গ্রাহকদের আমানতের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
Published : 16 Jul 2019, 11:07 PM
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
দুই দফায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই লেয়াকত উল্লাহ মঙ্গলবার তাজুল ইসলামকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে রাখার আবেদন করেন। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হাই মামুন জামিনের আবেদন করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ১১ জুলাই এই আসামির দুই দিন এবং ১৪ জুলাই একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
গত ১১ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির অরগানাইজড ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) শারমিন জাহান বলেন, প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৫ মে বংশাল থানায় আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট জানায়, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৪ সালে। তাজুল ইসলাম ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ১৯৮৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন। ২০০৫ সাল থেকে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের সাথে যুক্ত হন তিনি।
সমবায় অধিদপ্তর থেকে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের কার্যক্রম সমগ্র বাংলাদেশে ২৬টি শাখার অনুমোদন থাকলেও তারা ৮০টি শাখা পরিচালনা করে ১১,৪২৫ জন গ্রাহকের কাছ থেকে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা আমানত গ্রহণ করে আত্মসাৎ করে।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের নিয়োগ করা ৮০টি শাখার ব্যবস্থাপক ও দ্বিতীয় কর্মকর্তারা অধিক হারে মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদে আমানত সংগ্রহ করেন। জমাকৃত টাকার মেয়াদ পূর্তিতে গ্রাহকের আসল টাকা ও লভ্যাংশ ফেরত চাইতে গেলে ‘আজ দেবে কাল দেবে’ বলে কালক্ষেপন ও টালবাহানা করেন।
“তাজুল ইসলাম এবং মো. জাকির হোসেন চৌধুরী শাখার ব্যবস্থাপক ও দ্বিতীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে ১২টি বিভিন্ন তফসিলভুক্ত ব্যাংকে ৭৭টি হিসাবের মাধ্যমে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। ব্যাংকের হিসাব বিবরণী এবং স্টেটমেন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, আসামিরা গ্রাহকদের জমাকৃত আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা নগদ ও অনলাইনে ট্রান্সফার করে পরস্পর যোগসাজশে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তর করে নিজ নামে, স্ত্রী আফরোজা পারভীন এবং ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম তানভীর পরিচালিত সাউদি বাংলা প্রপাটিজ লিমিটেড, তানভীর এন্টারপ্রাইজ ও তানভীর অটো ব্রিক লিমিটেডের হিসাবে স্থানান্তর করে সাজ্জাদুল ইসলাম তানভীরসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্যদের নামে চেক ইস্যু, ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান ও সাবেক সদস্য ও কর্মকর্তাগণের যোগসাজশে নগদে উক্ত টাকা উত্তোলন করে সংঘবদ্ধ প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে বিভিন্ন ব্যাংকে প্রেরণ/স্থানান্তর/রুপান্তরের মাধ্যমে হস্তান্তর করে।”
এছাড়া তাজুল ইসলাম কানাডার গ্রীন কার্ডধারী এবং তার ছেলে ফারহাদুল ইসলাম ছাব্বির ও রিয়াজুল ইসলাম রিজভী উভয়ে ২০১১ সাল থেকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।
“তাজুল ইসলাম সাধারণ গ্রাহকের জমাকৃত আমানত হতে শত কোটি টাকা কানাডায় পাচার করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, “ বলছে সিআইডি।