Published : 23 Sep 2015, 12:27 AM
অ্যাঞ্জেলিনা সিরিয় শিশু দত্তক নিচ্ছেন আপনি তা কিভাবে নিচ্ছেন? ধরুন কদিন আগে আমাদের ঈমানি শক্তির বলে বলীয়ান ধর্মপ্রাণ মানুষেরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুললেন যে সানি লিয়নের বাংলাদেশে আসার বিরুদ্ধে। সেই লিয়নই যদি এখন ঘোষণা দেয় যে একজন হলেও আমি সিরিয় শিশু দত্তক নেব তার উত্তরেই বা তারা কি বলবেন?
ধর্ম যদি লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনাহুত উদবাস্ত করে তাহলে আর তা কল্যাণকর থাকে না। অথচ ধর্মের প্রয়োজনীয়তাই হল মানুষকে তার স্রষ্টার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানান এবং তার দেয়া অনুশাসন অনুযায়ী চলার নির্দেশ দেয়া। বলা বাহুল্য এই অনুশাসনই আজকের পৃথিবীর সভ্যতার মুলে।
ক'দিন আগে এই ব্লগেই " আসগর থেকে আয়লান এবং আরবরা আজো বর্বর" শিরোনামে একটি লেখায় প্রশ্ন রেখেছিলাম-"ইয়াজিদের যখন ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে মহানবীর দৌহিত্রকে পর্যন্ত তার শিশু সন্তান সহ হত্যা করতে বাঁধেনি আজকের আরব শাসকদের রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে গোটা আরব শ্মশান করতে বাধবে কেন?"
তার উত্তরে আমার একজন পাঠক মেল করেছিলেন। যেখানে তিনি পালটা প্রশ্ন করেছেন, "আয়লানের নাস্তিক বাবার কি প্রয়োজন ছিলো খিলাফাহ্'য় না গিয়ে অন্যদিকে যাওয়ার ? সিরিয়ার এসব নাস্তিকরা যখন ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে যাচ্ছিলো তখন ঐসব দেশের নাস্তিকেরা তাদেরকে লাথি মারছিল। এরা যদি প্রকৃত মুসলিম হতো তাহলে তারা খিলাফাহ্'য় প্রবেশ করতো"।
আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মত ভাষা খুঁজে পাইনি। আমি কোন গবেষক নই। ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞানের পরিধিও সীমিত। আর সে কারণেই ধর্মের মুলটাকে ধরেই যে টুকু চিন্তা ভাবনা করে থাকি। একজন মুসলমান হিসেবে আমি পবিত্র কুরআন এবং মহানবী (সঃ) এরা বিশুদ্ধ হাদিসের বাইরে গিয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণেই প্রস্তুত নই। মহানবী (সঃ) এর জীবনাচরণই আমার প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর বলে মনে হয়। কাজেই আমি তার জীবনাচরণ তার খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া। মানুষের প্রতি তার ভালবাসা, শ্রদ্ধাবোধ আর মহান আল্লাহ্র হুকুম প্রতিষ্ঠার যে পথ আমি তা বিস্ময়ভরে ভাবি। আর এ রকম জীবন্ত উদাহরণ থাকা স্বত্বেও যারা স্রেফ নিজেদের মত করে নিজেরা পথ তৈরি করে নেয় তাও এবার সেই ইসলামের নামে তখন সন্দেহ জাগাটাই স্বাভাবিক।
এ আমার প্রশ্নটা আসলে অন্যত্র আর তা হল ধরে নিচ্ছি তারা তাদের জাগতিক স্বার্থেই এ সব করে যাচ্ছে। ফলে খুব সহজেই নাটকীয়ভাবেই ফকির রাজা বনে যাচ্ছে, আমীর হচ্ছে পথের ভিখারি। এটা না হয় তারা তাদের স্বার্থে করছেন। কিন্তু যারা কোন জাগতিক লাভা লাভ ছাড়াই তাদের সমর্থন করছেন তারা কেন করছেন? তাদের সামনে কি মহা পবিত্র কুরআন নেই? তাদের সামনে কি মহানবী(সঃ) এর হাদিস নেই। তারা কি মহানবীর জীবনী পরেন নি? তাহলে তারা কেন এই পথটাকে সঠিক বলে মনে করছেন?
প্রতিটি মানুষ তার কর্মফলের জন্য দায়ী আর সে বিচারের ভারটিও স্রষ্টার। এটা এ জন্যেই বলছি কেননা মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরানে সুরা আল মুদাসসির এ আয়াত সাত থেকে এগারতে মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন।
(৭) এবং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে সবর করুন।
(৮) যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে;
(৯) সেদিন হবে কঠিন দিন,
(১০) কাফেরদের জন্যে এটা সহজ নয়।
(১১) যাকে আমি অনন্য করে সৃষ্টি করেছি, তাকে আমার হাতে ছেড়ে দিন।
সেখানে আপনি খিলাফাহর নাম করে মানুষকে দেশান্তরি করছেন। মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। স্রষ্টার আদেশকে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে নিজেই বিচারের ভার নিয়ে নিলেন?
ইসলামের কি খিলাফাহ প্রতিষ্ঠাই একমাত্র লক্ষ?
মহানবী (সঃ) যেখানে ইসলামকে বলেছেন শান্তির ধর্ম । তিনি যেখানে নিজে আহত হয়েও শান্তির পথ থেকে একচুল নড়েনই আপনি সেখানে সদম্ভে ঘোষণা করছেন ইসলাম শান্তির ধর্ম নয় যুদ্ধের ধর্ম! আর এরপরেও এটা বিশ্বাস করতে হবে যে আপনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার লড়াই করছেন?
আজ যে মানুষগুলো বিনা কারণে উদবাস্ত হল স্বজাতির নিগ্রহের ফলে আজ যারা ভিন্ন জাতির মানুষের কাছে আশ্রয় প্রার্থী হল তাদের কাছে আপনার অবস্থান আর আশ্রয় দাতার অবস্থানে দূরত্ব আকাশ পাতাল। আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন এর মধ্যে আপনার অবস্থান কোথায়।
মানুষের মধ্যে যদি মনুষ্যত্বই না থাকে তার আবার ধার্মিকতা কি? আগে তো মানুষ তারপরেই না ধর্মের অনুশাসন। মানুষের জন্যই ধর্মের অবতারণা অন্য জীবের জন্য নয়। আর সে মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্য তো মনুষ্যত্ব।
আপনার পবিত্র ভূমিতে আপনি অপবিত্র মানুষের আগমন প্রতিহত করবেন, ভাল কথা কিন্তু আপনি নিজে পবিত্র তো? পবিত্রতার কতটা শরীরের আর কতটা মননের সেটাও বিবেচ্য বিষয়। ঠিক যেমন ধর্ম কতটা বাহ্যিক আর কতটা অন্তর্গত সেটাই মুল বিবেচ্য।