যারা এখনও আটকা পড়ে আছেন তাদের কাছে খাবার ও পানি পাঠানো হয়েছে।
Published : 23 Aug 2023, 12:08 AM
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের একটি গভীর পার্বত্য উপত্যকার ১২০০ ফুট উপরে ঝুলন্ত কেবল কারে আটকা পড়াদের উদ্ধারে রাতেও অভিযান অব্যাহত আছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাঁচ শিশুকে উদ্ধার করা গেছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া অ্যাফেয়ার্স উইং থেকে পাঁচ শিশুকে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় বলে জানায় ‘দ্য ডন’।
আটকে পড়া কেবল কারটিতে আরও তিনজন রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক এবং একজন শিশু। প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে এই উদ্ধার অভিযান চলছে।
আইএসপিআর এর পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ (এসএসজি) এর কমান্ডিং কর্মকর্তারা এই উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এখনো যারা ঝুলন্ত কেবল কারটিতে আটকা পড়ে রয়েছে তাদের উদ্ধারের কাজ অব্যাহত আছে বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।
যারা আটকা পড়ে আছেন তাদের খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়ে রেডিও পাকিস্তান।
যেভাবে আটকে পড়াদের উদ্ধার করা শুরু হয়:
আল্লাইয়ের সহকারী কমিশনার জাওয়াদ হুসেইন প্রথম শিশুটিকে উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করেন। বলেন, প্রথম শিশুটিকে একটি হেলিকপ্টারের সাহায্যে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে।
দ্বিতীয় শিশুটিকে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেপি রেসকিউ ১১২২ এর মুখপাত্র বিলাল ফাইজি এবং হাজারা পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক তাহির আইয়ুব খান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডন নিউজের একজন সংবাদদাতা জানান, স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ-এসএসজির কমান্ডোরা এই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে এবং দ্বিতীয় শিশুটিকে কাছের একটি অস্থায়ী হেলিপ্যাডে নামিয়ে আনে।
সেখানে তিনটি হেলিকপ্টার উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছে বলেও জানান ওই সংবাদদাতা। সেগুলোর দুইটি সেনাবাহিনীর এবং একটি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর। পরে জানা যায়, মোট চারটি হেলিকপ্টার উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে।
অন্ধকার নেমে আসার পর হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে বাত্তাগ্রাম জেলার আল্লাই তেহশিলে কেবল কার আটকে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটে। ছয় স্কুলশিশু ও দুই স্থানীয় বাসিন্দাকে নিয়ে কারটি গন্তব্যের পৌঁছানোর আগেই মাঝপথে এর দুটি তার ছিঁড়ে যায়।
তারপর থেকে সেটি আরোহীদের নিয়ে উপত্যকার ১২০০ ফুট উপরে ঝুলে আছে। তাদের উদ্ধারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কুইক রেসপন্স ফোর্সকে তলব করা হয় এবং ঘটনাস্থলে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের (এসএসজি) কমান্ডোদের মোতায়েন করা হয় বলে জানিয়েছে ডন নিউজ টেলিভিশন।
আল্লাই তেহশিলের চেয়ারম্যান মুফতি গুলামুল্লাহ জানিয়েছেন, পার্বত্য এলাকার লোকজন ওই এলাকায় থাকা কয়েকটি পাহাড়ি নদী পার হওয়ার জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত ওই কেবল কার ব্যবহার করে। তাদের চলাচলের জন্য রাস্তা বা সেতুর মত বিকল্প কিছু নেই।
প্রাদেশিক দমকল বাহিনীর কর্মকর্তা আব্দুল বাসিত খান জানিয়েছেন, কেবল কারটি এখন একটি মাত্র তারের ওপর নির্ভর করে ঝুলে আছে।
কেবল কারে থাকা গুলফরাজ (২০) নামের এক আরোহী ফোনে জিও নিউজকে বলেছেন, আটকে পড়া শিশুদের সবার বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে একজন তিন ঘণ্টা ধরে অজ্ঞান হয়ে ছিল।
তিনি জানান, তাদের কাছে কোনো খাবার বা পানি নেই। এলাকার লোকজন নিকটবর্তী পাহাড়ে ভিড় করেছে আর কাঁদছে।
“খাবার পাব কই? পানি খুব দরকার। মোবাইলের চার্জও ফুরিয়ে যাচ্ছে,” বলেন তিনি।
পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনওয়ারুল হক কাকার আটকে পড়া শিশু ও অন্যদের অবিলম্বের উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে রেডিও পাকিস্তান।