ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বের আগমনকে কেন্দ্র করে অনেকদিন পর পাল্টা-পাল্টি স্লোগানে মুখরিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন।
Published : 22 Sep 2019, 04:49 PM
রোববার সকালে বিএনপি সমর্থক ছাত্রদলের নতুন সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল মধুর ক্যান্টিনে হাজির হলে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের কর্মীদের স্লোগানের মুখে পড়তে হয়।
দুই সংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী সেখানে থাকলেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি হয়নি। তবে ছাত্রলীগের স্লোগান ‘সৌজন্যমূলক’ এবং ‘ছাত্রসুলভ’ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রদলের নতুন দুই নেতা।
সকাল সোয়া ১১টায় প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে আসনে ছাত্রদলের নবনির্বাচিত ফজলুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল।
ক্যান্টিনে ঢুকেই তারা আগে থেকে অবস্থান করা ছাত্রলীগের টেবিলের দিকে এগিয়ে যান নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে। টেবিলে ছিলেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সেখানে ছিলেন না।
খোকন এবং শ্যামল শুধু লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গেই কুশল বিনিময় করেন।
ছাত্রদলের দুই নেতা যখন শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন তখন পাশ থেকে ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী তাদেরকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
পাল্টাপাল্টি স্লোগানের মধ্যে প্রায় ৩০ মিনিটের মত মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান করে ছাত্রদল। পরে নেতাকর্মীদের নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান তারা। সেখানে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ছাত্রদলের নতুন দুই নেতা।
এর আগে মধুর ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি খোকন ও শ্যামল বলেন, মধুর ক্যান্টিনে গেলে তারা ছাত্রলীগের কাছ থেকে সৌজন্যমুলক এবং ছাত্রসুলভ আচরণ পাননি।
ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে চাই। সেজন্য ক্যাম্পাসে এসেছি। আর এখান থেকে আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে চাই।”
“আপনারা দেখছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহাবস্থান থাকলেও পুরোপুরি নেই। এখানে ভিন্নমত প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে।”
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, “মধুর ক্যান্টিনে আমাদের জন্য পর্যাপ্ত মতপ্রকাশের জায়গা নেই। এখানে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের উস্কানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয়েছে। তাদের সাথে আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলাম। তারা সে সৌজন্যতাবোধও দেখায়নি। এটা আসলে ভিন্নমতের প্রতি এক ধরনের বাধা।”
পরে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সাংবাদিকদের বলেন, “ক্যাম্পাসে যে কেউ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ক্যাম্পাসকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে।”
ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মধুর ক্যান্টিনে রাজনীতি করার অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি এখানে এসে স্বৈরশাসকের নামে স্লোগান দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় ফেলে সেক্ষেত্রে তো আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাতে পারি না কোনোমতে।”
গত বুধবার রাতে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়।
ছাত্রদলের এই কমিটিকে ‘নিশি কমিটি’ আখ্যা দিয়ে সনজিত বলেন, “ছাত্রদলের নিশি কমিটি হয়েছে এবং এই কমিটির উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও তারা অছাত্রদের ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচিত করেছে। এই অছাত্রদের সাথে তো আমরা সৌজন্যমূলক আচরণ করতে পারি না, বুড়ো-চাচাদের তো অভিনন্দন জানাতে পারি না।”
“বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক রেখে কেউ যদি রাজনৈতিক চর্চা করে সেক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মীরা কখনই কাউকে বাধা দিবে না। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি কাউকে প্রতিহত করে সেই দায়ভার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেবে না,” বলেন তিনি।