টাকা অপ্রদর্শিত থাকে ‘সিস্টেমের কারণে’: অর্থমন্ত্রী

অর্থনীতিতে ‘কালোটাকা’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে অপ্রদর্শিত আয় নিয়ে যে আলোচনা হয়, এর পেছনে বর্তমান ‘সিস্টেমও’ অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2021, 03:35 PM
Updated : 19 May 2021, 03:35 PM

এ ধরনের অর্থ বৈধ গণনার মধ্যে নিয়ে আসতে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে তিনি।

বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ বিষয়ে কথা বলেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ওটা কালো টাকা নয়, অপ্রদর্শিত টাকা। যতদিন প্রদর্শিত না হবে, ততদিন কন্টিনিউ করবে। আমাদের সিস্টেমের কারণে অনেক সময় অপ্রদর্শিত টাকা সিস্টেমে চলে আসে। এগুলোকে যদি রেগুলারাইজ না করা হয়, মেইন স্ট্রিমে না নিয়ে আসা হয়, তাহলে যেখান থেকে টাকাটা চলে গিয়েছিল, সেখানে কিন্তু প্রপার ওয়েতে ট্রিটমেন্ট পাবে না।”

‘সিস্টেমের দোষ’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন, সে বিষয়টিও কিছুটা ব্যাখ্যা করেন অর্থমন্ত্রী।

“আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, অপ্রদর্শিত টাকা কী কী কারণে হয়। জমির রেজিস্ট্রেশন ফি অনেক বেশি রেখে দিয়েছে। বাড়ির দাম বা মৌজা মূল্য অনেক কম দাম। যদি প্রকৃত বাজারমূল্যে লেনদেন হত, তাহলে কোনো অপ্রদর্শিত টাকা থাকত না।

“আমাদের সিস্টেমের কারণেই বায়ার ও সেলারের কাছে এই অপ্রদর্শিত টাকাটা থাকে। তারা বিপদে পড়ে। এজন্য আমরা ক্রমান্বয়ে ইনকাম ট্যাক্সের পরিমাণ, স্ট্যাম্প ডিউটি, রেজিস্ট্রেশন কস্ট কমিয়ে দিয়েছি, যাতে সবাই স্বচ্ছন্দে দিতে পারে। আগে অনেক বেশি ছিল। বেশি থাকার কারণে কেউ দিত না।”

বাংলাদেশে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। অবৈধ অর্থনীতির হিসাবের বাইরে থাকা বিপুল অংকের অর্থকে মূল ধারায় নিয়ে আসার ‍যুক্তি দিয়ে সব সরকারই কমবেশি এ সুযোগ দিয়েছে।

তবে এভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে সৎ করদাতাদের প্রতি ‘অবিচার’ করা হয় বলে অনেকেই এর বিরোধিতা করে আসছেন।

মহামারীর সঙ্কটের মধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশে দুটি ধারা সংযোজন করে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের উপর প্রতি বর্গমিটারের উপর নির্দিষ্ট হারে এবং গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজের উপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।

এর পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে বাজেটে বলা হয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম চালিকাশক্তি পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে তিন বছরের লক-ইনসহ কতিপয় শর্তে ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে এবং ওই বিনিয়োগের উপর ১০ শতাংশ কর দিলে আয়কর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।

সেই সুযোগ নিয়ে মোট ৭ হাজার ৬৫০ জন অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকার অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করেছেন বলে গত জানুয়ারি মাসে তথ্য দেয় এনবিআর। সেখান থেকে সরকার কর পেয়েছে মোট ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার ক্ষেত্রে এটি রেকর্ড। এর আগের ১৫ অর্থবছরে এ সুযোগে সব মিলিয়ে ১৪ হাজার কোটি কালো টাকা ‘বৈধ’ হয়েছে। সেখান থেকে সরকার কর পেয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা মত।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আগে দেশে আয়কর অনেক বেশি থাকলেও পর্যায়ক্রমে তা কমিয়ে আনা হয়েছে।

“আমাদের সমসাময়িক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে মূল্যায়ন করলে যেন একই রকম পাওয়া যায়, আমরা সেভাবে ইনকাম ট্যাক্স ঠিক করেছি। আমরা আশা করছি, অপ্রদর্শিত টাকা এই অর্থনীতির সিস্টেম থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।”