চার বছর আগে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রতি বর্ষপূর্তিতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির সেই বাড়িটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হলেও এবার করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সেই ব্যবস্থা থাকছে না।
Published : 30 Jun 2020, 09:07 PM
কেবল বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও সংশ্লিষ্টদের জন্য গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িটি বুধবার চতুর্থ বার্ষিকীতে খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাড়িটির মালিক সাদাত মেহেদী।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতটি দুঃসহ হয়ে এসেছিল হলি আর্টিজান বেকারির কর্মীদের জন্য, যা বেদনায়ক একটি অধ্যায় গোটা বাংলাদেশের জন্যও।
দেশি-বিদেশি অতিথিদের নিয়ে ওই সন্ধ্যায় যখন সরব গুলশান লেক লাগোয়া হলি আর্টিজান বেকারি, তখন সশস্ত্র পাঁচ জঙ্গি ঢুকে পড়ে সেখানে, অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে তারা। খবর সেখানে ঢুকতে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
তারপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেষ্টনির মধ্যে রাতভর চলে তরুণ জঙ্গিদের তাণ্ডব। ভোরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে তারা মারা পড়ার পর দেখা যায়, রাতে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে গলাকেটে হত্যা করেছে জঙ্গিরা।
এরপর প্রতিবছর ১ জুলাই নিহতদের প্রতি সম্মান জানানোর সুবিধার্থে সর্বসাধারণের জন্য বাড়িটি খুলে দেন মালিক। বার্ষিকীতে শত শত দেশি-বিদেশি এই বাড়িতে ভিড় করেন।
মঙ্গলবার সাদাত মেহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে এবার অন্য বছরগুলোর মত নিহতদের সম্মান জানানোর ব্যবস্থা থাকছে না। মহামারীর ঝুঁকি থাকায় বাইরের লোক সমাগমের ব্যবস্থা এবার রাখা যাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিহতদের সম্মান জানাতে পারবেন। কেবল তাদের জন্য এই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।”
২০১৬ সালের ১ জুলাই জঙ্গি হামলার পর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আলামত হিসেবে কয়েক মাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল বাড়িটি। এর পাঁচ মাস পর নভেম্বরে বাড়িটি বুঝিয়ে দেওয়া হয় এর মালিক সামিরা আহমেদ ও সাদাত মেহেদীকে।
১৯৭৯ সালে ‘আবাসিক ভবন কাম ক্লিনিক গড়ে তোলার জন্য’ ডা. সুরাইয়া জাবিনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বাড়িটি। ১৯৮২ সালে ওই প্লটের একপাশে গড়ে তোলা হয় লেকভিউ ক্লিনিক।
সুরাইয়ার মৃত্যুর পর প্লটের মালিক হন তার দুই মেয়ে সামিরা ও সারা আহমেদ। তাদের দুটি প্লট এক করে উত্তর পাশের দোতলা ভবনটিতে ২০১৪ সালে গড়ে তোলা হয় হলি আর্টিজান বেকারি, যা পরিচালানায় ছিলেন সাদাত মেহেদী ও তার এক বন্ধু। আর দক্ষিণ পাশে থাকে লেকভিউ ক্লিনিকটি।
মঙ্গলবার তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে এই বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করছেন তারা।
বাড়িটির উত্তর পাশে গড়ে তোলা হয়েছিল হলি আর্টিজান বেকারি; আর দক্ষিণপাশে লেকভিউ ক্লিনিক। ক্লিনিকটি এখনও চালু আছে। আর হামলার ছয় মাস পর গুলশান এভিনিউর র্যাংগস আর্কেডের দ্বিতীয় তলায় নতুন পরিসরে চালু হয় হলি আর্টিজান বেকারি। সেখানে ২০ জনের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাড়ির একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, “হামলার পর সেখান থেকে বেকারি সরিয়ে নেওয়া হয়। পরের বছর থেকে বাড়িতে মালিক নিজেই বসবাস করছেন। বাইরের লোকজন সেখানে ইচ্ছে করলেই যেতে পারেন না।”
জঙ্গি হামলার চার বছর পর এখনও অনেকেই বাড়িটি দেখতে আসেন জানিয়ে ওই নিরাপত্তাকর্মী বলেন, “কিন্তু তারা সবাই বাইরে থেকে দেখে চলে যায়। কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়া হয় না।”