সব সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় তিনগুণ বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।
Published : 09 Mar 2021, 10:14 PM
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ নিয়ে মঙ্গলবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্য ১৭২ শতাংশ থেকে ২৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
দুদেশের মধ্যে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহন চালু হলে বাংলাদেশের জাতীয় আয়ে ১৭ শতাংশ এবং ভারতের ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে, বলছে বিশ্বব্যাংক।
‘কানেক্টিং টু থ্রাইভ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিজ অব ট্রান্সপোর্ট ইন্টিগ্রেশন ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল মটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্ট (এমভিএ) পর্যালোচনা, আন্তর্জাতিক চর্চার সঙ্গে এর তুলনা এবং অভিন্ন আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ পর্যালোচনা করা হয়।
এতে বলা হয়, এখন বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ১০ শতাংশ এবং ভারতের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের এক শতাংশ। অথচ পূর্ব এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের অর্থনীতিতে ক্রস বর্ডার বা আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য যথাক্রমে ৫০ শতাংশ এবং ২২ শতাংশ।
ভারতের কোনো প্রতিষ্ঠান ব্রাজিল কিংবা জার্মানির কোনো কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করতে গেলে বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানির তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম ব্যয়বহুল হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে ট্যারিফগুলো রয়েছে তা বিশ্বের গড় ট্যারিফের তুলনায় দ্বিগুণ।
বিশ্বব্যাংকের আগের একটি পর্যালোচনার কথা তুলে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি ১৮২ শতাংশ এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি ১২৬ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।
তবে সর্বশেষ এই পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দুই দেশের মধ্যে পণ্যপরিবহন কানেক্টিভিটি উন্নত করা গেলে বাণিজ্য আরও বাড়ানো যাবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২৯৭ শতাংশ এবং ভারতের ক্ষেত্রে ১৭২ শতাংশ বাড়ানো যাবে।
বিশ্ব ব্যাংকের দুই অর্থনীতিবিদ ম্যাটিস হ্যারেরা দেপা ও চার্স কুনাকার পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদনটি তৈরিতে নেতৃত্ব দেন।
তাদের ভাষ্য হচ্ছে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ‘ট্রান্সপোর্ট ইন্ট্রিগেশন এগ্রিমেন্ট’ ও মটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট’ সমন্বিত আন্তঃদেশীয় পরিবহন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এখনকার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিতকরণ, শুদ্ধাচার ও অবকাঠামোর দুর্বলতাগুলো দূর করার মাধ্যমে এই চুক্তিগুলো আরও কার্যকর করা যায়।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের আবাসিক প্রতিনিধি মার্শিয়া টেম্বুন বলেন, ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, নেপাল, ভুটান ও অন্যান্য পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য একটা গেটওয়ে হিসাবে রয়েছে। বাংলাদেশ আঞ্চলিক বাণিজ্য, ট্রানজিট ও অন্যান্য লজিস্টিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক কেন্দ্রশক্তি হিসাবে পরিচিত হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে অকেজো করে তুলছে। পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পারাপারে কয়েকদিন লেগে যায়। পূর্ব আাফ্রিকায় একই ধরেনের ট্রাফিক ও অবকাঠামো সিস্টেমের একটি বন্দরে এই পারাপারে সময় লাগে ছয় ঘণ্টা।
ভারতে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি জুনাইদ আহমাদ বলেন, এশিয়ার পূর্ব অঞ্চলটি অর্থনৈতিক উন্নতির সূচক হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে। রেল, অভ্যন্তরীণ নদীপথ এবং সড়কপথের কানেক্টিভিটিতে বিনিয়োগ এই প্রচেষ্টায় একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। এই ধরনের কানেক্টিভিটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ও অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির নিশ্চিয়তা দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে ভারতের ট্রাকগুলো বাংলাদেশ হয়ে কোনো ট্রানজিট সুবিধা পায়না। যার ফলে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলিয় রাজ্যগুলো দেশটির মূল ভূখন্ড থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। ২৭ কিলোমিটার শিলিগুড়ি কোরিডোর দিয়ে দুই অঞ্চল এখন যুক্ত আছে। ভৌগলিক এই পরিস্থিতি একটি লম্বা ও ব্যয়বহুল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে। ত্রিপুরার আগরতলা থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক শিলিগুড়ি হয়ে ১৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলকাতায় পৌঁছে। অথচ বাংলাদেশ হয়ে গেলে সেটা ৪৫০ কিলোমিটার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। ভারতীয় ট্রাকগুলোর জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খোলা থাকলে আগরতলা থেকে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো মাত্র ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েই চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর পেয়ে যেতো। এতে পরিবহন খরচ ৮০ শতাংশ কমে যেতো।
প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়, পূর্ণ উদ্যোমে অঞ্চলিক যোগাযোগ সৃষ্টি করতে হলে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি আরও সুদৃঢ় করতে হবে। দেশদুটিকে অবকাঠামোগত ত্রুটি, নীতি ও বিধিমালার সংস্কার, শূল্কায়ন ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমাধান করতে হবে।
প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য পরামর্শ হচ্ছে-
* ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ভিসা ব্যবস্থার সমন্বয়।
* একটি কার্যকর আঞ্চলিক ট্রানজিট সৃষ্টি।
* আমদানি রপ্তানির কাগজপত্রগুলো যৌক্তিক ও ডিজিটাল করা।
* অবকাঠামোর নকশাগুলো আন্তর্জাতিক মানের করা।
* পরিবহন সেবার প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা।
* স্থলবন্দর ও সমুদ্র বন্দরে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি যুক্ত করা।
* বাংলাদেশ ও ভারতে অফ বর্ডার কাস্টম সুবিধা নিশ্চিত করা।
* স্থানীয় বাজারের সঙ্গে আঞ্চলিক করিডোরের সমন্বয় ঘটানো।
* রপ্তানিমুখী ভ্যালু চেইনে লজিস্টিকসের দুর্বলতাগুলো দূর করা এবং
* রপ্তানিমুখী কৃষিপণ্যের ভ্যালুচেইনে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
.#Bangladesh #India share the fifth-longest border in the world. But bilateral trade represents only about 10% of Bangladesh’s trade & 1% of India’s trade. How can both connect better to increase economic growth? Read new @WorldBank report: https://t.co/rHtiT2S9oK #Connect2Thrive pic.twitter.com/mFYSwbmVJJ
— World Bank India (@WorldBankIndia) March 9, 2021