আচরণবিধি মেনে চলুন: সিইসি

সবার জন্যে সমান সুযোগ তৈরির পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী-সমর্থকদের আচরণবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

কাজী নাফিয়া রহমান নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2018, 06:35 PM
Updated : 8 Nov 2018, 06:42 PM

আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদের তফসিল ঘোষণা করে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই অনুরোধ করেন তিনি।

সিইসি বলেন, “জাতির এমন উচ্ছ্বসিত প্রস্তুতির মধ্যখানে দাঁড়িয়ে আমি প্রত্যাশা করব, অনুরোধ করব এবং দাবি করব, প্রার্থী এবং তার সমর্থক নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি মেনে চলবেন। প্রত্যেক ভোটার অবাধে এবং স্বাধীন বিবেকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।”

স্ব স্ব এলাকার গণ-মান্য ব্যক্তি এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি ভোট কেন্দ্রে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে সহায়তা করার অনুরোধ জানান সিইসি।

নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি।

নূরুল হুদা বলেন, “পোলিং এজেন্টগণ ফলাফলের তালিকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। নির্বাচনী কমকর্তারা নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অটল থাকবেন। নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটগণ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন।”

তিনি জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ভোট কেন্দ্র, ভোটার, প্রার্থী, নির্বাচনি কমকর্তা এবং এজেন্টগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।

গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ, কমিশন সচিবালয় সামগ্রিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে বলে আশা রাখেন সিইসি।

তিনি বলেন, “নির্বাচন ঘিরে সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহের জাগরণ ঘটে। তাদের বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা আর উচ্ছ্বাসে গোটা দেশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। …ভোটের দিনে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বণনতার মধ্যে আনন্দঘন ও উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করে।”

সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে অনেক দল।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সিইসি বলেন, “ভোট শেষে নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে অবস্থান করতে পারবেন। নির্বাচনী প্রচারণায় সব প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ পাবে। সকলের জন্য অভিন্ন আচরণ ও সমান সুযোগ সৃষ্টির অনুকূলে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হবে।”

দশম সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।

সেক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার পর থেকে আচরণবিধি প্রতিপালনে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

ইসির যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তফসিল ঘোষণা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব ধরনের প্রচার সামগ্রী অপসারণ করতে হবে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রচারণার সুযোগ নেই।”

২০১৩ সালে নির্বাচনকালীন সময়ে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে মন্ত্রী-সাংসদদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ন্ত্রণ করে আচরণবিধি করে নির্বাচন কমিশন।

তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’ বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

বিদ্যমান আচরণবিধিতে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, প্রধান হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলে তাদের আচরণবিধি মেনে প্রচারণায় অংশ নিতে হবে। সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব ব্যক্তিরা সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ডেও যোগ দিতে পারবেন না।

নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করলে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার জরিমানা এবং সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ইসির রয়েছে।