ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজি করাতে নয়া দিল্লি সচেষ্ট রয়েছে বলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
Published : 11 Mar 2018, 04:09 PM
রোববার নয়া দিল্লিতে ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সের (আইএসএ) সম্মেলনের ফাঁকে রাষ্ট্রপতি ভবনে মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে এক বৈঠকে একথা জানান ভারতের সরকার প্রধান।
ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ঘটলেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি কয়েক বছর ধরে আটকে আছে মমতার আপত্তিতে। বাংলাদেশকে পানি দিলে তার রাজ্য পর্যাপ্ত পানি পাবে না বলে তার দাবি।
এদিকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য তিস্তার পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বাংলাদেশে যে কোনো বৈঠকেই ভারতকে তাগিদ দিয়ে আসছে।
ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সের (আইএসএ) সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া রাষ্ট্রপ্রধান হামিদ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে বিষয়টি তোলেন।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠকের সময় রাষ্ট্রপতি বালাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে তিস্তার পানি বণ্টনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। জবাবে মোদী বলেন, তার সরকার এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাচ্ছে এবং সকলকে নিয়েই সমাধান করতে আগ্রহী।”
মোদীর বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘উই আর ট্রাইং টু কিপ হার অন বোর্ড’।”
ছয় বছর আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় ঝুলে যাওয়ার পর তিস্তার জট আর খোলেনি।
নয়া দিল্লিতে ক্ষমতার পালাবদলে ক্ষমতায় আসা বিজেপির সঙ্গে এক সময়ে পশ্চিমবঙ্গে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের জোট থাকলেও এখন তাদের মধ্যে রেষারেষি চলছে।
তিস্তার বদলে পশ্চিমবঙ্গের ছোট ছোট চারটি নদীর পানি বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগির প্রস্তাব রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা দিয়েছিলেন, তবে তাতে আগ্রহী নয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
তিস্তা চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছিলেন, “সামনে নির্বাচন, আমাদের জনগণের কাছে জবাব দিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন… এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাইছি।”
নয়া দিল্লিতে বৈঠকে মোদী দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় আবদুল হামিদকে অভিনন্দন জানান। তিনি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরও প্রশংসা করেন।
আবদুল হামিদ দিল্লি পৌঁছার আগে তার আসাম ও মেঘালয়ের সফরের কথা তুলে ধরলে মোদী বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আপনার এই সফরে আমরা আনন্দিত ও সম্মানিত বোধ করেছি।”
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ভারতীয়দের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মানিত করাও তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন মোদী।
আবদুল হামিদ বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশ এবং এই সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
তিনি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সম্মান, নিরাপদ ও নিরাপত্তার সঙ্গে প্রত্যাবাসনে ভারতের সহযোগিতা কামনা করেন ।
এ প্রসঙ্গে মোদী বলেন, বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে তার দেশের আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য বড় এই সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।