ভারত থেকে হিমায়িত গোমাংস আমদানির ‘উদ্যোগের’ বিরোধিতা করে ঢাকা মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি বলেছে, ওই সুযোগ দেওয়া হলে তার ফল ভালো হবে না।
Published : 18 Aug 2017, 06:41 PM
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে ‘অবাধে’ গরু আসছে অভিযোগ করে দেশীয় গরু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘কিছু অর্থলোভী ব্যবসায়ী’ ভারতীয় গরুর পাশাপাশি মাংস আমদানির ‘পাঁয়তারা’ করছে।
“ভারত থেকে মাংস এলে প্রথমে হয়ত কম দামে পাওয়া যাবে, কিন্তু পরে দামের অবস্থা হবে পেঁয়াজের মত। তখন তাদের হাতে সব চাবিকাঠি থাকবে।”
হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র ভারতের অনেক রাজ্যে গরু জবাই ও মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী গোমাংস রপ্তানিতে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয়।
আইন অনুযায়ী ভারত থেকে গরু আমদানির সুযোগ না থাকলেও মাংসের জন্য বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া গরুর একটি বড় অংশ ভারত থেকেই আসে।
গত জুলাই মাসে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই), ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (আইবিসিসিআই) এবং ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) উদ্যোগে একটি ব্যবসায়ী সম্মেলন হয়। সে সময়ই ভারত থেকে গোমাংস আমদানির উদ্যোগের বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে আসে।
ওই ব্যবসায়ী সম্মেলন উপস্থিত ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের কৃষি ও খাদ্যপণ্য বিভাগের প্রধান মধুপর্ণা ভৌমিক সে সময় বলেছিলেন, কিছু আইনি বাধার কারণে বাংলাদেশ সরাসরি গরু আমদানি করতে না পারলেও ভারত থেকে হিমায়িত গোমাংস আদমানিতে কোনো বাধা নেই। ভারত যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক বিলিয়ন ডলারের গোমাংস বিক্রি করে, সেহেতু বাংলাদেশও বড় বাজার হতে পারে।
আইবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ-সভাপতি দেওয়ান সুলতান আহমেদকে উদ্ধৃত করে জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে সে সময় বলা হয়েছিল, “১৭ কোটির মধ্যে দেশের ১৬ কোটি মানুষই গরুর মাংস খায়। তাই মাংসের চাহিদা পূরণে ভারত থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি করা হবে।”
ঢাকার মাংস ব্যবসায়ীদের নেতা রবিউল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেশে ঠিকমত গরু লালন পালন করতে পারলে দুই থেকে আড়াইশ টাকা কেজি দরে মাংস দেওয়া সম্ভব।
“আমরা খবর পেয়েছি, দুই দেশের কিছু ব্যবসায়ীর মধ্যে মাংস আমদানি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু তাতে এ দেশের খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, চামরা ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে, পশুবর্জ্য রপ্তানি থেকে সরকার বহু টাকা রাজস্ব হারাবে।”
গোমাংস আমদানির উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভারত থেকে গোমাংস আনার পক্ষে-বিপক্ষে কোনো অবস্থানই চেম্বারের নেই। আনা-না আনা ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্তের বিষয়। বাজারে যদি চাহিদা বা গ্রহণযোগ্যতা না থাকে, তাহলে কোনো পণ্য আমদানি করেই ব্যবসায়ীদের পোষাবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত থেকে গোমাংস আমদানির ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা থাকার কথা তার জানা নেই।
‘বানের পানির সঙ্গে গরু’
মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, “দেশে কোরবানির যোগ্য সোয়া লাখ পশু রয়েছে। কিন্তু যেভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় গরু আসছে। তাতে আমাদের দেশের গরু ব্যবসায়ীরা মার খাবে।”
উত্তরবঙ্গে ভারত সীমান্ত দিয়ে বন্যার পানির সঙ্গেও বাংলাদেশে গরু ঢুকছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কী পরিমাণ গরু ঢুকছে জানতে চাইলে রবিউল বলেন, “অন্য সময় দৈনিক পাঁচ থেকে ছয় হাজার ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আসার তথ্য আমাদের কাছে আছে। কিন্তু এখন সংখ্যা বলতে পারব না। অগণিত গরু ঈদ সামনে রেখে আনা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, গাবতলীর পশুর হাটের ইজাদারদার লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ থাকলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
হাটের ইজাদারদার ‘নিয়ম ভেঙে’ মাংস ব্যবসায়ীদের অফিস, গরু রাখার স্থান, বিশ্রামাগার দখল করে নিয়েছেন, গরু হাটের খাজনা দ্বিগুণ করে দিয়েছেন, এমনকি মসজিদ ও পাবলিক টয়লেটের রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপাতি হাজি আনোয়র হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ এবং পশুবর্জ্য রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন এ সংবাদ সম্মেলনে।
মাংস ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গাবতলীর হাটের ইজারাদার লুৎফর রহমান বিডিনিউজ টেয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেসব অভিযোগ ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন’।
“নিয়ম মেনেই আমি হাসিল আদায় করছি। গাবতলী হাট ঘিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নজরদারি রয়েছে। ফলে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। কতিপয় মাংস ব্যবসায়ী তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।”