ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রিয়াজুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কোর্সের শিক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছিল।
Published : 30 Apr 2017, 11:29 PM
পাঠদানে অশ্লীলতার অভিযোগে এই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করলেও তা নিয়ে তার সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে প্রশ্ন উঠেছে।
আর নম্বরের পক্ষপাতের যে অভিযোগে বিভাগ থেকে খাতা পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অধ্যাপক রিয়াজুলের।
এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতের অভিযোগ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়ার পর সেগুলোর আলোকে বিভাগ থেকে ‘গ্রিভেন্স কমিটির’ করা হয়েছিল বিভিন্ন সময়; এমন একটি কমিটির প্রতিবেদন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।
২০১৭ সালের জানুয়ারির ওই প্রতিবেদনে গ্রিভেন্স কমিটি কর্তৃক উত্তরপত্র পূনর্মূল্যায়নের পর দেখা যায়, একটি কোর্সের পাঁচ শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের নম্বর আগের তুলনায় বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাস্টার্স প্রোগ্রামের ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ কোর্সের তৃতীয় বর্ষ সমাপনী পরীক্ষার ফলে এমন চিত্র দেখা যায়।
ওই কোর্সেই অশ্লীল চিত্র দেখানোর অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হতে হয় অধ্যাপক রিয়াজুলকে। পরে আদালতে গিয়ে সিন্ডিকেটের ওই সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ আনেন তিনি।
পুনর্মূল্যায়নে তিন পরীক্ষার্থীর নম্বর যথাক্রমে ৩২ দশমিক ৩ থেকে বেড়ে হয় ৪০, ৩১ দশমিক ৭ থেকে ৩৯ এবং ৩১ দশমিক ৬ থেকে ৩৮ হয়।
এই গ্রিভেন্স কমিটিতে ছিলেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ, অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম ও অধ্যাপক নাইম সুলতানা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক রিয়াজুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে সেটা শুনেছি, কিন্তু যারা করেছে তারা জেন্ডারের কী বোঝে? তাদের দ্বারা কীভাবে পুনর্মূল্যায়ন হয়?”
এর আগে ২০১৫ সালে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের এমডিএস কোর্সেও কয়েকজন শিক্ষার্থী অধ্যাপক রিয়াজুলের বিরুদ্ধে ইন্টারনার ৫০ নম্বর প্রদানে পক্ষপাতের অভিযোগ এনেছিলেন। এক শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত না থেকেও উপস্থিতির ৫ নম্বর পাওয়ার মতো বিষয়ও সেখানে ছিল।
সে সময়ের একাডেমিক কমিটির কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শিরোনামের কোর্সের নম্বর সমন্বয় করার জন্য বিভাগ থেকে একটি বিকল্প সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সমন্বয়ের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে আরেকটি পরীক্ষা নেওয়া হয়, যেখানে অধ্যাপক রিয়াজ প্রশ্ন করলেও বিভাগীয় শিক্ষক ড. নাঈম সুলতানাকে পরীক্ষার নম্বরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া ওই কোর্সের ৫০ নম্বরের ফাইনাল পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ক্ষেত্রেও ভিন্ন রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাঈম সুলতানা ও ড. শুচিতা শরমিন পৃথক পৃথকভাবে খাতা মূল্যায়ন করবেন। ড. শুচিতা শরমিন সম্মত না হলে ড. নিয়াজ আহমেদ খান ওই খাতা মূল্যায়ন করতে সম্মত আছেন- এমন সিদ্ধান্ত হয় একাডেমিক কমিটির সভায়।
উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অধ্যাপক রিয়াজুলের নানা সময়ে নানা অভিযোগের সমাধান করা হয়েছিল বিভাগীয় পর্যায়েই।
“ওই সব ঘটনায় তাকে বিভিন্ন সময়ে একাডেমিক কমিটি থেকে সতর্ক করা হলেও তিনি সাবধান হননি, বরং দম্ভ করেই নিজের কাজ চালিয়ে যেতেন। চূড়ান্তে পর্যায়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সবগুলো বিষয়ই তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অশ্লীল চিত্রে পাঠদানের যে অভিযোগ, সে আলোকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়।”
এ বিষয়ে অধ্যাপক রিয়াজুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একজন শিক্ষার্থী ১৫ দিনে ৩২ জেলা ঘুরে অ্যাসাইনমেন্ট করেছে বলে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমি তাকে তো নম্বর দিতে পারি না।
“তবুও তাকে নম্বর দেওয়ার জন্য বিভাগীয় শিক্ষক তৈয়েবুর রহমান আমাকে ই-মেইল পর্যন্ত করেছিলেন। কিন্তু আমি মানি নাই। এরপর বিভাগ থেকে সে বিষয়ে কী করেছে, আমি জানি না।”
২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে যোগদানের আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে প্রভাষক ছিলেন রিয়াজুল হক।