ার ‘আবার বসন্ত’ কাটতির বিবেচনায় খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও সপরিবারে ছবিটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে হাজির হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী দর্শকদের মাঝে বাড়তি আগ্রহ জুগিয়েছে চলচ্চিত্র দুইটি।
প্রেক্ষাগৃহের বাইরে দেশে প্রথমবারের মতো ইউটিউবে মুক্তিপ্রাপ্ত কামরুজ্জামান কামুর চলচ্চিত্র ‘দি ডিরেক্টর’ ইতোমধ্যে ‘পরিণত দর্শকদের’ মাঝে আশাব্যঞ্জক সাড়া ফেলেছে।
প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত তিন চলচ্চিত্রের মূল্যায়নে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাসওয়ার্ড’ খুব ভালো যাচ্ছে। তবে ঈদের চলচ্চিত্র হিসেবে ‘নোলক’ খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। আর অল্প কয়েকটি হলে মুক্তি পেলেও ‘আবার বসন্ত’ ছবিটি খারাপ যাচ্ছে না।”
কোন মানদণ্ডে প্রদর্শক সমিতি চলচ্চিত্রগুলোর মূল্যায়ন করেছে?
তিনি জানান, চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা; মানে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উপস্থিতি ও টিকিট বিক্রির বিবেচনায় এই মূল্যায়ন করেছে প্রদর্শক সমিতি।
কাটতির বিবেচনায় চলচ্চিত্রগুলোর মূল্যায়ন করা হলেও ‘মান’ বিবেচনায় মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই প্রদর্শক সমিতিতে। ফলে চলচ্চিত্রের ভালো-মন্দ নিয়ে কথা বলা হয়েছে দর্শকদের সঙ্গে।
‘পাসওয়ার্ড’ নিয়ে আগ্রহী তরুণরা
ঈদের দিন দেশজুড়ে ১৭৫টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। দেশের বৃহত্তম প্রেক্ষাগৃহ মনিহারে বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার-টানা তিনদিন চলচ্চিত্রটি ‘হাউজফুল’ গেছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান প্রেক্ষাগৃহটির ব্যবস্থাপক আলী আকবর।
তিনি জানান, আরও দশ-বারোদিন চলচ্চিত্রটি চালানোর পরিকল্পনা আছে প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষের।
উত্তরের জেলা নওগাঁর তাজ সিনেমা হলেও সরেজমিন দেখা গেছে, দর্শকদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যায় বেশি।
শুক্রবার রাত ৯টার শো’তে চলচ্চিত্রটি দেখে রফিক নামে এক তরুণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অ্যাকশনের ছবি দেখতে ভালো লাগে। শাকিবের ছবি মিস করি না। ‘পাসওয়ার্ড’ খুব ভালো লেগেছে।”
শাকিব খান ফিল্মসের প্রযোজনায় নির্মিত এ চলচ্চিত্রে শাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন বুবলী। এছাড়াও অভিনয় করেছন মিশা সওদাগর, ইমন, অমিত হাসান, ডন।
দর্শকরা সপরিবারে দেখছেন ‘নোলক’ ও ‘আবার বসন্ত’
সপরিবারে ‘আবার বসন্ত’ ছবিটি দেখতে বলাকা প্রেক্ষাগৃহে দর্শকরা হাজির হচ্ছেন বলে জানালেন প্রেক্ষাগৃহটির ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহীন।
তিনি বলেন, “নানা বয়সী দর্শক এলেও পরিবার নিয়ে আসার দর্শকদের সংখ্যায় বেশি ছিল।”
মুক্তির পরপর দর্শকের উপস্থিতি কম থাকলেও দিনে দিনে আগের তুলনায় তা বাড়ছে বলে জানান তিনি। বলাকায় সকাল সাড়ে ১০টা, দুপুর ১টা, বিকেল পৌনে ৪টা ও সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় শো’ চলছে চলচ্চিত্রটির।
অনন্য মামুন পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে একজন পৌঢ়ের সঙ্গে এক তরুণীর বন্ধুত্বের গল্প উঠে এসেছে। প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান ও অর্চিতা স্পর্শিয়া। আরও অভিনয় করেছেন ইমতু রাতিশ, করভী মিজান, মনিরা মিঠু, মুকিত জাকারিয়া, আনন্দ খালেদ, নুসরাত পাপিয়া প্রমুখ।
‘আবার বসন্ত’র মতো শাকিব-ববি অভিনীত চলচ্চিত্র ‘নোলক’ দেখতেও পরিবার নিয়ে দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে হাজির হচ্ছেন বলে জানালেন অভিসার সিনেমা হলের একজন ব্যবস্থাপক।
তিনি জানান, বিশেষ করে নারী দর্শকের উপস্থিতির সংখ্যা বেশি ছিল।
‘নোলক’ দেখে মাসুদ রানা অপু নামে এক দর্শক ফেইসবুকে লিখেছেন, “ছবি দেখে বোঝা মুশকিল ছিল শেষটা কেমন হবে। শেষে যা হয়েছিল পুরো ছবি দেখে তা ভাবতেই পারছিলাম না যে শেষে এমন হবে। ‘নোলক’ ঠিক তেমন কিছু। শেষটা কিছুটা ভাবাবে, ভাবছিলাম কাহিনীটা যদি অন্যরকম হতো তাহলে হয়তো চোখের পানি পড়ত না! বার বার একটা কথা বেশি করে বলতে মন চাচ্ছে সেটা হলো শাকিব-ববির এক্সপ্রেশন! শেষের এক্সপ্রেশনগুলা দেখলে, কথাগুলা শুনলে চোখের পানি পড়তে বাধ্য।”
ছবিটি পরিচালনা করেছেন সাকিব সনেট অ্যান্ড টিম। তবে শুটিংয়ের শুরুতে পরিচালক হিসেবে ছিলেন তরুণ পরিচালক রাশেদ রাহা। পরে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের চলচ্চিত্রটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়; পরিচালনার স্বীকৃতি নিয়ে মামলাও হয়। সব জটিলতা কাটিয়ে সাকিব সনেট অ্যান্ড টিমের নামেই সেন্সরের চৌকাঠ পেরিয়ে বড়পর্দায় মুক্তি পায় ছবিটি।
‘পরিণত দর্শকদের’ ছবি ‘দি ডিরেক্টর’
প্রেক্ষাগৃহে নয়; এবার ঈদে ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছে কবি-নির্মাতা কামরুজ্জামান কামুর চলচ্চিত্র ‘দি ডিরেক্টর’। ২০১৩ সালে চলচ্চিত্রটি সেন্সরে জমা দেওয়ার পর নানা অভিযোগে ছবিটি আটকে দেওয়া হয়। ছবিটির মুক্তি নিয়ে আন্দোলনও হয়েছিল রাজপথে।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৫ সালে চলচ্চিত্রটি সেন্সর পাওয়ার বছর তিনেক পর এবার ঈদে সান বিডিটিউব নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে চলচ্চিত্রটি। দেশের ইতিহাসে এটিই ইউটিউবে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম কোনো পূর্ণদৈঘ্য চলচ্চিত্র।
তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ছবিটির সেন্সর পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ‘দি ডিরেক্টর’ নির্মাতার লড়াইয়ের গল্প সংবাদ মারফত আমাদের জানা। আমার মনে হয়, ছবিটি যদি নির্মাণের পরেই মুক্তি পেতো তাহলে ছবিটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ধরণ-ধারণ আরেকটু ভিন্ন হতো। সময়োপযোগিতা একটা ফ্যাক্ট।”
ঈদের দিন মুক্তির পর থেকে এখন অব্দি ১৬ হাজারেও বেশিবার ভিউ হয়েছে চলচ্চিত্রটি। ইউটিউবের কমেন্টবক্সে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন দর্শকরা।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক দর্শক লেখেন, “খুব ভালো লেগেছে। সেন্স অফ হিউমার, স্টোরি উইদিন স্টোরি, সাসপেন্স, সিনেমাটোগ্রাফি, অভিনয়, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, স্ক্রিপ্টসহ আরও নানান দিক উপভোগ করেছি। অভিভূত হয়েছি।”
এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন পপি, মারজুক রাসেল, নাফা, কচি খন্দকার, তারেক মাহমুদ, মোশাররফ করিম, সুইটি, নাফিজা, বাপ্পি আশরাফ, কামরুজ্জামান কামুসহ আরও অনেকে।