নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের সমর্থক ও স্বজনরা।
Published : 25 May 2014, 12:10 AM
নজরুলসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে শামীম ওসমানের মোবাইল কথোপকথন প্রকাশের পরদিন নিহতদের স্বজনদের কাছ থেকে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠলো।
শনিবার রাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ নজরুলের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে সিদ্ধিরগঞ্জে তার বাড়িতে গেলে শামীম ওসমানের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে এ মিছিল হয়।
নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলামকেও এ সময় স্লোগান দিতে দেখা যায়, যদিও বিকালে তিনি নূর হোসেনের বিদেশে পালিয়ে যেতে শামীম ওসমানের সহযোগিতার অভিযোগ নাকচ করেন।
মিছিল থেকে শামীমের সঙ্গে হত্যা মামলার আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়ার গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দাবি করা হয়।
বিক্ষুব্ধদের বলতে শোনা যায়, বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার হলেও নারায়ণগঞ্জে তা হচ্ছে না। শামীম ওসমানই খুনীদের গ্রেপ্তারে বাধা। তাকে গ্রেপ্তার করলেই খুনীরা গ্রেপ্তার হবে।
এ সময় ‘শামীম ওসমানের ফাঁসি চাই, দিতে হবে’, ‘গডফাদার নূর হোসেনের ফাঁসি চাই, দিতে হবে’ ‘নারায়ণগঞ্জের মাটিতে গডফাদারদের ঠাঁই নাই’ প্রভৃতি শ্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
গত ২৭ এপ্রিল নজরুলসহ সাতজন অপহৃত হওয়ার তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে।
অপহরণের দিনই এ ঘটনায় নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করে নজরুলের পরিবার।
এ সময় নূর হোসেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা জানিয়ে শামীম ওসমানের দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলে একটি পক্ষ।
এরই এক পর্যায়ে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল দাবি করেন, নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে তার জামাতাসহ সাতজনকে হত্যা করেছে র্যাব।
শামীম ওসমানও এ সময় হত্যাকাণ্ডে র্যাবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন।
এরপর ঘটনা তদন্তে র্যাবের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন হয়; চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় র্যাব-১১ এর সাবেক কমান্ডার তারেক সাঈদ মোহম্মদসহ বাহিনীটির তিন কর্মকর্তাকে, যারা পরে আদালতের নির্দেশে গ্রেপ্তার হন।
এর আগে বিকেলে শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের স্মরণে নাগরিক শোক সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।
এসময় নজরুলের স্ত্রী-সন্তানরা ছাড়াও শ্বশুর শহীদুল ইসলাম, ভাই আবদুস সালাম, নজরুলের সঙ্গে নিহত তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, সহযোগী তাজুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান করে নিহতদের স্বজনদের সমবেদনা জানান এরশাদ।
তার উপস্থিতিতির এক পর্যায়ে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে নানা শ্লোগান দেন নজরুল ইসলামের সমর্থকরা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শামীম ওসমান বলেন, “নিহত কাউন্সিলর নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম আমাকে ফোন করে জানিয়েছে, সেখানে বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গিয়াসের লোকজন শ্লোগান দিয়েছে। নজরুলের শ্বশুরের শ্লোগান দেয়ার বিষয়টি আমার জানাই নেই।”
পলাতক নূর হোসেনের সঙ্গে শামীম ওসমানের মোবাইল কথোপকথন তুলে ধরে শুক্রবার দৈনিক প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যাতে বলা হয় নূর হোসেনকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য।
এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে গুলশানে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করে শামীম ওসমান বলেন, নূর হোসেনের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়েছে ঠিকই। তবে তাকে পালাতে সহযোগিতা নয়, বরং আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।
নজরুলসহ সাতজন অপহৃত হওয়ার পরপরই এ ঘটনায় নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা হয়। এরপরেও ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেন তিনি।
তবে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে অপহৃতদের লাশ ভেসে ওঠার পর তার আর কোনো হদিস মেলেনি। নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে র্যর্যাব বলে আসছে।