নির্বাচনকালীন সময়ে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে মন্ত্রী-সাংসদদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব রেখে আচরণবিধির খসড়া তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 30 Oct 2013, 05:37 PM
এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন সময়ে ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা’ কোনো প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন, অর্থ বরাদ্দ, ছাড় বা অনুদান ঘোষণা করতে পারবেন না।
নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচন কর্মসূচিও তারা জড়াতে পারবেন না।
এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সময় বলতে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে বোঝানো হবে।
আর এই ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা’ হলেন- প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, হুইপ, মন্ত্রিসভার সদস্য ও সমমর্যাদার ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র।
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি নির্ধারিত হবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী। আচরণবিধিতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা থেকে শুরু করে প্রার্থীতা বাতিলের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে ইসিকে।
বুধবার কমিশন সভায় আচরণবিধির খসড়ায় নীতিগত অনুমোদনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানান, জনমত নেয়ার জন্য খসড়াটি এখন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। রাজনৈতিক দলসহ সব মহলের মত পাওয়ার পর তা চূড়ান্ত করা হবে।
সংবিধান অনুযায়ী, আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা, যার দিন গণনা শুরু হয়েছে গত ২৭ অক্টোবর থেকে। গত কয়েকটি নির্বাচনের মতো তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আর না থাকায় এবার নির্বাচন হবে সংসদ বহাল রেখে, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে সব দল ও প্রার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতেই আচরণবিধি সংশোধন করে নির্বাচনকালীন সময়ে জনপ্রতিনিধিদের সরকারি ক্ষমতা সীমিত করার এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
“এবার সংসদ বহাল থাকায় মন্ত্রিসভা ও সাংসদদের বিদ্যমান সুবিধা ছাড়তে হবে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই।”
অনুমোদিত খসড়া প্রসঙ্গে কমিশনার আবু হাফিজ জানান, নির্বাচনের আগে মন্ত্রি ও সাংসদরা কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন, অর্থ বরাদ্দ বা ছাড় কিংবা অনুদান দিতে পারবেন না। কোনো প্রকল্পের ফলক উন্মোচন বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও তাদের জন্য নিষিদ্ধ থাকবে।
‘সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারে সরকারি যানবাহন বা প্রচারযন্ত্রের মতো সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না ।
সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মকর্তা - কর্মচারীদেরও প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না।
মন্ত্রী-সাংসদরা কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতে কর্তৃত্ব করতে বা এ সংক্রান্ত সভায় যোগ দিতে পারবেন না।
সাংসদরা পদাধিকারবলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পরিচালনা পর্ষদ বা উপদেষ্টা পদে থাকলেও নির্বাচনের সময়ে তাদের ওই ক্ষমতা ‘অকার্যকর’ থাকবে।
‘সরকারি সুবিধাভোগী’ এই ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নিজেদের ভোট দেয়া ছাড়া আর কোনো কারণে কোনো ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন না। নিজে প্রার্থী না হলে ভোট গণনার সময়ও সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ (ফাইল ছবি)
নির্বাচন ঘিরে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশ একটি ‘কঠিন সময়’ পার করছে বলে মনে করেন সিইসি। তবে রাজনৈতিক সমঝোতার আশা তিনি ছাড়েননি।
“জাতি এখন একটি ডিফিকাল্ট সময়ে আছে। সবাইকে নিয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে আশা করি। আলোচনার সুযোগ এসেছে। তাতে যেন কোনো বাধা না পড়ে। এখনো আশার আলো দেখছি।”
২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে মনোনয়ন দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহার ও প্রচারণার সুবিধার জন্য ৪০-৫০ দিন সময় রেখে ‘যথাসময়ে’ তফসিল ঘোষণা করা হবে বলেও জানান সিইস।
‘সমঝোতা হলে আলহামদুলিল্লাহ’
উপস্থিত একজন সাংবাদিক সিইসির কাছে জানতে চান- সাংবিধান নির্ধারিত ২৪ জানুয়ারির পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দেশের প্রধান দুই দলের মধ্যে সমঝোতা হলে ইসির ভূমিকা কি হবে।
জবাবে কাজী রকিব হাসতে হাসতে বলেন, “দুই দল রাজি হলে আলহামদুলিল্লাহ। যেভাবে রাখে সেভাবে করব। নিশ্চয়ই আইন হবে, আইন মেনেই করব।”