নয়া পল্টনে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের সময় নাশকতাকারীদের হেলমেট পরে যাওয়ার নির্দেশ দলটির নেতারা দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
Published : 20 Nov 2018, 08:09 PM
ওই ঘটনায় জড়িত ছাত্রদলের ছয়জন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম একথা বলেছেন।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “হেলমেট পরা যারা ছিল তাদেরকে জিজ্ঞেস করে আমরা জেনেছি, যখন পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করা হয় তখনই কেউ কেউ কোনো কোনো নেতারা নির্দেশ দিয়েছে, হেলমেট নিয়ে যেতে যাতে তাদের যে চেহারা সেটি ফুটেজে না আসে, ছবিতে না আসে যাতে পরবর্তীতে তারা আইডেন্টিফাইড না হয় এবং যাতে অপপ্রচার চালানো সম্ভব হয়।”
এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর এবং পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ভাংচুর-অগ্নিসংযোগে জড়িত বেশ কয়েকজনকে হেলমেট পরা অবস্থায় দেখা যায়।
ঘটনার পরপরই নাশকতার জন্য আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে দায়ী করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছিলেন, নিজেরা ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপাতে সরকারের ‘এজেন্টরা’ এটা করেছে।
ওই ঘটনার সময় একজন হামলাকারীকে হেলমেট পরে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর এবং গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়।
মো. এইচ কে হোসেন আলী নামের ওই যুবকও রয়েছেন গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে।
পুলিশ বলছে, শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির হোসেন ওই এলাকার বাসিন্দা বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের অনুসারী। তিনি ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পদ প্রত্যাশী।
ছয়জনকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকার একজন মহানগর হাকিম।
রিমান্ড আবেদনে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, “মামলার তদন্ত-গোয়েন্দা তথ্য ও আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, যারা এই হামলার পরিকল্পনা করেছে তাদের উদ্দেশ্য ছিল পুলিশকে উসকানি দিয়ে অ্যাকশনে যেতে বাধ্য করা। যেন তারা নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের অ্যাকশনের ও লাঠিচার্জের ভিডিও দেখিয়ে বিভিন্ন মহলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারে।
ওই দিনের ঘটনার কয়েকটি ছবিতেই হোসেনকে দেখা যায়। হেলমেট পরে পুলিশের গাড়ির উপর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর আগে তাকে উন্মুক্ত চেহারায় দেখা যায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়াধাওয়িতে।
হোসেনের সঙ্গে আরও কয়েকজনকে দেখা যায় হেলমেট পরে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগে অংশ নিতে।
হেলমেট পরে হামলায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি এর আগে আলোচনায় এসেছিল গত অগাস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন দমনের চেষ্টাকালে। ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়া ওই আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরাও ছিলেন হেলমেট পরা।
ওই হামলার জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করা হলেও ঘটনাটির কয়েক মাসেও এখনও কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
নয়া পল্টনে সংঘর্ষের সময় বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর হাতে লাঠি দেখা যাওয়ায় বিকল্প ধারা সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছিলেন, নির্বাচনী উৎসবে লাঠি এলো কোথা থেকে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোতে হামলার পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতাদেরই আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ঘটনাটি নিয়ে পল্টন থানায় যে তিনটি মামলা হয়েছে সেখানে বিএনপি নেতা রিজভী ছাড়াও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, নিপুণ রায় চৌধুরী ও হাবিবুর রশিদ হাবিবসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
মনিরুল বলেন, ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও স্থির চিত্রে যারা আছেন তাদের কাউকে কাউকে শনাক্ত করেছেন তারা। অন্যদেরও শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন প্রকাশ বিশ্বাস ও কামাল হোসেন তালুকদার]