বর্ধিত ব্যয় সমন্বয়ের জন্য নতুন বছরে খুচরা গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ বিতরণের মাশুল ২১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিপিডিবি।
Published : 01 Dec 2019, 02:32 PM
ঢাকার কারওয়ানবাজারের টিসিবি অডিটোরিয়ামে রোববার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির শুনানিতে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন পিডিবির জিএম (বাণিজ্যিক কার্যক্রম) কাউসার আমীর আলী।
এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৮৫ পয়সা হারে বিতরণ মাশুল আদায় করে পিডিবি। ২১ শতাংশ বা ২০ পয়সা বাড়ালে তা এক টাকা পাঁচ পয়সা হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ও সঞ্চালন মাশুল (হুইলিং চার্জ) বাড়লে তা ‘পাস থ্রো’ পদ্ধতিতে সমন্বয় করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যুতের ডিমান্ড চার্জও বাড়াতে হবে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ বিতরণে ১ টাকা ৩১ পয়সা ব্যয় হয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে পিডিবি। ২০২০ পঞ্জিকা বছরে তাদের বিতরণ ব্যয় ১ টাকা ১৮ পয়সা ধরা হয়েছে, যা বিইআরসির হিসাবেও একই।
তবে আয় হিসাবে অন্য খাত থেকে ইউনিট প্রতি ১৩ পয়সা আসার হিসাব দিয়েছে পিডিবি। কিন্তু বিইআরসির হিসাবে তা ১৫ পয়সা, যা বিতরণ ব্যয় থেকে বাদ যাচ্ছে। সে হিসাবে দুই পক্ষের মূল্যায়নের পার্থক্য তিন পয়সা।
প্রস্তাবে বলা হয়, ট্যারিফ সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ইউনিটমূল্য না বাড়িয়ে ডিমান্ড চার্জ বাড়ানো যেতে পারে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিম্নচাপ (এলটি) সংযোগের লোড ৫০ কিলোওয়াট থেকে বাড়িয়ে ৮০ কিলোওয়াটে উন্নীত করা যেতে পারে। এছাড়া বকেয়া বিলের ওপর এককালীন পাঁচ শতাংশ হারে বিলম্ব পরিশোধ মাশুল আরোপ করা যায়।
বিকালের শুনানিতে সঞ্চালন ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে আসে উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা নেসকো। তবে গত নিরীক্ষা বছরে (২০১৮-১৯) নিজেদের লোকসানের কোনো প্রমাণ দেখাতে না পেরে ভোক্তাপক্ষের রোষের মুখে পড়েন নেসকোর আবেদনকারী দল।
নেসকোর প্রস্তাবে দেখানো হয়, ২০১৮-১৯ বর্ষে তাদের বিতরণ ব্যয় ছিল ১ টাকা ২৭ পয়সা, যা ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষে ১ টাকা ৪৫ পয়সা হবে।
তবে বিইআরসির কারিগরি কমিটি হিসাব করে দেখিয়েছে, ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষে ওই কোম্পানি ১ টাকা ২০ পয়সা দরে বিতরণের ব্যয় নির্বাহ করতে পারবে। এর সঙ্গে অন্যান্য আয়ের খাত থেকে যোগ হবে ১৬ পয়সা। ফলে এই সময়ে তারা বিতরণ চার্জ বাবদ ১ টাকা ০৪ পয়সা ধরলেই চলে।
কারিগরি কমিটির একজন কর্মকর্তা জানান, নেসকো যে হিসাব দিয়েছে, সেটা তারা গ্রহণ করেননি।
“আমাদের কাছে মনে হয়েছে, নেসকোর বিতরণ ব্যয় গতবছরের চেয়ে আরও কমবে। গত বছর তাদের ব্যয় হয়েছিল ১ টাকা ১১ পয়সা। নতুন বছরে ব্যয় হবে ১ টাকা ৪ পয়সা।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম নেসকোর শুনানিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “লোকসান না হওয়ার পরও একটি কোম্পানি কোনো যুক্তি ছাড়াই বিইআরসিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে এলো। বিইআরসি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে শুনানির জন্য নিয়ে এলো। এ থেকে বোঝা যায় বিইআরসি তার সঠিক দায়িত্বে নেই।”
উত্তরে বিইআরসির সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, শুনানি হচ্ছে এটা ঠিক। তবে শুনানির পর দাম কমেও যেতে পারে।
এদিকে সকাল বেলার শুনানিতে পিডিবির প্রস্তাবের বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, “কেন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই- সেটা আমরা শুনানিতে যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করি। কিন্তু বিইআরসি এসব যুক্তিকে আমলে নেয় না বলেই আমাদের আদালতে যেতে হয়।
“আদালতেই যদি যেতে হয়, তাহলে এখানে শুনানি করার দরকার কী?”
বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, মোবাইল ফোন গ্রাহক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ও বিজিএমইএর প্রতিনিধি আনোয়ার হোসাইন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান, রহমান মুরশেদ ও মাহমুদউল হক ভূইয়া শুনানি নেন।