এবার টেস্ট সিরিজ জয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের বিরল সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। খুলনা টেস্টে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে ড্র করা স্বাগতিকদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। তাই অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বলতে পারছেন, সিরিজ জয় কোনো অঘটন হবে না।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2015, 03:09 PM
Updated : 5 May 2015, 05:24 PM

বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে সকাল ১০টায়।

আইসিসির টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বরে রয়েছে পাকিস্তান। নয় নম্বরে থাকা বাংলাদেশের কাছে কখনও টেস্টে হারেনি তারা। এবার হারলে সিরিজ খোয়ানোর সঙ্গে র‌্যাঙ্কিংয়েও পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে মিসবাহ-উল-হকের দলের।

খুলনায় প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানের লিড নিয়েও জিততে পারেনি পাকিস্তান। সেই ম্যাচ ড্র হওয়ায় ভীষণ চাপের মধ্যে রয়েছে অতিথিরা। বাংলাদেশ সফরে এখন পর্যন্ত কোনো জয় না পাওয়া দলটির এই চাপ কাজে লাগাতে মরিয়া মুশফিকরাও।

খুলনা টেস্টের আগে পাকিস্তানের কাছে টানা আট টেস্টে হেরেছিল বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র করে অতিথিদের বড় একটা ধাক্কা দিয়েছেন তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েসরা। তবে এখানেই থেমে থাকতে চায় না স্বাগতিকরা। ‘ফাইনাল’ জিতে শেষটা আরও রাঙিয়ে রাখতে চায় তারা।

ওয়ানডেতে অনেক দিন ধরেই সমীহ করার মতো খেলছে বাংলাদেশ। গত দুই/তিন বছর ধরে টেস্টেও উঠে আসছে দলটি। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৪টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশে জিতেছে ৪টিতে, হেরেছে পাঁচটিতে, অন্য পাঁচটি ম্যাচ ড্র করেছে।

টানা চার টেস্টে অপরাজিত থেকে মিসবাহদের বিপক্ষে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নামবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ জিতে পাকিস্তানের এবারের সফরকে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সিরিজ হিসেবে স্মরণীয় করে রাখতে চায় স্বাগতিকরা।

চোট সমস্যায় ঢাকা টেস্টের বাংলাদেশ দলের কম্বিনেশনে পরিবর্তন আসতে পারে। চোটের কারণে সিরিজ শেষ হয়ে যাওয়া রুবেল হোসেনের বদলে দ্বিতীয় টেস্টে ফিরতে পারেন আরেক পেসার শাহাদাত হোসেন।

মুশফিক কিপিং করতে না পারলে অভিষেক হতে পারে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান লিটন দাসের। সেক্ষেত্রে বাদ পড়তে পারেন খুলনায় অভিষেক হওয়া সৌম্য সরকার।

বোলিংয়ে শক্তি বাড়াতে ফেরানো হতে পারে লেগস্পিনার জুবায়ের হোসেনকে। তাকে জায়গা দিতে গিয়ে বাদ পড়তে পারেন শুভাগত হোম চৌধুরী।

টেস্টে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির সমাধান হয়ে এসেছেন তামিম-ইমরুল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ টেস্টে ২২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি উপহার দিয়েছিলেন এই দুই জন। খুলনায় বাংলাদেশের শেষ টেস্টে ৩১২ রানের জুটিতে গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড।

টানা চতুর্থ শতকের অপেক্ষায় থাকা তামিম, টানা তৃতীয় শতকের অপেক্ষায় থাকা ইমরুল আর টানা একাদশ টেস্টে কোনো ইনিংসে ৫০ বা তার বেশি রান করার অপেক্ষায় থাকা মুমিনুল হকে গড়া টপ অর্ডার ভিত গড়ে দিতে পারে বাংলাদেশকে। মাহমুদউল্লাহ, সাকিব ও মুশফিকের উপস্থিতিতে স্বাগতিকদের মিডলঅর্ডারও বেশ শক্তিশালী। 

