ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধনের মামলার অভিযোগপত্রে অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
Published : 23 Sep 2014, 03:27 PM
প্রায় আড়াই বছর আগে দায়ের করা এই মামলার অভিযোগপত্র থেকে এজাহারভুক্ত আরো তিন আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগেই কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে অভিযোগপত্র অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হলেও মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হলো।
“দুই/একদিনের মধ্যেই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হবে।”
অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি তিন আসামি হলেন- তৎকালীন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনসুর আহম্মেদ, ডিসিসির ফেইস প্রজেক্টের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান ও ডিসিসির অঞ্চল-৮ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আমিনুর রহমান চৌধুরী।
অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন- ডিসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তৎকালীন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নূরুল হক, ডিসিসির সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সেহাবউল্লাহ, এবং এম আর ট্রেডিংয়ের মালিক মো. মিজানুর রহমান।
২০১২ সালের ২৯ মার্চ সাবেক মেয়র খোকাসহ ওই ছয়জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ৮২৭ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ এনে শাহবাগ থানায় এই মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ। পরে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।
দিলকুশায় একটি ভবন নির্মাণে ‘অবহেলার’ মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছে খোকাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে। বিএনপি নেতা খোকা মেয়র থাকাকালীন এই ঘটনা ঘটে বলে কমিশন জানায়।
দিলকুশায় বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজিএমসি) কাছ থেকে বিনামূল্যে পাওয়া ৩৭ কাঠা জমির ওপর নিজস্ব অর্থায়নে ২৫ তলা কার পার্কিং কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সময় এই ‘অনিয়ম’ হয় বলে দুদকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
ওই ভবনের প্রথম পর্যায়ে ৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণের জন্য মেসার্স এম আর ট্রেডিংকে ঠিকাদার নিয়োগ করে ডিসিসি। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩ তলা এবং তৃতীয় পর্যায়ে কার পার্কিংসহ আরো ২০টি তলা নির্মাণের জন্যও তারা কাজ পায়।
মামলায় বলা হয়, তবে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শতাংশ এবং ডিসিসির ২৫ শতাংশ শেয়ার বণ্টনের শর্ত দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কম হিসেবে উল্লেখ করে নিজস্ব অর্থায়নে বা সেলামি গ্রহণ করে নির্মাণের সুপারিশ করে।
ওই সুপারিশ ২০০৮ সালের ৯ জুন মেয়র খোকা অনুমোদন করেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এম আর ট্রেডিং হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে বিষয়টি শুনানি না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে আদালত।
কারণ দর্শানো ছাড়া এই ধরনের দরপত্র বাতিলের ক্ষমতা থাকার পরও ডিসিসি প্রায় এক বছর কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি বলে দুদক প্রমাণ পেয়েছে।
এরপর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত পুনর্মূল্যায়ন কমিটি ডিসিসিকে ৩০ শতাংশ এবং নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে ৭০ শতাংশ শেয়ার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর এম আর ট্রেডিং তাদের মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। পাশাপাশি এসব সিদ্ধান্ত রেখে ৯০ দিনের মধ্যে চুক্তি করার জন্য সোলেনামা (উভয় পক্ষের সমঝোতা) করা হয়। কিন্তু ডিসিসি ৯০ দিনের মধ্যে কোনো চুক্তি করতে পারেনি। চুক্তিটি হয় আরো ১ মাস পর।
এরপর নির্মাণ প্রতিষ্ঠান নিজস্ব টাকা ব্যয় না করেই সেলামির মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে নির্মাণ কাজ শেষ করে ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয়, যে পদ্ধতিতে ডিসিসি নিজেই ওই নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারত বলে দুদক বলছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ডিসিসি তা না করে ওই সম্পত্তির (ভবন) বাজার মূল্য হিসাবে সরকারের ৮২৭ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে।