মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা মানুষের ঢলে সৃষ্ট মানবিক সংকটের আপাত সমাধান হিসেবে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে পাঠানোর যে উদ্যোগে নিয়েছে তার ঝুঁকিগুলো তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
Published : 03 Feb 2017, 08:12 PM
এক দশক আগে সন্দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে জেগে ওঠা এই চরকে ‘ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাপ্রবণ এবং বসবাসের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে বার্তা সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে।
পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের ওই এলাকায় জলদস্যুর উৎপাতের কথা তুলে ধরে সেখানে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের পরিকল্পনা ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে সমালোচনা করা হয়েছে এতে।
রয়টার্স প্রতিবেদকদের সরেজমিন পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা একটি মাছ ধরার নৌকায় করে সন্দ্বীপ উপকূলের মাইঠভাঙ্গা গ্রাম থেকে নৌপথে দুই ঘণ্টা দূরত্বে অবস্থিত ঠেঙ্গারচরে যান। জলদস্যুদের সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে তাদের সঙ্গে ছিলেন চীনের তৈরি মেশিন গানসহ বিভিন্ন অস্ত্রসজ্জিত কোস্টগার্ডের সাতজন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় না; ঝুঁকিপূর্ণ ঠেঙ্গারচরে যেতেও ইচ্ছুক নন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
এতে বলা হয়েছে, জনশূন্য দ্বীপ চরটিতে বর্ষা মৌসুমে বেশির ভাগ সময় বন্যার পানিতে ভেসে যায়। আর সাগর শান্ত থাকলে মুক্তিপণের জন্য জেলেদের অপহরণের তালে থাকেন জলদস্যুরা।
মিয়ানমার থেকে সম্প্রতি পালিয়ে আসা প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে এখানেই পুনর্বাসন করার বিষয়ে সরকার দৃঢ়তার কথা একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই মন্ত্রীর নাম প্রকাশ না করে তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলছে, চরটিতে রোহিঙ্গাদের জীবন ধারণের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। তবে এবিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা না পাওয়ার কথা রয়টার্সকে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসানকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপগুলো বসবাসের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ঠেঙ্গারচর থেকে সবচেয়ে কাছাকাছি গ্রাম মাইঠ ভাঙ্গার বাসিন্দাদের দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ৪৮ বয়সী মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শুধু বাজে কথাই শুনি। এখন তারা যদি জলদস্যুদের সঙ্গে মিলে অপরাধে জড়িত হয়, তাহলে আমরা তাদের এখানে চাই না।
তবে তারা ‘ভালো মানুষ’ হয়ে থাকলে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের সাহায্য করা উচিত বলে মনে করেন স্থানীয় মোড়ল মিজানুর।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, জলদস্যুরা প্রায়ই তাদের নৌকা ও মাছসহ জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। পরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়।
এই এলাকায় অন্য দ্বীপগুলোর উন্নয়নে ৪০ বছর সময় লাগলেও এখন পর্যন্ত তা প্রাথমিক পর্যায়েই রয়ে গেছে বলে জানান ওই সাংবাদিক।
মিয়ানমারে সামরিক অভিযানের পর গত ডিসেম্বরে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন আবু সালাম নামে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী। তার বক্তব্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা ঠেঙ্গারচরে যেতে চান না।
“মিয়ানমারে আমরা সব ফেলে চলে এসেছি। সেখানে আমাদের বাড়ি ছিল। একমাত্র নাগরিকত্ব পেলেই আমরা মিয়ানমারে ফিরে যাব।”