গাড়িতে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মুসা বিন শমসের দুর্নীতি করেছেন দাবি করে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সুপারিশ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
Published : 08 Jun 2017, 09:35 PM
পাশাপাশি ফাঁকি দেওয়া ওই অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলে বিতর্কিত এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলার অনুমতিও রাজস্ব বিভাগের কাছে চেয়েছে তারা।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
‘কারনেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় বাংলাদেশে আনা একটি রেঞ্জ রোভার গাড়ি গত ২১ মার্চ মুসা বিন শমসেরের দখল থেকে উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দারা। তারপর তাকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিলেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
মইনুল খান বলেন, “গাড়িটি ভোলা বিআরটিএ থেকে শুল্ক পরিশোধের ভূয়া বিল অব এন্ট্রি দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা ছিল। তিনি এতে ১৭ লাখ টাকা শুল্ক দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
“কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সাথে যোগাযোগ করে দেখা যায়, এই বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়নি। এতে সরকারের প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা ফাঁকির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি (মুসা)।”
ভোলা বিআরটিএর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই দুর্নীতি হয়েছিল বলে শুল্ক গোয়েন্দাদের দাবি।
মইনুল খান বলেন, “গাড়িটি ২০১০ সালে শুল্কমুক্তভাবে আনা; প্রযোজ্য শুল্ক-করাদি পরিশোধ ছাড়া বাংলাদেশে ব্যবহার বা রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ নেই।
“অথচ ২০১৫ সালে ভোলা বিআরটিএ অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া কাগজপত্রাদি দাখিলের মাধ্যমে গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।”
এটি দুর্নীতি দমন কমিশনের তফসিলভুক্ত অপরাধ হওয়ায় মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে মামলা করতে বৃহস্পতিবার এনবিআর চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দুদকে সুপারিশ করা হয়েছে বলে মইনুল জানান।
তিনি বলেন, “গাড়িটিতে শুল্ক ফাঁকি থেকে লব্ধ অর্থ বিভিন্নভাবে রূপান্তরিত হওয়ায় শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করার জন্যও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বরাবর অনুমতি চেয়েছে।”
গত ৭ মে শুল্ক গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মুসা লিখিত বক্তব্যে সুইস ব্যাংকে তার রাখা ১২ বিলিয়ন ডলার (৯৬ হাজার কোটি টাকা) জব্দ থাকার তথ্য তুলে ধরেন বলে মইনুল খান জানান।
“কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদের সপক্ষে কোনো ব্যাংক স্টেটমেন্ট কিংবা অন্য কোনো প্রামাণিক দলিলাদি তিনি দাখিল করেননি।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই মুসা বিন শমসেরের সম্পদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে।
১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ী।
একটি দৈনিকে সুইস ব্যাংকে মুসা বিন শমসেরের ৫১ হাজার কোটি টাকা থাকার খবর ছাপা হয়েছিল। তবে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গত বছর মুসা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশে বসে কেউ এত অর্থ উপার্জন করতে পারবে না।
মুসার বিরুদ্ধে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে, যার অনুসন্ধান করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
সম্প্রতি তার ‘যুদ্ধাপরাধের তথ্য’ সম্বলিত নথি তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছেন সাংবাদিক সাগর লোহানী ও প্রবীর সিকদার।
তবে মুসার দাবি, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন তিনি।