করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে ঈদযাত্রা ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করার পরও থামেনি শিমুলিয়া ঘাটমুখী জনস্রোত।
Published : 11 May 2021, 11:35 AM
মঙ্গলবার সরেজিমেনে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পুলিশ-বিজিবির রাস্তায় থাকলেও চেকপোস্টগুলোর দুই পাশেই গাড়ির জটলা। বাধা পাওয়ামাত্রই মানুষ গাড়ি ছেড়ে হেঁটেই চেকপোস্ট পেরিয়ে ওপাশের অপেক্ষমাণ গাড়িতে গিয়ে উঠছে।
সকাল সাড়ে ৭টায় ইকুরিয়া এলাকায় দেখা হল ব্যাগ নিয়ে হেঁটে চলা চার তরুণের একটি দলের সঙ্গে। তারা জানালেন, সোমবার সারা রাত ট্রাকে চেপে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন তারা, যাবেন মাদারীপুর।
তাদের মধ্যে একজন আব্দুল ওয়াহাব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্রাকে এক হাজার ৯০০ টাকা ভাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নেমেছেন। এরপর কোনো যানবাহন না পেয়ে ব্যাগ নিয়ে হেঁটেই পোস্তগোলা সেতু পার হয়েছেন।
ওয়াহাব বললেন, “এক হাজার ৯০০ টাকা দিয়া ট্রাকে আইসি, এখন আরও ১০০ টাকা বাড়তি লাগব। বাড়িত যাইতে শেষ পর্যন্ত কত টাকা খরচ হয় আল্লাই জানে।”
সিরাজদিখানের উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম আধ ভেজা গায়ে ছোটাছুটি করছেন। তিনি জানালেন, ভোররাত তিনটা থেকে এখানে কাজ করছেন তারা। ব্যক্তিগত গাড়ি ও যাত্রীবাহী অন্যান্য যানবাহন আটকে দেওয়া হচ্ছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে ঈদকে সামনে রেখে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল ঠেকাতে শনিবার রাতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
বিআইডব্লিউটিসি ওই দিন ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেও শত শত মানুষের ঘাটে আসা ঠেকাতে পারছিল না। নাছোড়বান্দা মানুষ ফেরিতে উঠে পড়লে এক পর্যায়ে ফেরি চলাচল শুরু করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে ৫টি গাড়ির একটি বহর টোল প্লাজা পার হয়। সেখানে একটি গাড়িতে পতাকা দেখা যায়।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কাজে যে ‘ডাম্পট্রাকগুলো’ ব্যবহৃত হতো সেগুলো এখন যাত্রী বহন করছে। ট্রাকগুলোর চালক ও সহকারীরা ডাকাডাকি করছেন; কেউ চাইছেন ১০০ কারও দাবি ২০০।
২০০ টাকা কেন চাইছেন জানতে চাইলে পিকআপ ট্রাক চালক মোহাম্মদ সোহেল যাত্রীদের বলেন, মহাসড়ক হয়ে গেলে ঘাটের ৫ কিলোমিটার আগেই নামিয়ে দেবে পুলিশ। তিনি গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে একেবারে ঘাট পর্যন্ত নিয়ে যাবেন। সেজন্যই তিনি ২০০ টাকা দাবি করছেন।
রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চিকিৎসা শেষে ফিরতে গিয়ে পড়েছেন বিপদে। বৃদ্ধ বাবা গাদাগাদি করে যেতে পারবেন না। কিন্তু অটোরিকশা গুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর দেখা গেল একটি ট্রাকে প্রথমে রাসেল উঠলেন, পরে তার বাবাকে টেনেহিঁচড়ে তোলা হলো। কোলের শিশু নিয়ে নারীরা উঠেন সেখানে।
মোটরসাইকেলগুলোতে ব্যাগ বস্তার সঙ্গে ঝুলছে থালা-বাসন, বটি, শিশুদের রঙিন খেলনা, পানির বোতল, টিফিন ক্যারিয়ারও। দেখে বোঝা যাচ্ছে, এক একটি পরিবার চলছে ঈদ করতে।
টোল প্লাজা পেরিয়ে মানুষের স্রোত এই বাজার থেকে ট্রাক এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা উঠছে। এর মাঝেই পুলিশ এসে কয়েকটি গাড়ির চাবি নিয়ে গেল। রাস্তার উপর গাড়িগুলো আটকে পড়ায় সামনে-পিছে বিশাল জটলা তৈরি হয়ে গেছে। চলছে হইচই, চিৎকার, ঠেলাঠেলি।