বাংলাদেশের আরও পাঁচ প্রকল্পে ৮৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে চীনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক-এআইআইবি।
Published : 26 Feb 2018, 08:12 PM
সোমবার ঢাকার লেইক শোর হোটেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানান ব্যাংকটির কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান লোরেল ওস্টফিল্ড।
তিনি বলেন, এআইআইবি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের তিনটি প্রকল্পে ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এরমধ্যে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ‘ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম আপগ্রেডিং অ্যান্ড এক্সপানশন’ হচ্ছে প্রথম প্রকল্প। যেটি ২০১৬ সালের ২৫ জুন ব্যাংকটির বোর্ড সভায় অনুমোদন পায়।
এই প্রকল্পটির অর্থ ইতোমধ্যে ছাড় হয়েছে এবং বাস্তবায়ন হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ন্যাচারাল গ্যাস এক্সপ্লোরেশন’ প্রকল্প। এ প্রকল্পের অর্থের পরিমাণ ৬ কোটি ডলার।
সর্বশেষ চীনের বেইজিংয়ে ব্যাংকটির বোর্ড সভায় বরিশাল বিভাগের ভোলা দ্বীপে অবস্থিত ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বাংলাদেশ ভোলা আইপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উন্নয়নে আরও ৬ কোটি ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান লোরেল ওস্টফিল্ড।
“তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জ্বালানি এবং যোগাযোগ খাতের পাঁচ প্রকল্পে ৮৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।”
বাংলাদেশ সরকার প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করে বিনিয়োগ করতে এআইআইবির কাছে প্রস্তাব পাঠায়।
ভোলা আইপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উন্নয়নে ৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রসঙ্গে এআইআইবির কর্মকর্তা লোরেল ওস্টফিল্ড বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই প্রকল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বরিশাল বিভাগের ভোলা দ্বীপে অবস্থিত ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রকল্পের কাজ কাজ শেষ হলে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বছরে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১,৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
ওস্টফিল্ড বলেন, “এই বিনিয়োগ বাংলাদেশকে তাদের শিল্পকারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সাহায্য করবে, যা দেশটির উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার যে লক্ষ্য ঠিক করেছে তার সঙ্গে এআইআইবির অনুমোদন দেওয়া তিন প্রকল্প ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।
ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে মিলিত হয়ে এআইআইবি এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে।
‘নতুন বিদ্যুৎ বাংলাদেশ লিমিটেড’র এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ করছে শাপুর্জি পালঞ্জি ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি লিমিটেড।
‘নতুন বিদ্যুৎ বাংলাদেশ লিমিটেড’ বাংলাদেশের একটি বিশেষায়িত সংস্থা; যা শুধু এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশকে দেওয়া এআইআইবির ঋণের সুদের হার কেমন- জানতে চাইলে এআইআইবি কর্মকর্তা বলেন, লাইবর রেটের (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট) সঙ্গে কিছু যোগ হবে।
ঢাকায় এআইআইবির কোনো অফিস স্থাপন করা হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেই। বেইজিংয়ে সদর দপ্তর ছাড়া অন্য কোনো দেশেই এআইআইবির কোনো অফিস নেই।”
এখন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় সব দেশে কোনো সংস্থার অফিস থাকার প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন ওস্টফিল্ড।
এশিয়ার সব দেশের অবকাঠামোগত চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে চীনের রাজধানী বেইজিং-এ মাল্টিল্যাটারাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এআইআইবি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮৪টি দেশ ব্যাংকটির সদস্য।
উচ্চ মানসম্পন্ন, আর্থিকভাবে টেকসই এবং পরিবেশ বান্ধব অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে সাহায্য করাই এই ব্যাংকটির মূল লক্ষ্য।