অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার পক্ষে বা বিপক্ষে উভয় ধরনের মতামত থাকার কথা জানিয়ে এমন সুযোগ আবারও রাখার ইঙ্গিত রয়েছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের ব্ক্তব্যে।
Published : 04 Jun 2021, 06:54 PM
শুক্রবার তিনি বলেছেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়া যদি লাভজনক হয়, তাহলে অব্যাহত রাখার জন্য আলোচনা করা হবে।
অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগের কেউ পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে রয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, “অনেকে বলছেন এক্ষেত্রে সমাজের ইকুইটির জাস্টিস এনশিউর করা যাবে না যদি এটি অব্যাহত থাকে। তাই বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা আরো একমাস এইটা দেখবো। তারপর আলোচনা হবে।”
শুক্রবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা বা বৈধ করার বিষয়ে কিছু বলেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের অর্থবিলেও এই বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
গত বাজেটে শুধু চলতি অর্থবছরের জন্য কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্ন ছাড়াই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
এবারে বাজেটে নতুন করে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। চলতি অর্থবছরে যেসব খাতে এমন সুযোগ আছে, তা আগামী ৩০ জুন শেষ হয়ে যাবে।
গত ১৯ মে এক বৈঠকে শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ওটা কালো টাকা নয়, অপ্রদর্শিত টাকা। যতদিন প্রদর্শিত না হবে, ততদিন কন্টিনিউ করবে। আমাদের সিস্টেমের কারণে অনেক সময় অপ্রদর্শিত টাকা সিস্টেমে চলে আসে।
শুক্রবার কোথাও কোনো ঘোষণা বা প্রস্তাব বা কিছু উল্লেখ না থাকায় আগামী অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার বিদ্যমান অবাধ সুযোগ থাকছে কিনা একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “দুই সপ্তাহ আগে যখন আমরা এমন বলেছিলাম, তখন আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না।
“আমাদের প্রফিটেবলিটি যাচাই করতে হবে। যদি এটি প্রফটেবল হয়, তাহলে এটি অব্যাহত রাখার জন্য আমরা আলোচনা করবো। এখন এই মুহূর্তে এইটা নিয়ে মিশ্র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দুইটাই আছে।”
তিনি আরো বলেন, “কেউ বলে এইটা রাখতে, কেউ আবার না রাখতে বলেন। অনেকে বলছেন এক্ষেত্রে সমাজের ইকুইটির জাস্টিস এনশিউর করা যাবে না যদি এটি অব্যাহত থাকে। তাই বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা আরো একমাস এইটা দেখবো। তারপর আলোচনা হবে।
“এর ভালো খারাপ দুইটি দিকই আছে। ভালো দিক হচ্ছে এই টাকাটা এই টাকাটা কোনো সিস্টেমে নাই, আমরা ব্যবহার করতে পারি না। যদি এটি প্রদর্শিত আয় হয়ে ঘুরে আসে তাহলে অর্থনীতিতে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে।”
“কালো টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। আর অপ্রদর্শিত আয়ের টাকাটা সিস্টেম লসের কারণে সৃষ্টি হয়। আমরা এখন ট্যাক্স রেট করে রাখলাম ৫০%, ৫৫%, ৬০%। এটা অনেক অন্যায় করা হয়েছে এদেশের মানুষের সাথে, বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের সাথে।”
বাজেটে অনেক সমস্যা সমাধান করা হয়েছে দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এখানে কোনো এক সময় ছিল ‘স্কয়ার ইনকাম ট্যাক্স’। যারা বেশি ইনকাম করবে, তাদেরকে আরও বেশি ট্যাক্স দিতে হবে। অথচ উল্টাটা হওয়ার কথা ছিল।
“সীমিত সম্পদকে এক্সপ্লয়েট করে ম্যাক্সিমাম আয় যারা করবে, তাদেরকে আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু সেটা না করে যারা বেশি আয় করে, তাদের বেশি করে ট্যাক্স দেওয়া হল। এটা করা উচিত না।“
এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেখানে অসুবিধা ছিল সেগুলো দূর করে এবং সহজ করার মাধ্যমে আরও সার্বজনীন করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নতুন করে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা না দেওয়ায় সরকারকে ‘সতর্ক সাধুবাদ’ জানিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।
দেশের অর্থনীতির বিরাট অংকের অর্থ কালো টাকা হিসেবে রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় গবেষক ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা দাবি করে আসছেন।
এসব অর্থই মূলস্রোতে আনার যুক্তি দেখিয়ে মাঝেমাঝেই ‘প্রশ্নহীনভাবে’ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দেয়া হয় বলে তাদের সমালোচনা।
এতে সৎ করদাতারা নিরুসাহিত হন বলে তারা এই সুযোগ না দিতে বরাবরই সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
চলতি অর্থবছর অবারিত সুযোগ দেওয়ার সুবিধা বেশ ভালোই ব্যবহার করেছেন অনেকে।
অর্থমন্ত্রীও এ থেকে আয়কর হিসেবে পাওয়া অর্থের পরিমাণ বাজেট প্রস্তাবে উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন