জেএমবির একাংশের ভারপ্রাপ্ত আমির তাসনিম ও তার সহযোগীদের দেশের শীর্ষস্থানীয় কোনো ব্যক্তি বা দলের ওপর হামলা চালিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার পাওয়ার পরিকল্পনা ছিলে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
Published : 21 Sep 2014, 08:31 PM
এর মধ্য দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং অন্যান্য উগ্রপন্থী গোষ্ঠী ও দাতাদের নজরে আসতে চেয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
গ্রেপ্তার জেএমবির একাংশের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য মিলেছে বলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
“তারা আইএসের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করছিল। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এনজিও ও দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিল। তবে যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে বড় ধরনের কোনো হত্যাকাণ্ড বা নাশকতা করলেই সেই সব দাতাদের কাছে তারা যেতে পারতো।
“কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা দলকে হামলা করতে পরলে রাতারাতি বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার হবে এবং তাদের (জেএমবি) যোগ্যতার প্রমাণ হবে- এ চিন্তায় বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তাদের।”
তবে কোন কোন ব্যক্তি বা দলকে হামলা করার পরিকল্পনা হয়েছিল তা স্পষ্ট করেননি গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল।
তবে সেই সব ব্যক্তির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর তুরাগের আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন পার্কিং এলাকা থেকে তাসনিমসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অন্য ছয়জন হলেন- মো. নাঈম আলী (২৮), মো. সিকান্দার আলী ওরফে নকি (২৫), মাহমুদ ইবনে বাশার (২৩), মো. মাসুম বিল্লাহ (২৬), ফুয়াদ হাসান (১৮) ও আলী আহমদ (২৪)।
গ্রেপ্তারের পর জেএমবি সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ।
এই সাতজন গ্রেপ্তার হওয়ায় জেএমবির ফের সংগঠিত হওয়ার তৎপরতা কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল বলেন, “একাধিক জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। হরকাতুল জিহাদ, আল ইসলামিয়া বাংলাদেশ, আনসারুল্লার বাংলা টিম-এরা একই প্লাটফর্মে চলে এসেছে। এদের তৎপরতা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে।”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক বোমা হামলা চালিয়ে সবার নজরে আসে উগ্রবাদী সংগঠন জেএমবি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পশ্চিম ও দক্ষিণপশ্চিমের জেলাগুলোতে সর্বহারা পার্টি ও পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির মতো চরমপন্থী সংগঠনগুলোকে দমাতে জেএমবিকে ব্যবহার করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো, যার মধ্য দিয়ে এ জঙ্গি গোষ্ঠী শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
২০০৬ সালের ২ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেপ্তার হন জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান। এর চার দিনের মাথায় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে আরেক নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
২০০৫ সালে ঝালকাঠিতে জেলার সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করার মামলায় ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ এই দুজনসহ ছয় শীর্ষ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়।
এরপর থেকে জেএমবির তৎপরতা ততোটা দেখা না গেলেও গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংয়ের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে বোমা ফাটিয়ে ও গুলি চালিয়ে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে আলোচনায় আসে গোষ্ঠীটি।