১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একটি অনালোকিত অধ্যায় যুদ্ধশিশু। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যাদের নীরবে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, জন্মপরিচয় গোপন রেখে যাদের অনেকেই বেড়ে ওঠেন এদেশেই। নিজভূমে আত্মপরিচয় সংকটে জীবনযাপন করা এইসব মানুষের সন্ধানে নেমেছিলেন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী।
Published : 09 Jul 2018, 09:55 PM
তিনজন যুদ্ধশিশুকে খুঁজে বের করে তাদের পরিণত বয়সের মুখ থেকে শুনেছেন যুদ্ধের আরেক পরিণতির গল্প। সে গল্পই তিনি তুলে এনেছেন ‘জন্মসাথী’তে।
২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার জিতল একাত্তর মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যৌথপ্রযোজনায় নির্মিত ‘জন্মসাথী’।
রোববার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে এর পুরস্কার গ্রহণ করেন একাত্তর মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক।
পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী গ্লিটজকে বলেন, “জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া নিঃসন্দেহে বড় স্বীকৃতি ও আনন্দের। আমার ‘জন্মসাথী’ অর্থাৎ যুদ্ধশিশু যারা তারা যদি জনসমক্ষে কথা বলতে রাজি না হতেন, তাহলে এটি নির্মাণ করা সম্ভব হতো না। আমি বলবো, এ পুরস্কার যুদ্ধশিশুদের একধরনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। রাষ্ট্র তাদের সম্মান জানালো এ প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে।”
মোজাম্মেল বাবু গ্লিটজকে বলেন, “একাত্তর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার জন্য ঘোষণা দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। আমরা একটা ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেল। কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা প্রামাণ্যচিত্র-তথ্যচিত্র এসব বানাই। গত ছয় বছরে অন্তত ৬০ প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছি। তার মধ্যে ‘জন্মসাথী’ অন্যতম।
মোজাম্মেল বাবু আরও বলেন, “শুধু জন্মসাথীই নয়, এ আসরে যে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ঘ্রাণ’ সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে, সেটার নির্মাতাও একাত্তর-এ কর্মরত। ফলে তিনটি সেরা চলচ্চিত্রের মধ্যে দু’টিই এল একাত্তরের ঘরে।”
মফিদুল হকের ভাষ্যে উঠে এল ‘জন্মসাথী’র তাৎপর্য। তিনি গ্লিটজকে বলেন, “এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের। আজকাল নবীন প্রজন্মের নির্মাতারাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা খুঁজে ফিরছেন, তাদের মতো করে তুলে ধরছেন। শবনম ফেরদৌসীর এ কাজটার একটা গভীরতর মাত্রা আছে। তিনি যখন আমাদের প্রস্তাব করেছিলেন তখনই আমাদের মনে হয়েছিল, এটি অন্যমাত্রার একটি ছবি হবে। আমরা তাকে যতটুকু পারি সহায়তা করেছি, একাত্তর মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডও তাকে সহযোগিতা করেছে। যার ফলে এটি আলোর মুখ দেখেছে।”
মফিদুল হক বলেন, “ছবিটার যে গভীরতা আছে তা হল- যুদ্ধশিশুর সমস্যাটাকে ব্যক্তিগত সম্পৃক্তির মধ্য দিয়ে এটা একাত্তরের একটা ভয়াবহ অধ্যায়কে মেলে ধরে। তার সঙ্গে একাত্তরের সেই নির্যাতিত মায়েরা-শিশুরা আজকে কেমন আছে, সে জায়গাটায় প্রামাণ্যচিত্রটি যখন প্রবেশ করে তখন ছবিটা অনেক মাত্রা মেলে ধরে।
“দীর্ঘ চার দশকের বিচারহীনতা অবসান করে বাংলাদেশ যে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করলো, সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এ নারী নির্যাতনের বিষয়টিকে যেভাবে তুলে আনলো, যুদ্ধশিশুরাও যে সেখানে সাক্ষ্য দিতে পারল, এটারও একটা প্রতিফলন আছে এ ছবিতে। যার ফলে ছবিটার একটা ব্যক্তিগত মাত্রা, একটা জাতীয় মাত্রা, ঐতিহাসিক মাত্রা এবং একটি আন্তর্জাতিক মাত্রা আছে- কেননা গোটাবিশ্বই তো নৃসংসতা থেকে বেরিয়ে আসার লড়াই করছে। সে হিসেবে এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ কাজ।”
তার মতে, পুরস্কার প্রাপ্তির পর চলচ্চিত্রটির যথাযথ প্রদর্শনের ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের মনোযোগি হতে হবে।
প্রসঙ্গত, জন্মসাথী’র মিডিয়া পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।