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিক জানান, এখনো একাদশ ঠিক করেননি তারা। তবে ২০ উইকেট নেওয়ার চেষ্টায় বোলিং বিভাগে শক্তি বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। মিরপুরের উইকেটে বোলারদের জন্য সহায়তা আশা করছেন স্বাগতিক অধিনায়ক। তিন পেসার খেলানোর সম্ভাবনার কথা জানান তিনি। একই সঙ্গে দুই পেসার খেলানো হলে একজন বাড়তি স্পিনার খেলানোর ইঙ্গিতও দেন তিনি।

“এটা হচ্ছে ‘ফাইনাল’ ম্যাচ। ওরা অবশ্যই চেষ্টা করবে, আমরাও তাই করবো। আমরা চেষ্টা করব, কিভাবে ওদের ২০টি উইকেট নেওয়া যায়। আমরা যদি অনুভব করি, এই উইকেটে আরও একজন অতিরিক্ত বোলার লাগবে; সেটা আমরা নির্বাচন করব। আমাদের ২০টা উইকেট নিতে হবে।”

খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে পাঁচ দিনে পতন হয় ১৬ উইকেটের। দুই দল মিলিয়ে তিন ইনিংসে ওঠে ১ হাজার ৫১৫ রান, এর মধ্যে একটি ইনিংস ছিল অসমাপ্ত। তবে মিরপুরে ফল আশা করছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।

মুশফিক মনে করেন, আবহাওয়া কোনো সমস্যা না করলে ফল হতে পারে মিরপুরে। উইকেটে ব্যাটিং ও বোলিং দুই ক্ষেত্রেই সহায়তা আশা করছেন তিনি।

“খুলনায় আমরা ভালো খেলেছি, কিন্তু এখানে আমাদের খেলাটা খুব চ্যালেঞ্জিং হবে। ওরাও আমাদের ২০ উইকেট তুলে নেওয়ার জন্য সব রকম পদক্ষেপ নেবে। ওরা চেষ্টা করবে যেভাবেই হোক ফল যেন ওদের পক্ষে যায়। আমরাও চেষ্টা করব আগের ছন্দ যেন শেষ ম্যাচেও ধরে রাখতে পারি।”

প্রস্তুতি ম্যাচে হার দিয়ে বাংলাদেশ সফর শুরু করে পাকিস্তান। এরপর ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে ও একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কাছে হারে। তবুও অতিথিদের প্রতি সমীহের কমতি নেই স্বাগতিকদের।

“পাকিস্তান খুব ভয়ঙ্কর দল। ওদের ব্যাটিং ও বোলিং দুটোই ভালো, প্রায় বিশ্বমানের। আমাদেরও ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংটা ভাল। যারা পাঁচ দিন ভালো ক্রিকেট খেলবে, ১৫ সেশনের বেশিরভাগ সেশনে ভালো করবে তাদেরই জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।”

পাকিস্তান দলে একটি পরিবর্তন হতে পারে। দলে ফিরতে পারেন পেসার ইমরান খান। সাইদ আজমলের টানা দ্বিতীয় টেস্টেও মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে।  

পাকিস্তানের এবারের সফরে রীতিমত বিভীষিকা হয়ে উঠেছেন তামিম। এই বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে যত দ্রুত সম্ভব বিদায় করতে চান মিসবাহরা। তার জন্যই পরিকল্পনা করেছেন।

পাকিস্তানের ‘বাঁচা-মরার’ ম্যাচের আগে কোনো দলকেই এগিয়ে রাখছেন না দলের অধিনায়ক মিসবাহ। তিনি মনে করেন, পাঁচ দিন যারা দল হিসেবে ভালো খেলবে তারাই জিতবে মিরপুর টেস্টে।

গত অক্টোবরে শের-ই-বাংলায় প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা করেছিল বাংলাদেশ। এই মাঠেই পাকিস্তানকে টানা চারটি সীমিত ওভারের ম্যাচেই হারায় স্বাগতিকরা। এখানেই আর পাঁচ দিনের ভালো খেলা দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে যেতে পারে নতুন উচ্চতায়। তারই অপেক্ষায় আছে পুরো বাংলাদেশ।