সরকারি কর্মচারীদের চেয়ে বেতন ‘বেশি’ হওয়ায় সাংবাদিকদের জন্য আর কোনো ওয়েজ বোর্ডের ‘দরকারই নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
Published : 08 Aug 2017, 05:18 PM
নতুন বেতন কাঠামোর দাবিতে সংবাদকর্মীদের আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই মন্তব্য করেন তিনি।
মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, “সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড আননেসেসারি, টোটালি আননেসেসারি। বিকজ ইয়োর স্যালারি স্কেলস আর মাচ বেটার দ্যান দি গভর্নমেন্ট স্যালারি স্কেলস, দেয়ারফোর ইট ইজ আননেসেসারি (সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড অপ্রয়োজনীয়, পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়। কারণ বর্তমানে আপনাদের বেতন কাঠামো সরকারি বেতন কাঠামোর চেয়ে বেশি, তাই এটা অপ্রয়োজনীয়)।”
সরকারি চাকুরেদের পেনশন থাকা এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে ৮ হাজার টাকা বেতনে সাংবাদিকতা শুরুর বিষয়টি একজন সাংবাদিক অর্থমন্ত্রীকে জানালে তিনি বলেন, “মাস্টার্স পাস করে আমাদের পিয়নও আছে… আপনাদের পাঁচটি বেতন গ্রেড আছে।”
বৈঠকের পর মন্ত্রণালয়ের বারান্দায় মন্ত্রী যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন ওই বারান্দার অন্য পাশ দিয়ে নোয়াব সভাপতি মতিউর রহমান, সমকালের মালিক এ কে আজাদসহ অন্যদের বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, সংবাদপত্র শিল্পের নানা সমস্যা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তারা সংবাদপত্র মালিকদের সঙ্গে বসেছিলেন। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সাংবাদিকদের সর্বশেষ বেতন কাঠামো হয়েছিল ২০১২ সালে; এরপর সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়ার পর সংবাদকর্মীদের আন্দোলনের মুখে নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।
কিন্তু সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব তাদের প্রতিনিধির নাম না দেওয়ায় বোর্ড গঠন করা যাচ্ছে না বলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
মুহিতের কথা শোনার পর এক সাংবাদিক ‘পত্রিকার মালিকরা আপনাকে ভুল বুঝিয়েছে’ বলার পর তিনি বলেন, “আপনারা একজন বা দুজন দায়িত্ব নেন, আপনাদের স্যালারি গ্রেড আমাকে দেন।”
টেলিভিশনে ওয়েজ বোর্ড নেই, সব পত্রিকায়ও ওয়েজ বোর্ড কার্যকর নেই- এটা জানানোর পর পাল্টা প্রশ্নে মুহিত জানতে চান, “ঢাকায় কয়টি দৈনিক পত্রিকা আছে?”
একজন সাংবাদিক উত্তরে ‘২০১টি’ বললে মুহিত চেঁচিয়ে বলেন, “রাবিশ, দ্যাটস মাই আনসার টু ইউ। রাবিশ। ২০১!”
চিৎকার করে কথা বলার সময় অশীতিপর অর্থমন্ত্রীর শরীর কাঁপছিল। তাকে থামানোর উদ্যোগ নেন তথ্যমন্ত্রী ইনু। মুহিতের ঘাড়ের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “স্যার ঠিক আছে।”
মুহিত এরপর বলেন, “১৫টি হবে কি না আমার সন্দেহ আছে, ২০টি হতে পারে বড়জোড়। এই যে পাঁচশ কতটা কী আছে খবরের কাগজ, অল বোগাস, ওদের জন্য বেতন স্কেল ঠিক করব? নো, নট অ্যাটঅল। আই উইল ফিক্স দি বেতন স্কেল ফর দিস ফিফটিন অর টোয়েন্টি নিউজ পেপারস, যেখানে মানুষজন কাজ করে এবং এগুলোতে কী স্যালারি স্কেল আছে আমাকে একটা দেন।”
নিয়ম নীতি না মেনে কীভাবে পত্রিকাগুলো চলছে- জানতে চাইলে মুহিত বলেন, “কাগজ পায়, এটা পায়, ওটা পায়।”
এই পর্যায়ে মুহিত আবারও বলেন, “আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের ধারণা হল, সাংবাদিকদের জন্য কোনো ওয়েজবোর্ডের প্রয়োজন নেই।”
টেলিভিশনে সাংবাদিকদের বেতন কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে- এ প্রশ্নে মুহিত বলেন, “তাহলে কয়টা টেলিভিশন মরে যাবে, হুইচ ইজ ডিজায়ারেবল ফর দ্য কান্ট্রি। দুনিয়ার কোন খানে এতগুলো টেলিভিশন স্টেশন আছে, কোন দেশে?”
নতুন নতুন টিভির অনুমোদন তো আপনারাই দিয়েছেন- এক সাংবাদিক বলার পর মুহিত বলেন, “এতগুলো টেলিভিশন স্টেশন আছে এগুলো থাকবে না, অটোমেটিক্যালি এগুলো মরে যাবে।”
বেসরকারি খাতের সাংবাদিকদের জন্য সরকারিভাবে বেতন কাঠামো গঠন না করার পক্ষপাতি অর্থমন্ত্রী। তিনি এটি বাজারের উপর ছেড়ে দিতে চান।
“কত প্রফেশন আছে দেশে? কার জন্য ওয়েজবোর্ড করি? গভর্নমেন্ট সার্ভিস ছাড়া কারও জন্যই ওয়েজ বোর্ড করা হয় না।”
বেসরকারি খাতের বেতনের উপর কি সরকারের নিয়ন্ত্রণ আছে- এই প্রশ্নে মুহিত বলেন, “নাই।”
সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজ বোর্ড সব সময়ই ছিল- এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “এটা রং, রং।”
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর কথা কাটাকাটিও হয়।
তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, “ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো আইন তৈরি হয়নি। সুতরাং যেটা ওয়েজ বোর্ড হচ্ছে খবরের কাগজের জন্য।”
রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে তথ্যসচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।