অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র পরস্পর যোগসাজশ করে রডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশের নির্মাণখাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই)।
Published : 29 Mar 2018, 06:04 PM
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন বিএসিআইয়ের সভাপতি মুনীর উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “দুইদিন আগে অর্থাৎ ২৭ মার্চ সকালে টন প্রতি এম এস রডের দাম ছিল ৬৩ হাজার টাকা আর ওই দিন বিকালে টন প্রতি রডের দাম দাঁড়ায় ৭২ হাজার টাকা। এতেই প্রমাণ হয়, একটি চক্র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রডের দাম বাড়াচ্ছে।”
রডের দর বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে এই প্রকৌশলী বলেন, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টনপ্রতি রডের দর ছিল ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার। কিন্তু এই কয় মাসে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে রডের মূল্য।
“আমরা সাধারণত ৫ শতাংশ লাভ করে থাকি। কিন্তু রডের মূল্য বৃদ্ধিতে ২৫ শতাংশ লোকসান হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে।”
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, বৃহস্পতিবার ঢাকায় ৬০ গ্রেডের এমএস রড টনপ্রতি ৭১ হাজার টাকা থেকে ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, যার এক সপ্তাহ আগের দর ছিল ৬২ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকা।
অন্যদিকে ৪০ গ্রেডের এমএস রডের টনপ্রতি দর হচ্ছে ৫৮ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা, যা একসপ্তাহ আগে ছিল ৫২ হাজার থেকে ৫৩ হাজার টাকা।
অনুষ্ঠানের লিখিত বক্তব্যে বিএসিআইয়ের নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল হক তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের এমএস রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এককভাবে কোনো নিয়মনীতি না মেনে অস্বাভাবিক এবং অব্যাহতভাবে রডের দর বাড়িয়ে চলছে।
“তারা (রড প্রস্তুতকারী কোম্পানি) বলে থাকেন, কাঁচামালের দাম, পরিবহণ খরচ, ডলারের দাম, ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি ও চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস বিলম্বের কারণে রডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে রডের দাম সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ শতাংশ বাড়তে পারে; কোনো অবস্থাতেই ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে না।”
এই পেশার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ জড়িত জানিয়ে শফিকুল বলেন, নির্মাণসামগ্রীর দর বাড়ার ফলে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে প্রচুর জনবল কর্মহীন হবে।
তার অভিযোগ, রডের সিন্ডিকেটের দেখাদেখি সিমেন্ট কোম্পানিগুলো গত ২৫ দিনে ব্যাগপ্রতি ৬০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
“এছাড়া টাইলস, ইলেকট্রিক কেবল, স্যানিটারি মালামাল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, সরকার অতি দ্রুত পিপিআর অনুযায়ী আমাদের প্রাইস এডজাস্ট ক্লজ-২৭.৯ কার্যকর করবেন। না হলে আমরা ১৫ এপ্রিল থেকে সমস্ত নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো।”
এটা কর্মসূচি কিনা জানতে চাইলে মুনীর বলেন, “না না কর্মসূচি নয় এবং ঘোষণা করতে হবে না। এভাবে চলতে থাকলে নির্মাণকাজ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।”
সংগঠনটি সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খোরশেদ আলম, সাবেক সভাপতি আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও ইঞ্জিনিয়ার শেখ মোহাম্মদ রফিক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।