বরিশালের বাকেরগঞ্জে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশু গ্রেপ্তারের মামলা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে সাত পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরাখাস্তের আদেশ দেওয়া হাই কোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
Published : 20 Jun 2021, 08:03 PM
রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত এই আদেশ দিয়েছে।
গত ১৩ জুন হাই কোর্টের রায়ে বাকেরগঞ্জ থানার ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা- ওসিসহ সাত পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবার প্রবেশন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং বিচারিক হাকিমের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এই রায় স্থগিত চেয়ে বৃহস্পতিবার ওসি মো. আবুল কালাম ও বাকেরগঞ্জ থানার শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা এস আই বশির উদ্দিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন।
আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের এই আদালত রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে আগামী ১ আগস্ট আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রেখেছেন বলে জানান আইনজীবী নোমান হোসাইন তালুকদার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই সময়ের মধ্যে আবেদনকারীদের নিয়মিত লিভটু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেছেন।”
আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন ফকির। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী নোমান।
শিশু অধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও আইনি সহায়তাকারী সংগঠন ব্লাস্টের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আব্দুল হালিম। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল।
আইনজীবী হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকমকে বলেন, “দুই পুলিশ সদস্যের আবেদনে রায়ের পুরো নির্দেশনাই (অপারেটিভ পার্ট) স্থগিত করা হয়েছে।
“এক কথায় গোটা রায়টাই স্থগিত করা হয়েছে। আমরা আরজি জানিয়েছিলাম দুই জনের ক্ষেত্রে রায়ের নির্দেশনা স্থগিত করার জন্য।”
গত ১৩ জুন বরিশালের বাকেরগঞ্জে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশু গ্রেপ্তারের মামলা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে এই রায় দেওয়া হয়।
গত বছর ধর্ষণের অভিযোগে ৯ থেকে ১১ বছর বয়সী এই চার শিশুর বিরুদ্ধে নেওয়া ফৌজদারি ব্যবস্থার বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে এই রায় দিয়েছিল বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।
গত বৃহস্পতিবার এই রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন ওসি আবুল কালাম ও বাকেরগঞ্জ থানার শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা এস আই বশির উদ্দিন।
আবুল কালাম এখন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
বাকেরগঞ্জে গত বছর ৬ অক্টোবর ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তার বাবা এই চার শিশুকে আসামি করে এই মামলা করেন। ওই দিনই চার শিশুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরদিন ৭ অক্টোবর বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম এনায়েত উল্লাহ এক আদেশে চার শিশুকে যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেয়।
এ নিয়ে একটি টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদন ৮ অক্টোবর রাতে নজরে আসার পর তাৎক্ষণিকভাবে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।
আদেশে ওই রাতেই চার শিশুর জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বরিশালের শিশু আদালতের বিচারককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পাশপাশি ওই সময় চার শিশুকে তাদের অভিভবাকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।
এরপর এই মামলায় পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করে শিশু অধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও আইনি সহায়তাকারী সংগঠন ব্লাস্ট।
আদালত দুটি সংগঠনকে পক্ষভুক্ত করে রুল শুনানির পর রায় দেয় হাই কোর্ট।
১৩ জুন শিশুদের নামে করা মামলাটি অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া রায়ে হাই কোর্ট আইন অমান্য করে শিশুদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা (ধর্ষণের মামলা দেওয়া) গ্রহণে যুক্ত বাকেরগঞ্জ থানার ওসি, এক এসআই এবং শিশুদের গ্রেপ্তারের সঙ্গে যুক্ত আরও চার পুলিশ সদস্যসহ মোট ছয় পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে এই নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।
একই সঙ্গে চার শিশুর ক্ষেত্রে এখতিয়ার বহির্ভূত আদেশ দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করতে আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে দেওয়ানি বিচারিক ক্ষমতায় যুক্ত করতেও নির্দেশনা আসে রায়ে।
তাছাড়া আইন অনুযায়ী যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় বরিশালের সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সমাজসেবা অধিপ্তরকে রায়ে নির্দেশ দেয় আদালত।
আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে মামলাটি চলমান (কন্টিনিউয়াস মেন্ডামাস) রাখা হয়।