বাকেরগঞ্জের চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা স্থগিত

বরিশালের বাকেরগঞ্জে ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার নাবালকের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 12:32 PM
Updated : 11 Oct 2020, 12:32 PM

সেই সঙ্গে ওই চার শিশু এবং তাদের পরিবারকে কঠোরভাবে নিরাপত্তা দিতে বাকেরগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ওই চার শিশুর বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আইনের বত্যয় হয়েছিল কি না, গ্রেপ্তারের পর এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে তাদের যশোরের ‘শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল কিনা- সে বিষয়ে রায়ের জন্য আগামী ২২ নভেম্বর দিন রেখেছে আদালত।  

চার শিশু ও তাদের অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।

আদালতের নির্দেশে চার শিশু ও তাদের অভিভাবকরা রোববার সকালে হাই কোর্টে এসে হাজির হন। পরে সংশ্লিষ্ট হাই কোর্ট বেঞ্চ সিদ্ধান্ত নেয়, ভার্চুয়ালি নয়, এজলাশে বসে বিচারকরা তাদের কথা শুনবেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী।

এজলাশে বসার পর বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক চার শিশু, তাদের অভিভাবক, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সাংবাদিকরা বাদে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বললে আনজীবীসহ অন্যরা বেরিয়ে যান। এরপর আদালত এক এক করে প্রত্যেকের কথা শোনে।

প্রথমে আদালত চার শিশুকে খাসকমারায় নিয়ে তাদের কথা শোনে। বেলা ১১টা ৫০ মিনিট থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চার শিশুর কথা শোনেন দুই বিচারক।

পরে এজলাসে বসে দুই বিচারক এক এক করে চার শিশুর অভিভাবক, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ, বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম, বরিশালের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ ও বোকেরগঞ্জ থানার শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা এস আই বশির উদ্দিন খানের বক্তব্য শোনেন ও তা রেকর্ড করেন।

আইন অনুযায়ী মামলা না নেওয়া, শিশুদের গ্রেপ্তার, থানায় শিশু বিষয়ক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন না করা ও এখতিয়ার বহির্ভূত আদেশ দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট হাকিম ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ভর্ৎসনা করে হাই কোর্ট।

ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বাকেরগঞ্জের ওই চার শিশুকে আসামি করে গত ৬ অক্টোবর মামলা করা হয়। ১০-১১ বছর বয়সী ওই ৪ শিশুকে সেদিনই গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরদিন বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম এনায়েত উল্লাহর আদেশে চার শিশুকে যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে এ নিয়ে একটি টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদন নজরে এলে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাই কোর্ট বেঞ্চ তাৎক্ষণিকভাবে ওই চার শিশুর জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বরিশালের শিশু আদালতের বিচারককে নির্দেশ দেয়। পাশপাশি চার শিশুকে রাতের মধ্যেই তাদের অভিভবাকের কাছে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার ওসি এবং জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম এনায়েত উল্লাহকে ১১ অক্টোবর সশরীরে হাই কোর্টে হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি ওই চার শিশু ও তাদের অভিভাবকদেরও হাই কোর্টে উপস্থিত হতে বলা হয়।

হাই কোর্টের নির্দেশের পর সেই রাতেই জামিন নিষ্পত্তি করে যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরদিন সকালে তাদের পৌঁছে দেন বাবা-মায়ের কাছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত এসব নির্দেশনার পাশাপাশি উচ্চ আদালত সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের প্রতি রুলও জারি করেছিল। মামলার এজাহারে যে চার শিশুকে অসামি করা হয়েছে, কেন তাদের এই আদালতের সামনে আনা হবে না এবং এই শিশুদের বিরুদ্ধে মামলাসহ যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে।”

ওই রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চার শিশুর বিরুদ্ধে করা ধর্ষণের মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান এ আইন কর্কর্তা।