শুল্ক ফাঁকি দিয়ে একটি গাড়ি চালানোর অভিযোগে মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
Published : 07 May 2017, 04:33 PM
রোববার বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে বিতর্কিত এই ব্যবসায়ীকে তলব করে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মহাপরিচালক মইনুল খান এ তথ্য জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হবে। তার মধ্যে শুল্ক ফাঁকি ও মুদ্রাপাচারের অভিযোগে দুটি মামলা করবে শুল্ক বিভাগ। আরেকটি মামলা হবে দুদক আইনে।
দেড় মাস আগে জনৈক ফারুক উজ-জামান চৌধুরীর নামে নিবন্ধিত শুল্ক ফাঁকি দিয়ে একটি বিলাসবহুল গাড়ি মুসার ছেলের শ্বশুর বাড়ি থেকে জব্দ করার পর সেবিষয়ে তদন্তের জন্য তাকে তলব করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
গত ২১ মার্চ ওই ‘রেঞ্জ রোভার’টি জব্দ করার পর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিচালক এইচ এম শরিফুল হাসানের নেতৃত্বে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
ওই কমিটি গত ২০ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করলেও ‘আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়েছেন’ দাবি করে সময় চান মুসা। তখন ৭ মের মধ্যে হাজির হতে সমন পাঠানো হয় তাকে।
রোববার বেলা ৩টার দিকে ডজনখানেক ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান মুসা। সে সময় সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরলেও তিনি কোনো কথা বলেননি।
মুসা চার পৃষ্ঠার লিখিত জবাব নিয়ে এসেছিলেন বলে জানান শুল্ক গোয়েন্দা প্রধান মইনুল খান।
তিনি বলেন, “তিনি (মুসা) বলেছেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমার বৈধ কাগজপত্র আছে। সময় হলে পেয়ে যাবেন’।”
“তার বক্তব্য শুনে দায় এড়ানোর মতো মনে হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে তথ্য আছে সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেব,” বলেন মইনুল খান।
জিজ্ঞাসাবাদে সেই ফারুক উজ-জামানের বিষয়েও মুসা তথ্য দিয়েছেন জানিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “তিনি অনেকগুলো ক্লু দিয়েছেন। অটো ডিফাইন নামের একটি কোম্পানির নাম এখানে এসেছে।
“তিনি বলেছেন, ফারুক উজ-জামানের কাছ থেকে তিনি গাড়িটি কিনেছেন। আর ফারুক উজ-জামান ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে অটো ডিফাইন থেকে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন নিয়েছেন। আমরা সেটা খতিয়ে দেখছি।”
তিনি বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত দলের ১৮টি প্রশ্নের মৌখিক জবাব দেন মুসা। তিনি জানান, সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার আটকে পড়েছে। এই টাকা বিদেশে অস্ত্র বিক্রি করে অর্জন করেছেন তিনি।
জনশক্তি রপ্তানি দিয়ে মুসার ব্যবসার শুরু হলেও তার পরিচয় দিতে গিয়ে অস্ত্র ব্যবসার কথাই বেশি আসে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। তার বিলাসি জীবন-যাপনও উঠে আসে বিদেশি গণমাধ্যমে।
মইনুল বলেন, “তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির আলামত আমরা পেয়েছি। দুদক আইনে মামলা করার জন্য সেগুলো আমরা দুদকে প্রেরণ করব। তারা পরবর্তীতে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই মুসা বিন শমসেরের সম্পদ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও তদন্ত চালাচ্ছে।
১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ী।
একটি দৈনিকে সুইস ব্যাংকে মুসা বিন শমসেরের ৫১ হাজার কোটি টাকা থাকার খবর ছাপা হয়েছিল। তবে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গত বছর মুসা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশে বসে কেউ এত অর্থ উপার্জন করতে পারবে না।
মুসার বিরুদ্ধে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে, যার অনুসন্ধান করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
সম্প্রতি তার ‘যুদ্ধাপরাধের তথ্য’ সম্বলিত নথি তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছেন সাংবাদিক সাগর লোহানী ও প্রবীর সিকদার।
তবে মুসার দাবি, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন তিনি।