ঘাতকের বুলেটে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হারানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতিমদের উদ্দেশে বলেছেন, তারা যেন কখনও নিজেদের অসহায় মনে না করে, কারণ তিনি সব সময় তাদের পাশেই আছেন।
Published : 14 Aug 2020, 03:20 PM
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৫০ হাজার বার কোরআন খতম এবং জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সমাজসেবা অধিদপ্তরে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তোমরা মনে রাখবে… তোমরা একেবারে একা না। আমি আছি তোমাদের পাশে। আমি, আমার ছোটবোন সব সময় তোমাদের কথা চিন্তা করি।”
স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
তার পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও সেদিন ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি।
এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ এবং আগামী বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ পালন করছে মুজিববর্ষ হিসেবে।
সেই উপলক্ষে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবারের এতিম শিশু এবং ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত ৩৯২৮টি প্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক এতিম শিশুদের মাধ্যমে এই এক বছরে এক লক্ষ বার কোরআন খতমের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ১৫ অগাস্টের মধ্যে ৫০ হাজার বার কোরআন খতম হয়ে গেছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, “তোমরা ছোটবেলা থেকে তোমাদের বাবা-মাকে দেখতে পাওনি। অনেকে পিতাকে পাওনি, বা মাকে পাওনি। আবার অনেকে কাউকেই পাওনি। কারো আদর, স্নেহ, ভালোবাসা সেটা যে কি জিনিস, সেটা তোমরা উপলব্ধি করতেই পারোনি।”
নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্মদিন ঘটা করে পালন না করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কিন্তু বড় করে কোনো দাওয়াত খাওয়াই না,পার্টিও করি না। আমরা খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মতন যারা অসহায় শিশু আছে, সেখানে আমরা চেষ্টা করি জন্মদিনের উৎসবটা তোমাদের মত শিশুদের নিয়ে করতে। সেখানে আমরা যতটুক পারি, বেছে বেছে মিষ্টি পাঠাই, খাবার পাঠাই।
“কারণ আমরা উপলব্ধি করি, বাইরে কোনো পার্টি করে তো লাভ নেই। আমরা যদি এতিমদের মুখে কিছু খাবার তুলে দিতে পারি, সেটাই সব থেকে বড়। এবং সেভাবে আমরা করে যাচ্ছি। আমার মাও তাই করতেন। আমাদের সকলের জন্মদিনে তিনি এতিমখানাতেই খাবার পাঠাতেন এবং সাহায্য পাঠাতেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এইটুকুই বলব, তোমরা এতিম না। তোমরা অসহায় না। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার সরকারে আসার পর থেকেই আমরা সকলের পাশে আছি। আমি যতক্ষণ আছি, তোমাদের পাশেই থাকব।… কারণ তোমরাই আমার আপনজন, সব থেকে আপন।”
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারি শিশু পরিবারের শিশুরা কোরআন খতম দেওয়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, “তোমাদের জন্য আমি দোয়া করি। তোমাদের জীবন সুন্দর হোক, সফল হোক। তোমাদের মধ্যে অনেক মেধাবী আছ, যারা একদিন এই দেশের জন্য অনেক বড় কাজ করতে পারবে, মানুষের জন্য করতে পারবে।”
সেইভাবেই নিজেদের গড়ে তোলার উপদেশ দিয়ে শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা নিয়ে কাজ করবে, কারণ সততা একটা বড় শক্তি আর দেশের জন্য তোমরা যদি নিজেদের তৈরি কর, তাহলে তুমি দেখবে বড় হয়ে বহু এতিমকে তুমি সাহায্য করতে পারবে, তাদের পাশে দাঁড়াতে পারবে, তাদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত রচনা করতে পারবে।”
এতিম ও আপনহারা মানুষদের কল্যাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
শিশুদের তিনি বলেন, “তোমরা মন দিয়ে পড়াশোনা কর, নিজের পায়ে দাঁড়াও। বাবা-মা তো আর চিরদিন থাকে না। আর কার কখন… তারপরও নিজেদেরকে দাঁড়াতে হবে।”
অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আর সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রান্তে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ উদ্দিন খান খসরু এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জয়নুল বারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।