হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউছুফ হারুনের বিরুদ্ধে ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
Published : 22 Sep 2019, 02:30 PM
রোববার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে লিগ্যাল এইড অ্যান্ড হিউম্যান ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংগঠনটির উপদেষ্টা সুফি সাগর শামস সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিলে হঠাৎ একদল লোক মিলনায়তনে ঢুকে ফেস্টুন হাতে আয়োজকদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করে।
তাদের ফেস্টুনে লেখা ছিল- ‘প্রতারক সুফির বিচার চাই’, ‘সুফি সাগরের ফাঁসি চাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় প্রতারক সুফির ঠাঁই নাই’। এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকদের ‘প্রতারক-চিটার’ আখ্যায়িত করা হচ্ছিল তাদের স্লোগানে।
সংবাদ সম্মেলনে থাকা সাগর শামসের লোকজন এ সময় ফেস্টুনধারীদের পরিচয় জানতে চান এবং তাদেরকে সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করতে বলেন।
এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে ফেস্টুনধারীদের একজনকে ধরে সাগর শামসের লোকজন পিটুনি দেয়। অন্যারা তখন তাকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে কিছুক্ষণ মারামারি চলে।
সাংবাদিকরা ফেস্টুনধারীদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা কোনো কথা না বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সাগর শামস পরে সংবাদ সম্মেলনে ইউছুফ হারুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে তার বিচার দাবি করেন।
তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইউছুফ হারুন। তিনি হারিছ কমান্ডারের মাধ্যমে রাজাকার বাহিনীতে যোন দান করেন।”
সাগর শামস বলেন, “স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও ইউছুফ হারুনের মত রাঘব-বোয়ালদের নাম রাজাকারের তালিকায় না আসাটা দুঃখজনক।”
ইউছুফ হারুন হামদর্দের একজন বিক্রয়কর্মী থেকে প্রতিষ্ঠানটির এমডি হয়েছেন মন্তব্য করে সাগর শামস বলেন, “সরকারের অনুমোদন ছাড়াই সরকারি প্রতিষ্ঠান বিজি প্রেসকে বিভ্রান্ত করে একটি গেজেট প্রকাশ করে নিজেকে হামদর্দের আজীবন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চিফ মুতাওয়াল্লি এবং তার অবর্তমানে তার উত্তসূরিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন।”
যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে ইউছুফ হারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকও তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে বলে সাগর শামস জানান।
হামদর্দের এমডি মো. ইউছুফ হারুণ ভূইয়ার বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়, তিনি ‘স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে’ নিজ সন্তানদের বেশি বেতন দিয়ে পরিচালক পদে চাকরি দিয়েছেন এবং ‘অনিয়মের’ আশ্রয় নিয়ে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির নামে ‘অর্থ আত্মসাতসহ’ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ওয়াকফ আইনের ‘তোয়াক্কা না করে’ হামদর্দে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন হাকিম ইউছুফ। তিনি নিজে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে আছেন, পরিচালক পদে আছেন তার তিন সন্তান।
“গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পরিবারের দখলে থাকায় হাকিম ইউছুফ টেন্ডার ছাড়াই অথবা গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার কাঁচামাল আমদানি, মেশিন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়, জমি ক্রয়, কনস্ট্রাকশন, কেমিকেল ক্রয়, ক্যালেন্ডার ও ডায়রি প্রিন্টিং ও প্রকাশনা খাতে দুর্নীতি করছেন।
এসব অভিযোগে গত ২৯ অগাস্ট ইউছুফ হারুন ভূইয়াকে দুদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান এ অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন। এ অনুসন্ধানের তদারক করছেন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
ইউছুফ হারুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক ছানাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ইউছুফ হারুণের এলাকা লক্ষ্মীপুরে একাত্তরের গণহত্যার বিষয়ে একটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্তে যাদের নাম উঠে আসবে তাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।"
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউছুফ হারুনের অফিসের নম্বরে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। হামদর্দের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাজী মনসুরের ফোন নম্বও বন্ধ পাওয়া যায়।