আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির চিন্তা করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
Published : 19 Nov 2014, 09:41 PM
প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের তথ্য ফাঁসের প্রেক্ষাপটে বুধবার নিজের দপ্তরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এই পরিকল্পনার কথা জানান।
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ১৬ জন কর্মকর্তা চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধার ঘোষণা না দিয়েও সনদ নিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নিচ্ছে- জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, “প্রধান সমস্যা হল, অনেকে মুক্তিযুদ্ধ না করেও সনদ নিয়েছে। হয়ত মিথ্যা বা অসত্য কাগজ জমা দিয়ে সনদ নিয়েছে।
“প্রথম দায়িত্ব কারা ভুল তথ্য দিয়ে সনদ নিয়েছে তাদের আগে চিহ্নিত করা। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করার পর তাদের সনদ বাতিল করা হবে, এজন্য তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে।”
গত সেপ্টেম্বরে পাঁচ সচিবের জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদের প্রমাণ মিললে তা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। এরপর তাদের চারজনের সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে দুজন স্বেচ্ছাঅবসরেও গেছেন সম্প্রতি, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে একজনকে।
এরপর জাল সনদ নেওয়া ১৬ কর্মকর্তার নাম একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে, তবে তাদের বিষয়ে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগই সাংবাদিকদের দেননি মন্ত্রী।
এরা হলেন- কৃষিসচিব এস এম নাজমুল ইসলাম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন, পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া শফিকুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব কাজী আখতার হোসেন, ওএসডি সচিব নুরুল হক।
সাবেক জনপ্রশাসন সচিব এ এস এম আলী কবীর, সাবেক সচিব ফণীভূষণ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব শেখ মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ফিরোজ কিবরিয়া, সাবেক অতিরিক্ত সচিব খলিলুর রহমানের নামও এতে রয়েছে।
নাম এসেছে বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস, রাজউক চেয়ারম্যান জি এম জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া, পিএসসির সদস্য মাঈন উদ্দিন খোন্দকার, ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম আজিজুল হক, ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাহাব উল্লাহ, ক্যাডার বহির্ভূত সাবেক কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হোসেনের।
যারা অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছে, তাদের সনদ বাতিলের পাশাপাশি এই জালিয়াতিতে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজও চলছে বলে জানান মন্ত্রী।
ভুয়া সনদ নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় চার সচিবের বিষয়ে মন্ত্রণালয় প্রতারণা মামলা করবে কি না- জানতে তাইলে তিনি বলেন, “কোন সাইডে আগে যাব? অপেক্ষা করছি, তারা মামলায় যায় কি না। তারা বাতিল করার বিষয়ে রিট করতে পারেন। এই সময়ক্ষেপণ না করে অন্য ব্যবস্থায় যাব।”
“এসব মামলায় নতুন আইনের কথা ভাবছি, দ্রুত ফলাফলের জন্য ট্রাইব্যুনাল করা দরকার। সরকারি জমি উদ্ধার, ভুয়া সনদ ইত্যাদি বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল ছাড়া স্বাভাবিক আইনে দ্রুত ফলাফল হয় না,” বলেন মন্ত্রী।
বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে জরুরি রাষ্ট্রীয় কাজ হিসেবে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পক্ষপাতি তিনি।
কবে নাগাদ তা হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “আইন প্রণয়নের ব্যাপার আছে, কী পর্যায়ে যায়, কত সংখ্যা হয়, ১০/২০ জনের জন্য তা হবে না। সংখ্যাধিক্যের ওপর নির্ভর করবে।”
৬০ বা ৭০ হাজার বা লাখ খানেক ভুয়া সনদধারী হতে পারে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর দেখে মন্ত্রীর মনে হচ্ছে।
“অনেক সংখ্যা হয়ে গেলে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে, চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করার পরই বিচারের কাজের দিকে যাব।”
এই পর্যন্ত প্রায় তিন হাজারের ওপর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছে বলে জানান মোজাম্মেল হক।