এবারের মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে যখন কৃষকরা প্রতিটি ফুলকপি এক টাকা দরে বিক্রি করছিলেন, তখনও ঢাকার বাজারে দাম ১৫ টাকার নিচে নামেনি। দামের এই বড় ব্যবধানের জন্য পথে পথে চাঁদাবাজিকে দায়ী করা হচ্ছিল।
Published : 25 Apr 2019, 09:16 PM
বৃহস্পতিবার সংসদে এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সবজির ট্রাকে এই চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, সরকার তা নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আদিবা আঞ্জুম মিতার এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এই স্বীকারোক্তি আসে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির অনুপস্থিতিতে কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন।
এসময় এক সম্পূরক প্রশ্নে মিতা জানতে চান, ঢাকার বাইরে থেকে সবজি আনার সময় বিভিন্ন সময় চাঁদা আদায় করে, এতে ঢাকায় এসে দাম বেড়ে যায়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে কি না?
জবাবে রাজ্জাক বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাঁদাবাজির বিষয়টি মনিটরিং করে আসছে। বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিক সংগঠন নানা কারণে চাঁদা সংগ্রহ করে।
“সবজি পরিবহনের সময় চাঁদা আদায়ের বিষয়টিতে আমি দ্বিমত পোষণ করছি না। এটা সত্য যে কিছু কিছু পয়েন্টে চাঁদাবাজি হয়। চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, আসছে রোজায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হবে না।
বাণিজ্য ঘাটতি
এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির চিত্র তুলে ধরেন রাজ্জাক।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ৭৪৮ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। দেশটিতে ৮৭৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার রপ্তানির বিপরীতে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ আট হাজার ৬২১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার।
সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
এর মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ৪৭১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, ভুটানের সঙ্গে ২৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, মালদ্বীপের সঙ্গে ১২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ২ মিলিয়ন ডলার।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। চলতি বছরে কৃষিপণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৭১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি জানান, ২০১৮ সালে ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫৪ কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। চা রপ্তানি করে ২০ কোটি ৩৯ লাখ ৩২ হাজার ১০৪ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “দেশের ভোজ্য তেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন। এ চাহিদা পুরণে প্রতি বছর ১৬ থেকে ১৭ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত ভোজ্য তেল আমদানি করা হয়ে থাকে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সংসদে জানান, দেশে সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যার জন্য প্রতিদিন ৫০৯ গ্রাম হিসেবে বছরে ৩০৬ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের চাহিদা আছে।
“গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৩১৯ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৯ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন গম উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় বিধায় খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই।”
আসন্ন বোরো মৌসুমে কৃষকদের থেকে ২৬ টাকা কেজি ধরে দেড় লাখ মেট্রিক টন ধান ও চালকল মালিকদের থেকে ৩৬ টাকা কেজি ধরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও ৩৫ টাকা কেজি ধরে দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। ২৫ এপ্রিল থেকে এই সংগ্রহ শুরু হবে।